সালেক সুফী
হৃদয়, সৌম্য, শান্তর ভালো ব্যাটিং বাংলাদেশের জন্য দ্বিতীয় ওডিআই এবং সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা সৃষ্টি করলেও নিশাঙ্কা, আসালংকার মাইল ফলক স্থাপনকারী পার্টনারশিপে (১৮৫) জয় ছিনিয়ে নেয়। শিশির সম্ভাবনা মাথায় রেখে টস জয় করে প্রথম বোলিং করে সফরকারী দল। কিছুটা অসম বাউন্স ছিল উইকেটে। লিটন আবারো শূন্য হাতে প্রথম ওভারে বিদায় নিলেও সৌম্য, শান্ত এবং বিশেষত হৃদয়ের দৃঢ়চেতা ব্যাটিং বাংলাদেশকে ২৮৬/৭ লড়াকু পুঁজি এনে দেয়। কিন্তু শ্রীলংকান ইনিংসে শুরুতে ধস নামলেও নিশাঙ্কা (১১৪) এবং আসালংকা (৯১) চতুর্থ উইকেট জুটিতে নতুন রেকর্ড ১৮৫ রান করে সফরকারী দলকে ৩ উইকেটে জয়ী করে। তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ শেষে এখন ১-১ সমতা। ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য তৃতীয় ম্যাচটি এখন সিরিজ জয়ের ফাইনালে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের খেলায় এখনো ধারবাহিকতা আসেনি।
কখনো ব্যাটিং ভালো করলে বোলিং যুৎসই হচ্ছে না। আবার ব্যাটসম্যানরাও ধারাবাহিক ভাবে ভালো ব্যাটিং করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
টস ভাগ্য অনুকূলে না থাকায় ব্যাটিং করতে হয় বাংলাদেশকে। শুরুতে সৌম্য (৬৬ বলে ৬৮) এবং শান্ত (৩৯ বলে ৪০) মজবুত ভিত গড়ে দেয়। মিডল অর্ডার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার (৪/৪৬) উঁচু মানের লেগ স্পিন মোকাবিলায় ভড়কে যাওয়া সত্ত্বেও হৃদয়ের মারকুটে ব্যাটিং (১০২ বলে অপরাজিত ৯৬), ২৮৬/৭ লড়াকু পুজি এনে দিয়েছিল। কিন্তু সফরকারী দলের শক্তিশালী ব্যাটিং তথা শিশিরের প্রভাবে শেষদিকে উইকেটে বোলিং চ্যালেঞ্জের কারণে বাংলাদেশ স্কোর অন্তত ২৫-৩০ কম ছিল। তদুপরি শুরুতে ৬.১ ওভারে ৪৩ রানে আভিস্কা ফার্নান্দো, কুশল মেন্ডিস এবং সাদীরা সামারাবিক্রামার উইকেট তুলে নিয়ে (৪৩/৩) জয়ের সম্ভাবনা জাগানো ম্যাচে স্বপ্ন ভেঙে যায় নিশাঙ্কা আর আসালংকার মনোমুগ্ধকারী যুগল ব্যাটিং কৃতিত্বে। অবশ্যই বলবো কালকের ম্যাচে যোগ্য দল হিসাবেই ১৭ বল হাতে রেখে ৩ উইকেটে জয় ছিনিয়ে নেয় শ্রীলংকা। আরো একবার সিরিজ জয় করার সুযোগ হারালো বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচ জয় করে সিরিজ জিতে নিতে বাংলাদেশকে ভাবতে হবে।
কাল প্রথম খেলায় ম্যাচ জয়ী একাদশ অপরিবর্তিত রেখেছিলো বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক ফর্ম এবং দলের ভারসাম্য বিচারে তাইজুলের পরিবর্তে লেগ স্পিনার রিশাদকে খেলানো যেত। আর টস ভাগ্য নিয়ে করার কিছুই নেই।
