বুলাওয়ায়োতে প্রথম টেস্টে আনকোরা দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে পাত্তাই পেল না জিম্বাবুয়ে

সেঞ্চুরির পর ৫ উইকেট নিয়ে বশের কীর্তি, বড় জয়ে সিরিজে এগিয়ে প্রোটিয়ারা

ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংয়েও দাপট দেখিয়ে ম্যাচ জিতল দক্ষিণ আফ্রিকা। ছবি: ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা ফেইসবুক

১০ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ক্যামিও ইনিংস খেলে গ্যালারির গুটি কয়েক দর্শককে কিছুটা বিনোদন দিলেন ব্লেসিং মুজারাবানি। ম্যাচের ফল নিয়ে সংশয় শেষ হয়ে গিয়েছিল অবশ্য অনেক আগেই। ঘরের মাঠে আনকোরা দক্ষিণ আফ্রিকার সামনেও পাত্তা পেল না জিম্বাবুয়ে। বিশাল জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল প্রোটিয়ারা।

বুলাওয়ায়োতে প্রথম টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ৩২৮ রানে। ৫৩৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় চতুর্থ দিনের দ্বিতীয় সেশনে ২০৮ রানে গুটিয়ে গেছে জিম্বাবুয়ে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর নিয়মিত ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের অনেককে বিশ্রাম দিয়ে, টেম্বা বাভুমার চোটে কেশাভ মহারাজের নেতৃত্বে অনভিজ্ঞ দল নিয়ে দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা।

ক্যারিয়ারে স্রেফ দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নেমে ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স উপহার দিলেন কর্বিন বশ। ৩০ বছর বয়সী পেস বোলিং অলরাউন্ডার আট নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ইনিংসে করেন অপরাজিত সেঞ্চুরি, দ্বিতীয় ইনিংসে ৪১ বলে ৩৬।

বল হাতে প্রথম ইনিংসে উইকেটশূন্য থাকলেও, দ্বিতীয় ইনিংসে তার শিকার ৪৩ রানে ৫ উইকেট।

২০০২ সালের অক্টোবরে পচেফস্ট্রুমে বাংলাদেশের বিপক্ষে জ্যাক ক্যালিসের পর, এই প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকার কেউ একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ইনিংসে পাঁচ উইকেটের কীর্তি গড়লেন, সব মিলিয়ে এই তালিকায় দেশটির চতুর্থ ক্রিকেটার বশ।

টেস্ট ইতিহাসে দীর্ঘ এই তালিকার প্রথম দুই ক্রিকেটারই দক্ষিণ আফ্রিকার। ১৮৯৯ সালে কেপ টাউনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিমি সিনক্লেয়ার ও ১৯১০ সালে জোহানেসবার্গে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই অব্রে ফকনার গড়েন এই কীর্তি। ক্যালিস এই স্বাদ পান দুই দফায়।

বশের আগে সবশেষ বাংলাদেশের মেহেদী হাসান মিরাজ এই স্বাদ পান গত এপ্রিলে, চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই।

ম্যাচ সেরা যদিও বশ নন। অভিষেকে ১৬০ বলে ১৫৩ রানের রেকর্ড গড়া ইনিংস খেলে এই স্বীকৃতি পেয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ১৯ বছর বয়সী ব্যাটিং সেনসেশন লুয়ান-ড্রে প্রিটোরিয়াস।

দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান, সবচেয়ে কম বয়সে দেড়শ ছোঁয়া ইনিংসের বিশ্ব রেকর্ডসহ বেশ কয়েকটি অর্জনে নাম লেখান বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।

চতুর্থ দিনের প্রথম বলেই নিকোলাস ওয়েলচকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান বশ। আগের দিন শেষ ওভারে টাকুদজোয়ানাশে কাইটানোকে ফিরিয়ে জিম্বাবুয়ের শুরুর জুটি ভেঙেছিলেন তিনি, দিনের খেলাও শেষ হয়েছিল সেখানেই।

হ্যাটট্রিক না হলেও, জিম্বাবুয়ের পরের উইকেটটিও নেন বশ। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান শন উইলিয়ামসকে ২৬ রানে ফেরান তিনি। নিজের পরপর তিন ওভারে প্রিন্স মাসভাউরে, ওয়েসলি মাধেভেরে ও টাফাডজোয়া সিগাকে বিদায় করেন অভিষিক্ত পেসার কোডি ইউসুফ।

৮২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে তখন ধুঁকছিল জিম্বাবুয়ে। এরপরই ইনিংস সেরা ৮৩ রানের জুটি পায় তারা অধিনায়ক ক্রেইগ আরভাইন ও ওয়েলিংটন মাসাকাদজার ব্যাটে।

বশের বলে শর্ট লেগে টনি ডি জর্জির দুর্দান্ত ক্যাচে শেষ হয় আরভাইনের ৭৭ বলে ৪৯ রানের ইনিংস। পরে ভিনসেন্ট মাসেকেসাকে বোল্ড করে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন বশ।

ইনিংসের একমাত্র ফিফটি করে স্পিনার কেশাভ মহারাজের শিকার হয়ে ফেরেন মাসাকাদজা (৯২ বলে ৫৭)। মুজারাবানির ৪ চার ও ২ ছক্কায় ২৯ বলে অপরাজিত ৩২ রানের সুবাদে কোনোমতে দুইশ ছাড়াতে পারে স্বাগতিকরা।

একই মাঠে আগামী রোববার শুরু হবে দ্বিতীয় টেস্ট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৪১৮/৯ ডিক্লে. জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ২৫১ দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস: ৩৬৯

জিম্বাবুয়ে ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৫৩৭) (আগের দিন ৩২/১) ৬৬.২ ওভারে ২০৮ (মাসভাউরে ১২, ওয়েলচ ০, উইলিয়ামস ২৬, আরভাইন ৪৯, মাধেভেরে ০, সিগা ০, মাসাকাদজা ৫৭, মাসেকেসা ৩, মুজারাবানি ৩২*, চিভাঙ্গা ১; ইউসুফ ৯-৩-২২-৩, মুল্ডার ৭-২-১৩-০, মাফাকা ১০-৩-২৮-০, মহারাজ ২৪-৭-৭১-১, বশ ১২-২-৪৩-৫, ব্রেভিস ৪.২-০-২২-১)

ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৩২৮ রানে জয়ী

সিরিজ: ২ ম্যাচের সিরিজে ১-০তে এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা

মান অব দা ম্যাচ: লুয়ান-ড্রে প্রিটোরিয়াস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

fifteen − 1 =