ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে গোল্ডেন লায়ন জিতলো ‘পুয়োর থিংস’

ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মর্যাদাসম্পন্ন গোল্ডেন লায়ন জিতেছে নারীর ক্ষমতায়নের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া ‘পুয়োর থিংস’। শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) ইতালির লিদো শহরে উৎসবের সমাপনীতে ছবিটির পরিচালক ইয়োরগস লানতিমসের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

ঊনিশ শতকে ইউরোপের ভিক্টোরিয়ান যুগের পটভূমিতে পরাবাস্তব কমেডি ছবিটির গল্প আত্মহত্যা করা বেলা ব্যাক্সটারকে কেন্দ্র করে। মস্তিষ্ক প্রতিস্থাপন করে মেয়েকে পুনরুজ্জীবিত করেন বিজ্ঞানী বাবা। প্রাপ্তবয়স্ক হলেও তার সবকিছুই শিশুসুলভ। আত্ম-আবিষ্কারের সঙ্গে ক্রমে স্বাধীন এবং যৌন নিরীক্ষায় উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে সে।

এ চরিত্রে অভিনয় করেছেন অস্কারজয়ী এমা স্টোন। কয়েকটি দৃশ্যে নির্দ্বিধায় অনাবৃত হয়েছেন তিনি। ছবিটি সহ-প্রযোজনা করেছেন ৩৪ বছর বয়সী এই আমেরিকান অভিনেত্রী। তবে হলিউডে ধর্মঘটের কারণে ভেনিসে যাননি তিনি।

স্বর্ণসিংহ জয়ের সুবাদে ২০২৪ সালে অস্কারে বড়সড় সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করলো ‘পুয়োর থিংস’। বিশেষ করে অস্কারের সেরা অভিনেত্রী বিভাগে এমা স্টোনের মনোনয়ন নিশ্চিত বলে মনে করছেন সমালোচকেরা।

ছবিটির সাফল্যের জন্য এমা স্টোনকে কৃতিত্ব দিয়েছেন পরিচালক ইয়োরগস লানতিমস। পুরস্কার হাতে নিয়ে গ্রিসের ৪৯ বছর বয়সী এই নির্মাতা বলেন, ‘বেলা ব্যাক্সটার সাহিত্যের এক অনবদ্য সৃষ্টি। এমা স্টোন ছাড়া চরিত্রটির কোনও অস্তিত্ব থাকতো না। ক্যামেরার সামনে ও পেছনে এটি এমা স্টোনেরই ছবি।’

ইয়োর্গোস লানতিমোস এর আগে ‘দ্য ফেভারিট’ দিয়ে ৭৫তম ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে গ্র্যান্ড জুরি প্রাইজ জেতেন। এতে অভিনয় করেন এমা স্টোন। ২০১১ সালে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে ‘আল্পস’ সেরা চিত্রনাট্য পুরস্কার পায়।

ইয়োর্গোস লানতিমোসের আরেকটি বিখ্যাত ছবি ‘দ্য লবস্টার’ ৬৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে জুরি প্রাইজ জিতেছে। ২০০৯ সালে কানের আঁ সাঁর্তা রিগা বিভাগের সেরা চলচ্চিত্র হয় তার ‘ডগটুথ’। ২০১৭ সালে কানে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে জায়গা পায় এই নির্মাতার ‘দ্য কিলিং অব অ্যা স্যাক্রেড ডিয়ার’।

গত ১ সেপ্টেম্বর ভেনিসে ‘পুয়োর থিংস’ ছবির উদ্বোধনী প্রদর্শনী দেখে টানা আট মিনিট দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানান দর্শকেরা। ১৯৯২ সালে প্রকাশিত স্কটিশ কথাসাহিত্যিক অ্যালাসডেয়ার গ্রে’র ‘পুয়োর থিংস’ উপন্যাস অবলম্বনে সাজানো হয়েছে এর চিত্রনাট্য। এতে আরও অভিনয় করেছেন মার্ক রাফেলো, উইলেম ড্যাফো, রামি ইউসেফ, জেরড কারমাইকেল প্রমুখ।

ভেনিস উৎসবকে চলচ্চিত্রকেন্দ্রিক পুরস্কার মৌসুমের সূত্রপাত হিসেবে দেখেন বোদ্ধারা। কারণ এই আয়োজনে নির্বাচিত ছবি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অস্কারে ফেভারিট থাকে। গত ১১ বছর অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে যারা সেরা পরিচালক হয়েছেন, তাদের সেসব ছবির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়েছে ভেনিসেই।

