বিয়ে বাড়ির অতিথির সাজ

নীলাঞ্জনা নীলা

শুধু শীতের মৌসুমে না বিয়ের নিমন্ত্রণ চলে আসতে পারে যখন তখন। শীতে যে কোনো সাজ মানানসই হলেও এই কখনও রোদ কখনও বৃষ্টির ভ্যাপসা গরমে তা নিয়ে চিন্তায় পড়তে হয়। বিয়ে বাড়ির অতিথির সাজ নিয়ে কথা হয় জেসিকা’স আর্টিস্টির মেকআপ আর্টিস্ট জেসিকা গোমেজের সাথে। তিনি জানান, রোজই তার বিয়ে বাড়িতে অতিথি হয়ে যাওয়া ক্লায়েন্টদের নিয়ে কাজ করতে হয়। সাজের ক্ষেত্রে তিনি ক্লায়েন্টের পছন্দ ও আবহাওয়ার কথা মাথায় রাখেন। এছাড়া তিনি আরো বলেন কয়েকটি বিষয় খেয়াল রেখে যে কেউ ঘরে বসেই চটজলদি সেজে নিতে পারে।

জেসিকা বলেন, সাজার আগে নিজের ত্বক প্রস্তুত করা অনেক বেশি দরকারি। প্রথম আগে নিজের ত্বকের ধরন বুঝতে হবে, সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে। যেমন অনেকের ত্বক সারাবছর শুষ্ক থাকে, এমনকি গরমেও। এর পেছনে জেনেটিক কারণ রয়েছে, এছাড়া সময়ের সাথে সাথে ত্বক প্রাকৃতিক তেল হারায়। শুষ্ক ত্বকে মেকআপ করার আগে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। তা না হলে মেকআপের পরে ত্বকে মরা চামড়া উঠে আসবে ও অস্বস্তির মধ্যে পড়তে হবে।

যাদের শুষ্ক ত্বক তারা অনুষ্ঠানের আগের দিন ঘুমানোর আগে মুখে নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। এরপর সারারাত রেখে সকালে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিবেন। এছাড়া ঘরোয়া কিছু প্যাক বানিয়ে নিতে পারেন। যেমন বেসনের সঙ্গে দুধ এবং হলুদ গুঁড়া দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে মুখে ২০ থেকে ৩০ মিনিট রেখে দিতে হবে। এতে ত্বক আর্দ্রতা পাবে ও খসখসে ভাব কমে আসবে।

এই আবহাওয়াতে সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হয় তারা যাদের ত্বক তৈলাক্ত। এর জন্য মুখে টক দই দিয়ে ঘরে প্যাক বানিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। টক দই সাথে পাকা কলা কিংবা ডিম ফেটে দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া মসুরির ডাল বেটে মুখে ভালো করে ম্যাসাজ করলে মুখের তেল অনেকটা কমে আসে ও জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার হয়ে যায়। মেকআপ করার আগে দুই টুকরা বরফ মুখে ভালো করে ঘষে নিলে মুখের রক্ত চলাচল বেড়ে যায় ও সহজে মেকআপ বসে। যাদের তৈলাক্ত ত্বক তারা মেকআপ করার আগে টোনার ব্যবহার করে নিতে পারেন। যেমন শসার রস খুব ভালো একটি টোনার। তুলার সাহায্য পুরো মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলতে হবে। বিয়ে বাড়ির দাওয়াতের মেকআপ দেবার আগে অবশ্যই খেয়াল রাখতে অনুষ্ঠান রাতে না দিনে। কারণ সময় অনুযায়ী অবশ্যই সাজ ভিন্ন হবে, সব মেকআপ সব সময় মানানসই না।

ত্বকের ধরন যেমনই হোক না কেন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। অনেকের ধারনা তৈলাক্ত ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা প্রয়োজন নেই। আসলে ধারনাটি ভুল। ময়েশ্চারাইজার ত্বকে আর্দ্রতা ফিরিয়ে এনে শুষ্কতা কমিয়ে আনে। এর পাশাপাশি ত্বকের সিবাম কন্ট্রোল করে অতিরিক্ত তেল প্রোডিউস করা বন্ধ করে। ময়েশ্চারাইজার ত্বকের ভেতর যাতে বাইরের দূষণ যেতে না পারে তা থেকে রক্ষা করে। তাই ত্বক প্রস্তুত করার পর ভালো করে পুরো মুখে ময়েশ্চারাইজার মেখে নিতে হবে।

এর পরের ধাপ হচ্ছে সানস্ক্রিন। বিয়ের অনুষ্ঠান রাতে হোক কিংবা দিনে; সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। সানস্ক্রিনের প্রধান উপকারিতা হলো এটি সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে আমাদের ত্বককে সুরক্ষা দেয়। যতটুকু পরিমাণ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেন তার চেয়ে একটু বেশি পরিমাণে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন আপনার ফুল ফেইস যেন ভালোভাবে কভার হয়। সানস্ক্রিন ঠিকমতো ব্যবহার না করলে এই গরমে মেকআপ গলে যেতে পারে। এবং অবশ্যই সানস্ক্রিন রি-অ্যাপ্লাই করতে হবে। চেষ্টা করবেন ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পর পর সানস্ক্রিন পুনরায় অ্যাপ্লাই করতে। তাই মেকআপ করার আগে ভালো করে মুখ ও কাঁধে সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিতে হবে। চাইলে হাত ও পায়ে ব্যবহার করতে পারেন।

