হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা বিক্ষোভ জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়ার পর বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রাতে পাল্টা-বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনপন্থী ছাত্রদের একটি ক্যাম্পে হামলা চালানোয় হিংসাত্মক সংঘর্ষের প্রতিক্রিয়ায় ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি, লস অ্যাঞ্জেলেস ক্যাম্পাসে পুলিশের কয়েক ডজন গাড়ি টহল দেয়।
বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থল নিউ ইয়র্ক সিটির কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের অবসান ঘটাতে মঙ্গলবার গভীর রাতে অফিসাররা ক্যাম্পাসে মিছিল করার পর পুলিশ সেখানে অবস্থান নিয়েছে। আমেরিকার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে হেলমেট পরা পুলিশ দেখে কিছু ছাত্র হতাশ হয়ে পড়ে।
ধাতব প্রতিবন্ধকের আড়াল থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের সময় ইউসিএলএ ছাত্র মার্ক টরে (২২) এএফপি’কে বলেন, ‘আমি মনে করি না আমাদের ক্যাম্পাসে একটি ভারী পুলিশ বাহিনী থাকা উচিত।’
তিনি বলেন, কলাম্বিয়া এবং নিউইয়র্ক সিটি ইউনিভার্সিটিতে পুলিশ রাতে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়েছে। সেখানে ছাত্রদের ওপর পুলিশ অফিসারদের ‘রুক্ষ এবং কঠোর আক্রমণাত্মক’ হামলার কৌশলের নিন্দা করেন তিনি।
জোস নামে নিউইয়র্ক সিটি ইউনিভার্সিটির এক ছাত্র এএফপি’কে বলেন, ‘আমাদের লাঞ্ছিত করা হয়েছিল। নৃশংসভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং মুক্তি পাওয়ার আগে আমাকে ছয় ঘন্টা পর্যন্ত আটকে রেখে শারীরিকভাবে নির্যাতন চালিয়েছে।’
মেডিকেলের এক ছাত্রী বন্দী আহত ছাত্রদের চিকিৎসার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তারা তখন যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছিলেন। ইসাবেল নামের ওই ছাত্রী বলেন, ‘আমরা মাথায় গুরুতর আঘাত, খিঁচুনির মতো অসুস্থতা দেখেছি। পুলিশ ক্যাম্পে কেউ কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল। কাউকে সিঁড়ি দিয়ে নিচে ফেলে দেয়।’
পুলিশ কমিশনার এডওয়ার্ড ক্যাবান বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কলাম্বিয়া এবং নিউ ইয়র্ক সিটি ইউনিভার্সিটিরতে প্রায় ৩শ’ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মেয়র এরিক অ্যাডামস উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য ‘বাইরের আন্দোলনকারীদের’ দায়ী করেছেন। কলাম্বিয়ার ছাত্ররা বহিরাগতদের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মিনুচে শফিক বুধবার বলেছেন, ঘটনার আকস্মিকতা ‘আমাকে গভীর দুঃখে ভরিয়ে দিয়েছে।’ এর আগে তিনি পুলিশে কল করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। তিনি একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমি দুঃখিত আমরা এই পর্যায়ে পৌঁছেছি।’
বিক্ষোভকারীরা গত মাস থেকে কমপক্ষে ৩০টি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়ো হয়েছে। প্রায়শই গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের যুদ্ধে ক্রমবর্ধমান মৃতের সংখ্যার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা তাঁবু স্থাপন করে। ইসরায়েলের প্রতি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের সমর্থন অনেক প্রতিবাদকারীকে ক্ষুব্ধ করেছে। তারাও প্রতিবাদে সামিল হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়েরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, স্বল্প সংখ্যক ছাত্রই এই বিঘœ ঘটাচ্ছে এবং তারা যদি প্রতিবাদ করতে চায়, আমেরিকানদের আইনের মধ্যে শান্তিপূর্ণ উপায়ে তা করার অধিকার আছে।’ নবেম্বরের নির্বাচনে বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্প কলম্বিয়াতে পুলিশের প্রতিক্রিয়ার সমর্থন জানিয়েছেন।
উইসকনসিনে একটি সমাবেশে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি কলেজের সভাপতিকে আমি বলছি অবিলম্বে ক্যাম্পগুলো সরিয়ে ফেলুন। মৌলবাদীদের পরাজিত করুন এবং সমস্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য আমাদের ক্যাম্পাস ফিরিয়ে নিন।’
মঙ্গলবার রাতে পুলিশ কলাম্বিয়ার ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছিল এবং তারা বিক্ষোভকারীদের ব্যারিকেড ডিঙ্গিয়ে হ্যামিল্টন হলে প্রবেশ করে দ্বিতীয় তলার জানালা দিয়ে লোকেদের হাতকড়া পরিয়ে বের করে নিয়ে আসে। তারা তাঁবু ছাউনিগুলোও সরিয়ে দেয়।
লস অ্যাঞ্জেলেসে পাল্টা প্রতিবাদকারীরা ফিলিস্তিনিপন্থী ক্যাম্পে রাসায়নিক পদার্থ ছিটিয়েছিল এবং পুলিশ পৌঁছানোর আগে সেখানে কাঠের বোর্ড এবং ধাতব ব্যারিকেডগুলো ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেছিল। টিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ম্যাডিসনের উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ ঢুকেছে এবং বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে।
ফুটেজে দেখা গেছে, হেলমেট পরিহিত এবং লাঠি সোটা নিয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ডালাসের টেক্সাস ইউনিভার্সিটিতে পৌঁছে সেখানে ছাত্রদের একটি ছাউনি সরিয়ে দেয়। পুলিশ বলেছে তারা অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বেআইনি সমাবেশ’ ছত্রভঙ্গ করতে ‘ক্ষতিকর রাসায়নিক অস্ত্র’ ব্যবহার করেছে।
গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে যুদ্ধবিরতির দাবীতে ছাত্ররা এই বিক্ষোভ শুরু করে। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, প্রতিশোধমূলক আক্রমণে ইসরায়েল গাজায় ৩৪,৫০০ জনেরও বেশি বেসামরিক লোককে হত্যা করেছে। যাদের বেশিরভাগই মহিলা এবং শিশু।
বাসস