বাঘিনীরা আবারো বাংলাদেশকে আনন্দ জোয়ারে ভাসালো

সালেক সুফী

আপন মহিমায় উদ্ভাসিত  বাংলাদেশের মেয়ে ফুটবলাররা আবারো হিমালয় বধূ নেপাল থেকে সাফ ফুটবল শিরোপা জয় করে বাংলাদেশকে আনন্দ জোয়ারে ভাসিয়েছে। কাল যখন চট্টগ্রামের সাগরিকায় রুগ্ন শীর্ণ বাংলার বাঘেদের হাবুডুবু খেতে দেখে মনে মেঘ জমেছে তখন বহু কষ্ট করে অনলাইনে নেপালে অনুষ্ঠিত সাফ নারী ফুটবল ফাইনাল দেখি।

মাঠে ১৬ হাজার নেপাল নেপাল ধ্বনিতে প্লাবিত স্বাগতিক দর্শকদের স্তব্ধ করে বাংলার বাঘিনীদের সাফ শিরোপা ধরে রাখতে দেখে আনন্দিত শিহরিত হয়েছে। জাতিকে ফাইনাল খেলার আগে আশস্ত করেছিল আবারো সাফ জয় করে খোলা বাসে চড়ে গুণমুগ্ধ ঢাকাবাসীর অভিনন্দন গ্রহণ করবে বাঘিনীরা। জয়ের বিষয়ে এতো আত্মবিশ্বাসী ছিল বাংলাদেশ যে সেমি ফাইনালে ভুটানকে ৭-১ গোলে ভাসিয়ে দিয়েও উৎসব করেনি।

ফাইনালে ভালো খেলেই নেপালি দর্শকদের স্তব্ধ করে ২-১  জয়ী হয়ে শিরোপা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছে বাংলার ভাবমূর্তি। অন্য কোন খেলায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত সাফল্যের ধারবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি। বলাই যায় বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবল এশিয়া মানে উন্নীত হবার অন্যতম দাবিদার।

ওদের বাক্তিগত ক্রীড়া শৈলী, পরিবেশ এবং প্রতিদ্বন্দ্বী মাফিক খেলার কৌশল পরিবর্তন দেখে মুগ্ধ হয়েছি।  নানা কারণে বাংলাদেশের ছেলেদের ফুটবল দেখা হয় না। কিন্তু সুযোগ পেলেই যেকোনো ভাবে সংযুক্ত হয়ে মেয়েদের খেলা দেখে অনুপ্রাণিত হই।

সাবাস বাংলাদেশ।  বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে বাংলার মেয়েদের ক্রমাগত সাফল্য দেখছে। এবার প্রথম ম্যাচটিতে পাকিস্তানের পরিবর্তিত দলের বিরুদ্ধে একটু নড়বড়ে ছিল বাংলাদেশ। ১-১ গোলে সমতায় সেই ম্যাচ শেষ হবার পর আর পিছু ফিরেনি। বাংলাদেশ গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ খেলায় শক্তিশালী ভারতকে ৩-১ উড়িয়ে দেয়ার পর নিজেদের ফিরে পায় বাংলার মেয়েরা।

এরপর সেমি ফাইনালে ৭-১ গোলের জোয়ারে ভাষায় ভুটানকে। শুধু জয় না, যেভাবে তহুরা, ঋতুপর্ণা, মনিকারা অসামান্য দক্ষতায় আন্তর্জাতিক মানের গোল করেছে দিব্বি দিয়ে বলতে পারি যথাযথ পরিচর্যা করা হলে এবং দেশে বিদেশে এই দলকে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার নিয়মিত সুযোগ দেওয়া হলে বাংলার মেয়েরা অচিরেই এশিয়া মান তথা বিশ্ব মানে পৌঁছাবে।

সীমিত সুযোগ সুবিধা পুঁজি করেও সাবিনা, কৃষ্ণা, রূপনা, তহুরা, ঋতুপর্ণারা যেভাবে ক্রমাগত সাফল্য এনে দিচ্ছে তার বিনিময়ে এই সোনার মেয়েদের জাতি সেভাবে প্রতিদান দিচ্ছে বলা যাবে না। ছেলেদের ফুটবল ক্রিকেট সহ অন্যান্য খেলার সঙ্গে তুলনা করে তেমন কিছুই দেওয়া হয়নি বাংলাদেশের মেয়ে ফুটবলারদের।

ফিফা উইন্ডোতে নিয়মিত আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ ওরা পায় না। তবুও যখনি যতটুকু সুযোগ পায় নিজেদের উজাড় করে জাতির জন্য সম্মান বয়ে আনে। দেশে এখন বৈষম্যবিরোধী আদর্শে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সরকার প্রধান নোবেল বিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূস নিজেও ক্রীড়ানুরাগী। আশা করি বাংলার মেয়ে ফুটবললারদের অর্জনকে এবার সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা  হবে।

মেয়েদের জন্য পৃথক ফুটবল একাডেমি, দেশের বিভিন্ন স্থান টাঙ্গাইল, রাঙামাটি, সাতক্ষীরা, কুড়িগ্রাম অঞ্চলে নারী ফুটবল বিকাশে আঞ্চলিক ফুটবল কেন্দ্র করা হবে। মেয়ে ফুটবলারদের জীবন মান উন্নয়নে মাসিক পারিতোষিক আন্তর্জাতিক মানের করা হবে।

মেয়েরা কিন্তু সনাতন বিশ্বাসের অচলায়তন পেরিয়ে পরিবেশ এবং পরিস্থিতির সঙ্গে যুদ্ধ করে এই পর্যায়ে এসেছে। এখান থেকে উন্নয়ন করে সাফল্যকে স্থায়ী রূপ দিতে হলে প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা।  আশা করি সরকারের পাশাপাশি নবনির্বাচিত বাফুফে কার্যকরী পরিষদ সঠিক কার্যক্রম গ্রহণ করবে। মেয়েদের ফুটবল সারা দেশে ছড়িয়ে দিবে। আনন্দ আলোয় উদ্ভাসিত হবে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

three × five =