সাভার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ (বাসস) : সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান বিজয় দিবস উদযাপনে লাখো মানুষের ঢল নেমেছে। বিজয়ের দৃপ্ত শপথ নিয়ে হাতে লাল সবুজের পতাকা আর ফুলের শোভায় সাধারণ মানুষ উদযাপন করে বিজয়ের ৫৩বছর।
বিজয় দিবস উদযাপন এবং জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সকাল থেকেই নারী, পুরুষ, শিশু আর বৃদ্ধদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠে পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকা। বিজয়ের এ দিনে বাঙ্গালী জাতি যেন আরো উজ্জীবিত হয়ে উঠে। এই দিনে বিনম্র শ্রদ্ধাবনত চিত্তে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করছে পুরো জাতি।
দিনের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এসময় তারা শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করেন। তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল তাদের গার্ড অব অনার প্রদান করেন। এসময় বিউগলে বেজে উঠে করুন সুর। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে নিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
এসময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও এ এইচ এন খাইরুজ্জমান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর ও দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধ এলাকা ত্যাগ করার পর জাতীয় স্মৃতিসৌধ সর্ব-সাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এসময় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান স্পিকার, মন্ত্রী পরিষদ সদস্যরা ও কূটনৈতিকবৃন্দসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা।
এর পরপরই জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা সাধারণ মানুষের ঢল নামে। ফুলেল শ্রদ্ধায় বিজয়ের উচ্ছাসে উদ্ভাসিত সূর্যের মতোই আলোকিত করে জাতির সূর্য সন্তানদের। যাদের রক্তে অর্জিত হলো স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের, সেই সকল শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল ফটকে জড়ো হতে থাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এসময় সকলের চোখে মুখে ছিল বিজয়ের উচ্ছাস।
বেলা বাড়ার সাথে সাথে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের ঢলও যেন বাড়তে থাকে স্মৃতিসৌধ চত্ত্বরে। সংসদ সদস্যবৃন্দ, সেক্টর কমান্ডার ফোরাম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, আওয়ামী যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ, বিপিএটিসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর বিভিন্ন হল সমূহ, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ও এর বিভিন্ন হল সমূহ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এসময় জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর শহীদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।
মূল শহীদ বেদী ভরে উঠে ফুলে ফুলে। লাল সবুজের পতাকায় ছেয়ে যায় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ। মানুষের হাতে হাতে ফুল আর পরনে ছিল লাল সবুজের ছোয়া। সারিবদ্ধভাবে একে একে শ্রদ্ধা জানাতে থাকেন সকলেই। স্মৃতিসৌধ এলাকা পরিণত হয় জনসমূদ্রে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠে স্মৃতিসৌধ এলাকা। চারিদিক থেকে আসা মানুষের ঢল মিশতে থাকে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে।
স্মৃতিসৌধ এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্মৃতিসৌধ এলাকায় চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরী করে ঢাকা জেলা পুলিশ। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণস্থানে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপনসহ পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নেওয়া হয় বিভিন্ন পদক্ষেপ।