বিশ্ব ক্রিকেট রঙ্গমঞ্চে দুটি নাটক হয়ে গেলো

সালেক সুফী

সাকিব আল হাসান বিতর্কের ঢাকা টেস্ট ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ৭ উইকেটে হেরে বাংলাদেশ যখন হা পিত্তেশ করছে ঠিক তখনি সার্ক প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত পাকিস্তানে শেষ হলআ টেস্ট ক্রিকেটে দুটি অবিশ্বাস্য নাটক। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে শীর্ষস্থানে থাকা ভারত নিজেদের মাঠ পুনেতে স্পিন ফাঁদ পেতে নিউ জিলান্ড দলের কাছে হারলো ১১৩ রানে।

তিন ম্যাচ সিরিজের পর পর দুই টেস্ট হেরে ভারত ১২ বছর এবং ১৮ সিরিজ শেষে দেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজে পরাজয় বরণ করলো। ভারতের এই অকল্পনীয় সিরিজ পরাজয়ে শেষ মুহূর্তে এসে জমে গেলো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ফাইনালে ওঠার লড়াই।

অন্যদিকে রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তান ইংল্যান্ডকে একইভাবে স্পিন শক্তি দিয়ে শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে গু‍ঁড়িয়ে দিয়ে তৃতীয় টেস্ট ৯ উইকেটে জিতে নিয়ে সিরিজ ২-১ টেস্টে জিতে নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে বিস্ময় সৃষ্টি করলো। অথচ এই পাকিস্তান কিছু দিন আগেই দেশের মাটিতে বাংলাদেশের কাছে ০-২ সিরিজ হেরে ধবল ধোলাই হয়েছিল। পুনে এবং রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত টেস্ট ম্যাচ দুটি যেন ক্রিকেটের গৌরবোজ্জ্বল অনিশ্চয়তাকেই পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করলো।

কেউ কখনো ঘূনাক্ষরেও ভাবেনি দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ভারত নিউ জিলান্ডের সঙ্গে দেশের মাটিতে পর পর দুটি টেস্ট কোনো ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি না করেই হেরে যাবে। নিউ জিল্যান্ড দলটি সবে শ্রীলংকার সঙ্গে সিরিজ হেরে এসেছে। ভারত ওপর দিকে প্রচণ্ড দাপটে বাংলাদেশকে গুঁড়ো করেছে।

তদুপরি অতিথি দলে ছিল না ওদের সেরা ব্যাটসম্যান কেন উইলিয়ামসন। প্রথম টেস্ট ভারত হেরেছিল প্রথম ইনিংসে ৪২ রানে গুটিয়ে যেয়ে। অনেকেই ভেবেছিল এটি নিতান্তই দুর্ঘটনা। ভারত ব্যাটসম্যানদের ধরা হয় স্পিন বোলিংয়ের বিরুদ্ধে সেরা। সেই ভারতের সেরা ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, ঋষভ প্যান্ট নিউ জিল্যান্ড স্পিনারদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই পারেনি।

প্রথম ব্যাটিং করে নিউ জিল্যান্ড ওয়াশিংটন সুন্দরের ৭/৩৯ আগ্রাসী স্পিন বোলিং সত্ত্বেও ডেভন কোনওয়ে (৭৬) এবং রাচীন রাভিন্দ্রার ৬৫ রান পুঁজি করে ২৫৯ করেছিল। অন্যদিকে ভারত মিচেল সান্টনারের (৭/৫৩) বাম হাতি স্পিন মোকাবিলায় আতঙ্কগ্রস্থের মত ১৫৬ রানে গুটিয়ে যায়।

১০৪ রান বিশাল লিড নিয়ে নিউ জিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে টম লাথাম ৮৬, গেলেন ফিলিপ্স ৪৮* এবং টম ব্ল্যান্ডেলের ৪১ রানের বদান্যতায় ২৫৫ রান করলে ভারতের টার্গেট দাঁড়ায় ৩৬০।

