অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থান, সস্তা পরিশ্রমী শ্রমিক সমাজ, সুলভ কৃষিজ কাঁচামাল, বিশাল দেশীয় ভোক্তাশ্রেণি বাংলাদেশের জন্য শিল্প বিকাশের জন্য বিপুল সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। কিন্তু নীতির ধাবাহিকতার অভাব, অস্থিতিশিল রাজনৈতিক পরিবেশ, উচ মাত্রার ঋণ সুদ, দুর্নীতি, গ্যাস বিদ্যুৎ সংকট, সিদ্ধান্ত প্রদানে দীর্ঘসূত্রিতা বাংলাদেশকে ব্যাবসাবান্ধব করার পথে বিশাল বাধা।
এতোসব প্রতিকূল বাস্তবতার কারণেও বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা ধরে রাখার মূল কারণ ছিল উর্বর জমি, পরিশ্রমী উদ্যমী কৃষক সমাজ, প্রবাসী আয়। বাংলাদেশের প্রধান সম্পদ বিশাল তরুণ সমাজ, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মিলন মোহনায় অবস্থান, সমুদ্র বন্দর সুবিধা।
আরো সুবিধা বর্তমান বিশ্বের দুটি সর্ববৃহৎ সম্প্রসারণশীল অর্থনীতি ভারত এবং চীনের কাছাকাছি অবস্থান। অতি সম্প্রতি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অনুপ্রেরণায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ড (বিডা) ঢাকায় চারদিন ব্যাপী বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করেছিল। সেই আয়োজনে বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় কিছু শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রতিনিধি সহ ৩০০-৩৫০ সম্ভাব্য বিনিয়োগকারী অংশ গ্রহণ করে।
অত্যন্ত খোলামেলা ভাবে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বিনিয়োগকারীদের সামনে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ, সম্ভাবনা তুলে ধরে। বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে চট্টগ্রামে কোরিয়া রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, মিরেরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার জাপানিজ রপ্তানি প্রক্রিয়া করুন অঞ্চল সরেজমিনে পরিদর্শন করে।
কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, কিছু বিনিয়োগকারী বিনিয়োগের সম্ভাবনা বিষয়ে প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। সবচেয়ে বড় কথা সামিটের বিভিন্ন পর্যায়ে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বিভিন্ন বিনিয়োগ বাধাগুলো, ব্যবসায়ের পরিবেশ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়।
বিডাসহ বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বাংলাদেশকে বিনিয়োগ বান্ধব করার চ্যালেঞ্জগুলো বুঝতে পারে। আনন্দের কথা বিডা ঘোষণা করেছে তারা সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের ডাটা বেজ তৈরি করে তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করবে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার বিষয়গুলো আপডেট করে বিনিয়োগ প্রস্তাবগুলো বিনিয়োগে রূপান্তর করতে চেষ্টা করবে।
২০০৯-২০২৪ পর্যন্ত বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে বিপুল বিনিয়োগ হয়েছে। বিশেষত যোগাযোগ, বিদ্যুৎ খাতে অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে।কিন্তু সুশাসনের অভাব, সীমাহীন দুর্নীতি, অবাধ লুটপাটের কারণে সেই উন্নয়নের সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে নাই। বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় এই সময়ে বিপুল বিনিয়োগ হলেও বাংলাদেশে সেই তুলনায় বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে অতি নগণ্য।
এমনকি নানা সমস্যা সংকট মোকাবিলা করে দেশি উদ্যোক্তারা শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেও এখন কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। সবাই জানে কেন এগুলো হয়েছে। পূর্ববর্তী সরকার ঘনিষ্ঠ মাফিয়া সিন্ডিকেট ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুটপাট করে সম্পদ বিদেশে পাচার করেছে। সরকার উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল প্রতিষ্ঠানের বুনিয়াদ বিনষ্ট করেছে। বাংলাদেশের ব্যাবসাবান্ধব পরিবেশ বিনষ্ট করেছে।
এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী এবং খন্ডকালীন সরকারের উদ্যোগ সাধুবাদ পাওয়ার দাবিদার। অন্তত বাংলাদেশ বিষয়ে ধারণাটা নতুন করে পাওয়া গেলো। এখন জাতীয় স্বার্থে প্রয়োজনীয় কিছু অত্যাবশ্যকীয় সংস্কার করা সম্ভব হলে এবং দেশের কৌশলগত উন্নয়ন বিষয়ে রাজনৈতিক ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলাদেশ আগামী ১০ বছরে বিপুল বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে।
বিশেষত বর্তমান বাস্তবতায় বিপুল সংখ্যক চায়নিজ, কোরিয়ান এবং জাপানিজ শিল্প প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে স্থানান্তর করার সম্ভাবনা রয়েছে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক সরকার।