এরপর প্রাইমার ব্যবহার করতে হবে। প্রাইমার মুখের রোমকূপ, ফাইন লাইন্স লুকাতে সাহায্য করে এবং স্কিনটোন সমান করে ত্বক মসৃণ করতে সাহায্য করে। যার ফলে ফাউন্ডেশন ভালো মতো ত্বকে বসে যায় এবং মেকআপ সুন্দর ও দীর্ঘস্থায়ী হয়। ফাউন্ডেশন বা ভারী মেকআপ করার ফলে চেহারায় যে একটা কেকি ভাব চলে আসে তা দূর করতেও প্রাইমার বেশ কার্যকরী।

ময়েশ্চারাইজার ও সানস্ক্রিন ব্যবহারের ৫ মিনিট পর প্রাইমার অ্যাপ্লাই করতে হবে। কারণ ময়েশ্চারাইজার ও সানস্ক্রিন ত্বকে প্রবেশ করার জন্য সময় দিতে হবে। প্রাইমার লাগানোর সময় খুব অল্প পরিমাণে নিয়ে শুরু করবেন এবং সারা মুখে সমানভাবে অ্যাপ্লাই করবেন। এটি খুবই কম পরিমাণে লাগে এবং বেশি ব্যবহার করলে পরে মেকআপ ভালো মতো মুখে বসবে না।

মেকআপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে ফাউন্ডেশন। দিনের বেলার অনুষ্ঠান হলে ফাউন্ডেশন যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করতে হবে। ফাউন্ডেশন ব্যবহার করে ১০/১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তাহলে ফাউন্ডেশন সেট হবার জন্য সময় পাবে। ফাউন্ডেশন ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই ত্বকের সাথে ম্যাচ করে কি না তা দেখে কিনতে হবে। দিনে বিয়ের অনুষ্ঠান হলে চাইলে ফাউন্ডেশন না দিয়ে বিবি ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। বিবি ক্রিম সুন্দর একটি ন্যাচারাল লুক দিতে পারে। এতে ত্বক আর্দ্রতা পায়, সুতরাং যাদের শুষ্ক ত্বক তাদের জন্য বিবি ক্রিম প্রথম পছন্দ হতে পারে।

অন্যদিকে রাতের অনুষ্ঠান হলে ফুল কভারেজ ফাউন্ডেশন চাইলে ব্যবহার করা যেতে পারে। এরপর মুখের দাগ ঢেকে ফেলার জন্য কনসিলার ব্যবহার করতে হবে। দাগের গভীরতার উপর নির্ভর করে কনসিলার ব্যবহার করতে হবে। গরমের সময় সবার যেহেতু মুখে অতিরিক্ত তেল বের হয় তাই সেই তেল কন্ট্রোল করার জন্য ফাউন্ডেশনের পর ফেইস পাউডার ব্যবহার করতে হবে। মেকআপ অনেক সময় ধরে রাখতে চাইলে কেকের মতো প্রেসড পাউডার ব্যবহার করতে হবে। যাদের নাক বা গালের আশেপাশে বেশি তেল বের হয় তারা নাকের আশেপাশে বেশি পাউডার ব্যবহার করবেন।

পাউডার ব্যবহার করে মেকআপ সেট করার জন্য ব্যবহার করতে হবে লুজ পাউডার। এরপর গালে হালকা গোলাপি ব্লাশন দিয়ে বেইজ মেকআপ শেষ করতে হবে। ব্লাশন পারফেক্ট মেকআপ লুক দিবে। দিনের বেলার অনুষ্ঠানের জন্য হালকা আই লুক বেছে নেওয়া উচিত। প্রথমে চোখের উপর কনসিলার দিয়ে বাদামি রঙের আইশেড ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ এটি সব পোশাকের সাথেই মানিয়ে যায়। এরপর চোখের নিচে কাজল ও বেশি করে মাশকারা দিতে হবে। তবে রাতের বেলা চাইলে নিজের পোশাকের রঙের সাথে মিলিয়ে আই লুক করা যেতে পারে। চাইলে আইল্যাশ ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু ইদানীং হালকা চোখের সাজই ট্রেন্ডে রয়েছে। দিনের বেলার জন্য হালকা রঙের কোনো লিপস্টিক বেছে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু চাইলে পছন্দের যেকোনো রং অ্যাপ্লাই করা যেতে পারে। হালকা সাজের সাথে লাল কিংবা ব্রাউন লিপস্টিক এখন বেশ জনপ্রিয়।

মেকআপ শেষ করে অবশ্যই স্ট্রিং স্প্রে দিয়ে মেকআপ লক করতে ভুলে যাওয়া যাবে না। পুরো মেকআপটা শেষ হবার পর ফেইস থেকে ৮-১০ ইঞ্চি দূরত্ব থেকে পুরো মুখে গলা সহ কমপক্ষে ৩-৪ বার স্প্রে করলেই দীর্ঘ সময়ের জন্য মেকআপ লক হয়ে থাকবে। মেকআপ শেষ করে এখন চাই সুন্দর হেয়ার লুক। বড় চুল হলে খোঁপা করে তাতে পছন্দের ফুল পরা যেতে পারে। আর ছোট কিংবা মাঝারি চুল হলে হেয়ার স্প্রে দিয়ে সেট করে চুল ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। গরমে মেকআপ গলে যাওয়ার ভয় থাকে তাই ব্যাগে টাচ আপের জন্য ফেইস পাউডার, লিপস্টিক রাখা উচিত।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: আরশী

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

five × five =