বলা বাহুল্য ঘূর্ণি উইকেটে মিচেল সান্টনার (৬/১০৪) এবং এজাজ প্যাটেলের (২/৪২) মোকাবিলা করে টেস্ট জয় ভারতের বিশ্ব সেরা ব্যাটিং লাইন আপের পক্ষেও সম্ভব হয়নি। যশবি জয়সোয়াল ৭৭, রবীন্দ্র জাদেজা ৪২ রান করলেও রোহিত, বিরাট, প্যান্ট সহ গোটা ব্যাটিং লাইন আপ বার্থ হলে ২৪৫ রানে শেষ হয় ভারত ইনিংস।

এক টেস্ট বাকি থাকতেই নিউ জিল্যান্ড টেস্ট সিরিজ জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করে। ২০১২ র পর দীর্ঘ বারো বছর এবং ১৮ সিরিজ শেষে ভারত দেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট সিরিজ হরে। ভারতের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ মিশন দারুন ভাবে ধাক্কা খায়।

এখনো ভারত শীর্ষে আছে. তবে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ব্যাবধান চুলচেরা। দুটি দল আবার বছরের শেষে নিজেদের মাঝে ৫ টেস্ট সিরিজ খেলবে অস্ট্রেলিয়ায়। এদিকে শ্রীলংকা, নিউ জিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে ফাইনাল খেলার। ভারতকে এখন তৃতীয় বা শেষ টেস্ট ম্যাচ জিততেই হবে নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধে।

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিজেদের মাটিতে (০-২) সিরিজ ধবল ধোলাই হয়ে পাকিস্তান মুষড়ে পড়েছিল। প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশাল ব্যাবধানে পরাজয়ের পর সবার ধারণা ছিল পাকিস্তান আরো একটি সিরিজ ধবল ধোলাই হজম করবে। কিন্তু বাবর আজম, শাহীন আফ্রিদিকে ছেটে ফেলে স্পিনিং উইকেট বানিয়ে পর পর দুটি টেস্ট দাপটের সঙ্গে জয় করে পাকিস্তান সিরিজ জয় করে ক্রিকেট বিশ্বকে বিস্মিত করেছে।

রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে ইংল্যান্ড প্রথম ব্যাটিং করে সাজিদ খান (৬/১২৮) আর নোমান আলীর ( ৩/৮৮) যুগল স্পিন মোকাবিলা করে ২৬৭ করেছিল। জেমি স্মিথ ৮৯, বেন ডাকেট ৫২ তীব্র প্রতিরোধ গড়েও সঙ্গীদের ব্যর্থতায় দলের স্কোর বিশাল করতে পারেনি।

পাকিস্তানের হয়ে সাউদ  শাকিল দুর্দান্ত ১৩৪, সাজিদ খান ৪৮* এবং নোমান আলী ৪৫ এ ভর করে পাকিস্তান করে ৩৪৪। প্রথম ইনিংসে ৭৭ রান এগিয়ে থাকা পাকিস্তান ভালো বোলিং ফিল্ডিং করে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস ১১২ রানে গুঁড়িয়ে দেয়।  নোমান আলী (৬/৪২) এবং সাজিদ খান (৪/৬৯) রীতিমত দুঃস্বপ্ন আর আতঙ্ক সৃষ্টি করে ইংরেজ ব্যাটিং তাঁবুতে। পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৭/১ করে ৯ উইকেটে টেস্ট জয় এবং ২-১ সিরিজ জয় করে।

টেস্ট দুটি নিঃসন্দেহে  বিস্ময়কর ছিল। টেস্ট ক্রিকেটে যে অকল্পনীয় কিছু হতে পারে সেই সনাতন বিশ্বাস আবারো প্রতিষ্ঠিত হলো। এহেন ক্রিকেট নিয়েই স্যার নেভিল কার্ডাস এবং শংকরী প্রসাদ বসু সাহিত্য রচনা করেছেন। আমাদের বদরুল হুদা চৌধুরী লিখেছেন, ‘তবু ক্রিকেট ভালোবাসি’।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

eleven − 6 =