এরমধ্যে ২০১৬ সালে ‘লা লা ল্যান্ড’-এর জন্য সেরা পরিচালকের অস্কারজয়ী আমেরিকান নির্মাতা ড্যামিয়েন শ্যাজেল এবারের আসরে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে জুরি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে তার পরিচালিত ‘ফার্স্ট ম্যান’ ছিল ভেনিস উৎসবের উদ্বোধনী ছবি।

উৎসবের সেরা অভিনয়শিল্পীর পুরস্কার হিসেবে দুটি ভলপি কাপ উঠেছে আমেরিকান তারকাদের হাতে। সেরা অভিনেত্রীর স্বীকৃতি পেয়েছেন কেইলি স্পেনি। ‘প্রিসিলা’ বায়োপিকে প্রয়াত সংগীতশিল্পী এলভিস প্রিসলির স্ত্রীর ভূমিকায় তার দারুণ অভিনয় ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে। প্রিসিলা প্রিসলির স্মৃতিকথা অবলম্বনে এটি পরিচালনা করেছেন সোফিয়া কপোলা।

হাইস্কুলের দুই সহপাঠীর পুনর্মিলনকে কেন্দ্র করে ‘মেমোরি’ ছবিতে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে সেরা অভিনেতা হয়েছেন পিটার সার্সগার্ড। তার অভিনয় মন জয় করেছে সমালোচকদের। পুরস্কার গ্রহণ করে তিনি জোর দাবি জানান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তিনি মনে করেন, ধর্মঘটে আন্দোলনকারীরা হেরে গেলে হলিউডের পতন হবে।

৮০তম ভেনিস উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত হয় ২৩টি চলচ্চিত্র। এরমধ্যে এশিয়ার একমাত্র ছবি জাপানের রিয়ুসুকে হামাগুচি পরিচালিত ‘এভিল ডাজ নট একজিস্ট’ গ্র্যান্ড জুরি প্রাইজ (রৌপ্যসিংহ) পেয়েছে।

এবারের মূল প্রতিযোগিতায় জায়গা পান পাঁচ জন নারী পরিচালক। তাদের মধ্যে পোল্যান্ডের আগনিয়েস্কা হলান্ডের ‘গ্রিন বর্ডার’ পেয়েছে স্পেশাল জুরি প্রাইজ। পোলিশ-বেলারুশ সীমান্তে আটকে পড়া অভিবাসীদের হৃদয়বিদারক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এতে।

অভিবাসীকেন্দ্রিক আরেকটি অনবদ্য ছবি ‘মি ক্যাপ্টেন’ বানিয়ে সেরা পরিচালক হয়েছেন ইতালির মাত্তেও গারোনে। এর গল্প লিবিয়ার বন্দিশিবির থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার আশায় থাকা সেনেগালের দুই কিশোরকে কেন্দ্র করে। এতে অনবদ্য নৈপুণ্যের জন্য সেরা নবীন অভিনয়শিল্পীর পুরস্কার মার্সেলো মাস্ত্রোইয়ান্নি অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন সেনেগালিজ তরুণ সেদু সার।

চিলির স্বৈরশাসক জেনারেল আওগুস্তো পিনোচেতকে কেন্দ্র করে বিদ্রুপাত্মক ছবি ‘এল কন্দে’র জন্য সেরা চিত্রনাট্যকার হয়েছেন চিলির পাবলো লারাইন ও গিয়ের্মো কালদেরন।

এবারের আসরে আজীবন সম্মাননা হিসেবে স্বর্ণসিংহ পেয়েছেন ইতালির নারী পরিচালক লিলিয়ানা কাভানি এবং হংকংয়ের অভিনেতা টনি লিয়াং

উৎসবের সমাপনী ছবি ছিল নেটফ্লিক্সের ‘সোসাইটি অব দ্য স্নো’। এর গল্পে দেখা যাবে, ১৯৭২ সালের ১৩ অক্টোবর আন্দিজ পর্বতমালায় ঘটে যাওয়া বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ১৬ যাত্রী ৭২ দিন দুর্গম পাহাড়ের খাঁজে আটকে ছিলেন। খাবার ও পানি না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে মৃত সহযাত্রীদের মাংস আগুনে পুড়িয়ে খেয়েছেন। সেই ঘটনা পৃথিবী নাড়িয়ে দিয়েছিলো। স্প্যানিশ ভাষার ছবিটি পরিচালনা করেছেন হুয়ান আন্তোনিও গার্সিয়া বায়োনা।

বাংলা ট্রিবিউন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

two × four =