ইদানিং লিটন দাসের ব্যাটিং অনেকটাই প্রেডিক্ট্যাবল হয়ে গেছে। শ্রীলংকার সাজানো ফাঁদে পা দিয়ে প্রথম ওভারে শূন্য রানে ফিরে চাপ সৃষ্টি করে লিটন। অসম বাউন্সি উইকেটে শুরুতে নড়বড়ে ছিল নাজমুল শান্ত এবং সৌম্য। প্রথম স্ট্রোকে স্লিপে ক্যাচ ফস্কে গেলে নতুন জীবন পায় শান্ত। এমনকি একবার শান্তর ব্যাট ছুঁয়ে বল উইকেট রক্ষকের হাতে জমা পড়লেও কেউ আবেদন না করে বেঁচে যায় শান্ত। এই সময় শান্ত, সৌম্য প্রতিআক্রমণে কিছু দর্শনীয় স্ট্রোকস উপহার দিয়ে ৭৫ রানের জুটি গড়ে। দ্বিতীয় স্পেলে এসে মধুশঙ্কা নাজমুলকে ফেরালে জুটি বাধে সৌম্যর সঙ্গে হৃদয়। কাল উইকেটে অসম বাউন্স ছিল। কিছু ফাটল ছিল। সেগুলো বিচক্ষণতার সঙ্গে ব্যবহার করে কৃতি লেগস্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ভালো খেলতে থাকা সৌম্যকে (৬৮) রানে ফেরানোর পর মাহমুদুল্লাহ (০) এবং মুশফিককে ২৫ রানে ফিরিয়ে বাংলাদেশ ইনিংসকে স্থবির করে দেয়। উইকেটে সবেধন নীলমনি তৌহিদ হৃদয় বাধ্য ছিল সতর্কতার সঙ্গে খেলতে। ওয়ানিন্দু ঝড়ের (৪/৪৫) লেজের দিকের ব্যাটসম্যানদের সঙ্গী করে চমৎকার ব্যাটিং করে তৌহিদ হৃদয়। তাসকিন আহমদের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ৮ম উইকেট জুটিতে দ্রুত অবিচ্ছিন্ন ৫০ রান যোগ হলে বাংলাদেশের লড়াকু পুঁজি ২৮৬/৬ সংগ্রহীত হয়। ইনিংসের শেষ দুই বলে দর্শনীয় ছক্কা হাঁকিয়ে ৯৬ রানে অপরাজিত থাকে হৃদয়। ইদানিং ব্যাটসম্যান হিসাবে নিজেকে চিনানো তাসকিন ছিল ১০ বলে ১৮ রান করে অপরাজিত। বাংলাদেশ উঁচু মানের লেগ স্পিন খেলতে অনভ্যস্ত কাল হাসারঙ্গা কাল আবারো প্রমাণ করে।
শ্রীলংকার জবাব কিন্তু শুভ সূচনা হয়নি। প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলে শরিফুল ফেরায় আভিস্কা ফের্নান্দোকে। কুশল মেডিস ( ১৬) এবং সাদীরা সামারাভিক্রামা (১) রানে তাসকিন-শরিফুলের যুগল আক্রমণে ফিরে গেলে চাপে পরে সফরকারী দল। ধীরে ধীরে শিশির পরে উইকেট সহজ হয়ে আসে। তদুপুরি পিথুন নিশাঙ্কা (১১৪) এবং চারিথ আসালংকা (৯১) পরিণত এবং পরিমিত ব্যাটিং করে চতুর্থ উইকেট জুটিতে মাইলফলক ১৮৫ রান যোগ করে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় বাংলাদেশকে। প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার পর নিঃশঙ্কা-আশালংকা জুটি বাংলাদেশ বোলিংকে তুলোধুনো করে। ৫৮ বলে ৫০ পেরুনো নিঃশঙ্কা ১০০ বলে শত রান তুলে নেয়। ১১৪ রানের অজেয় ইনিংসটি ছিল শ্রীলংকার নতুন ব্যাটিং ভরসার ১৩টি চার এবং ৩টি ছয়ে সাজানো। তার সঙ্গে জুটি বেঁধে আসালংকা ৯৩ বলে ৯১ রান করে। শেষ দিকে এসে মেহেদী মিরাজ নিশাঙ্কার এবং তাসকিন আশালংকার উইকেট তুলে নিলেও তখন অনেক পথ পেরিয়ে গেছে সফরকারী দল। দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের এই ধরনের হাই স্কোরিং ম্যাচে বাংলাদেশের কোনো উইকেট টেকিং স্পিন বোলার ছিল না। চৌকষ শ্রীলংকান হাসারাঙ্গা (১৬ বলে ২৫) সক্রিয়তায় ৩ উইকেটে জয় তুলে নিয়ে দলকে সমতায় ফেরে শ্রীলংকা।
অপেক্ষা শেষ ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি সিরিজ জয়ের লড়াই। সত্যি বলতে দুই দলের ব্যাবধান শ্রীলংকা দলের উন্নততর দলীয় ভারসাম্য। বাংলাদেশকে আউট অফ বক্স ভাবতে হবে।