সালেক সুফী
আশা ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট প্রেমিকদের পাকিস্তান সিরিজ একচেটিয়া খেলে দাপুটে জয়ের পর ভারতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। কিন্তু বাস্তবে ভারতের অনেক আগুয়ান চৌকষ নৈপুণ্যের সাথে পাল্লা দিতে পারলো না বাংলাদেশ। ২৮০ রানের বিশাল ব্যাবধানে পরাজয়। দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি দাপুটে জয় করে বাংলাদেশকে ধবল ধোলাই করার পরিস্থিতি সৃষ্টি করলো ভারত। টেস্ট ম্যাচটি প্রমাণ করে দিলো আবারো বাংলাদেশের অনেক কিছুই শিক্ষার আছে টেস্ট ক্রিকেটে। স্পোর্টিং উইকেটে শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে নিয়মিত না খেললে ধারাবাহিক জয়ের মানসিকতা সৃষ্টি হবে না। এই টেস্ট থেকে বাংলাদেশের অনুরাগীরা বুঝতে পারবেন টেস্ট ক্রিকেটে ভারত থেকে বাংলাদেশ কতটা পিছিয়ে।
চেন্নাই টেস্টের প্রথম দিকে চমৎকার বোলিং করে চাপে ফেলেছিলো ভারতকে। ১৪৪ রানে ৬ উইকেট হারানো ভারত ২০০ রানে গুটিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু দেয়ালে পিঠ রেখে অসামান্য দৃঢ়তার পরিচয় দিলো অশ্বিন (১১৩) আর জাদেজা (৮৬)। সপ্তম উইকেট জুটিতে ওদের ১৯৯ রান খেলার চরিত্র পাল্টে দিলো। অপেক্ষাকৃত কঠিন উইকেটে ৩৭৬ রান ভারতকে জয়ের ভিত্তি গড়ে দিলো। অশ্বিন-জাদেজা জুটি ছিল ম্যাচের বাঁকবদল। বাংলাদেশের সান্ত্বনা ছিল হাসান মাহমুদের আক্রমণাত্মক বোলিং (৫/৮৩), দ্বিতীয় দিন সকালে ভালো বোলিং করেছে তাসকিন (৩/৫৫)। পুরো টেস্টে হাসান এবং তাসকিনের বোলিং ছিল বাংলাদেশের মূল অর্জন।
বাংলাদেশ ব্যাটিং সূচনায় বুমরা-আকাশ দ্বীপ-সিরাজের সাঁড়াশি আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়েছে। সাদমান, জাকির, মোমিনুল, মুশফিক, নাজমুলের আউট হবার ধারণ ছিল লজ্জাজনক। সাকিব (৩২), লিটন (২২) হাল ধরার চেষ্টা করেও সফল হয়নি। মেহেদী মিরাজ কিছুটা প্রতিরোধ গড়েছিল ২৭ রান করে অপরাজিত থেকে। বাংলাদেশের এই ব্যাটিং অর্ডারে মেহেদী মিরাজ ৮ নম্বরে ব্যাটিং করা সমীচীন কি না দল বিবেচনা করা জরুরি। ১৪৯ রানে গুটিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ ২২৭ রান পিছিয়ে থাকে প্রথম ইনিংসে। খেলার ফলাফল অনেকটাই নির্ধারিত হয়ে যায়।
ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে বাংলাদেশ বোলাররা দ্রুত দুই একটি উইকেট তুলে নিলেও শুভমান গিল (১১৯) এবং রিশভ পান্তের (১০৯) আগ্রাসী ব্যাটিং বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয়। ৫১৫ রানের হিমালয় চূড়ায় পৌঁছানো বাংলাদেশের সাধ এবং সাধ্যের অনেক বাইরে ছিল।
তবুও সবার আশা ছিল প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং ব্যার্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে লড়াই করবে বাংলাদেশ। সূচনায় সাদমান-জাকির ভালো সূচনা করেছিল। কিন্তু মোমিনুল, মুশফিক, সাকিব, মেহেদী মিরাজ কেউ ঘূর্ণি উইকেটে অশ্বিন-জাদেজা বিশ্ব সেরা স্পিন জুটির কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে। সান্ত্ব অধিনায়ক শান্ত বীরের মত লড়াই ৮২ রান করে। পুরো টেস্টে ব্যাট হাতে শান্তর ইনিংসটি ছিল একমাত্র ব্যাতিক্রম।
বাংলাদেশের পরাজয় ছিল অবধারিত। কিন্তু কষ্ট লাগে সামান্য লড়াইটুকু করতে পারলো না বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ম্যাচ মোড় ঘোরানো ১১৩ রান এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ম্যাচ জয়ী (৬/৮৮) বোলিং করে রবিচন্দ্র অশ্বিন প্লেয়ার অফ দি ম্যাচ পুরস্কার অর্জন করে। ২৮০ রানের বিশাল গ্লানিকর পরাজয়ের স্মৃতি যত দ্রুত ভুলে যাবে বাংলাদেশ ততই মঙ্গল। বাংলাদেশ ব্যাটিং দুর্বলতা দ্রুত ঘোচাতে পারবে বলে মনে হয় না। পেস বা স্পিন কোন বোলিং স্বচ্ছন্দে খেলতে পারেনি বাংলাদেশ।