বিজয় মাসের সূচনায় জয়ের দুয়ারে বাংলাদেশ

সালেক সুফী

২০০০ থেকে শুরু করে ২০২৩ টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে কালে ভদ্রে।  সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অধীন চলতি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ প্রথম চার দিনের ১২ সেশনে একছত্র আধিপত্য বিস্তার করে বাংলাদেশ সম্ভবত টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে দাপুটে জয় পেতে চলছে। বিশ্বকাপ লঙ্কাকাণ্ডের পর তারুণ্য নির্ভর বাংলাদেশ দল যেভাবে তুখোড় নিউ জিল্যান্ড টেস্ট দলকে কোণঠাসা করে ফেলেছে সেটি নিয়ে গর্ব করার যথেষ্ট অবকাশ আছে।

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৩১০ রানের জবাবে অতিথি দল ৩১৭ রান করেছিল। তৃতীয় দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ২১২/৩ করে ২০৭ রানে আগুয়ান হয়ে চালকের আসনে পৌঁছেছিল। উইকেটে ১০৪ করে অপরাজিত ছিল নাজমুল শান্ত এবং ৪৩ রান করে মুশফিকুর রহিম। উইকেটে দৈত্য দানব না থাকলেও মোটেই সহজ ছিল না ব্যাটিং করা। চতুর্থ দিন সকালেই ১০৫ রান করে ফিরে যায় অধিনায়ক শান্ত। মুশফিক ইনিংসটি ৬৫ পর্যন্ত সম্প্রসারিত করেছিল।

এরপর একমাত্র মেহেদী মিরাজ একপ্রান্ত আগলে রেখে অপরাজিত ৫০ রান করায় বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ৩৩৮ রানে। নিউ জিল্যান্ডের হাতে পর্যাপ্ত সময় ছিল ৩৩৩ রান করে ম্যাচ জয় করার।  কিছু উইকেটের বর্তমান অবস্থায় সচরাচর দুর্ধর্ষ হয়ে  ওঠা তাইজুল ইসলাম (৪/৪০), নাইম হাসান (১/২৪), মেহেদী মিরাজ (১/৩১) ত্রিমুখী স্পিন আক্রমণের মুখে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে নিউ জিল্যান্ড ব্যাটিং। চতুর্থ দিনশেষে ১১৩/৭ করে নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে সফরকারী দল।  বর্তমান অবস্থায় প্রাকৃতিক বাধা অথবা অতি নাটকীয় কিছু না ঘটলে নিশ্চিত জয় পেতে চলেছে বাংলাদেশ।

এমনিতেই বিশ্বকাপে  নানা বিতর্ক এবং শোচনীয় পারফরম্যান্সের পর বাংলাদেশ দলের মনোবল ছিল তলানিতে। উপরন্তু বিবিধ কারণে সাকিব, তামিম, লিটন, তাসকিন দলে না থাকায় দলটির সাফল্য নিয়ে অনেকেই সন্দিহান ছিল। নিউ জিল্যান্ড প্রথম বিশ্বকাপ টেস্ট চ্যাম্পিয়ন দল।  এবারেও লক্ষ্য ফাইনাল খেলা। কিন্তু প্রত্যাশার পারদের চাপ মুক্ত থাকা বাংলাদেশ চার দিনের প্রতিটি সেশন নিয়ন্ত্রণ করে জয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা গড়ে তুলেছে।

নতুন দলনায়ক নাজমুল শান্ত অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক টেস্টে শতরান করার এলিট ক্লাবের সদস্য হয়ে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ত্ব দিয়েছে। দলের বোলিংসম্পদ কুশলী নাবিকের মতো ব্যবহার করেছে। যেভাবে বাংলাদেশ চার দিন খেলেছে ভেবে নেওয়া অমূলক নয় বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপে তীব্র মনস্তাত্ত্বিক চাপে ছিল।

চতুর্থ দিনে সফরকারী দল মরণপণ যুদ্ধ করেও বাংলাদেশের লিড ৩০০র নিচে সীমিত রাখতে পারেনি। উইকেটের চরিত্র দেখে তৃতীয় দিন শেষে আমার ধারণা হয়েছিল ২৫০+ লিড পেলেই বাংলাদেশ অতিথি দলকে চেপে ধরতে পারবে। লিড ৩০০ ছাড়িয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের জয় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়। কিন্তু ভাবিনি ব্লাকক্যাপ ইনিংস তাসের ঘরের মত ঝরে যাবে।

উইকেট কঠিন ছিল নিঃসন্দেহে। এই ধরনের উইকেটে খেলে অভ্যস্ত তাইজুল, মিরাজ, নাঈমদের খেলতে আনাড়ি মনে হয়েছে কিউইদের। একমাত্র ৪৪ রান করে অপরাজিত থাকা ড্যারিল মিচেল ছাড়া কেউ দাঁড়াতেই পারেনি।  দিনশেষে ১১৩ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে নিউ জিল্যান্ড।

একটি জয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের সংকট মুহূর্তে অনেক জরুরি। কিন্তু জয় আসলেই যেন বিশ্বকাপে ভূমিধস পারফরম্যান্সের কারণগুলো অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা গ্রহণ কার্যক্রম ঢাকা না পড়ে। বিজয়ের মাসে জয় বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমিকদের নতুন স্বপ্নের জাল বোনার উপলক্ষ্য হবে।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

two × three =