সালেক সুফী: মিডিয়া এবং রাজপথে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বন্দনা বা বিতর্ক চলছেই। আসন্ন এশিয়া কাপ টুর্নামেন্টের জন্য ১৭ সদস্যের ঘোষিত দলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের কীর্তিমান খেলোয়াড় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের জায়গা হয় নি. ৩৭ বছর বয়সী এই খেলোয়াড়কে স্বাভাবিক পন্থায় বাদ না দিয়ে নানা ছল চাতুরী করে অপমানজনক ভাবে বাদ দেয়া হয়েছে বলেই ভক্তকুল এবং ক্রিকেট বিশ্লেষকদের অধিকাংশ মনে করে। অনেকের মতে বাংলাদেশ ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময়ে রিয়াদ গুনে মানে, দক্ষতা অভিজ্ঞতায় অবশ্যই বর্তমান দলে স্থান পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন। তার সতীর্থ বাংলাদেশের অন্যতম সেরা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোস্তফা বলেছে রিয়াদ দলের স্বার্থে আত্মত্যাগ করা এক কীর্তিমান খেলোয়াড়। যোগ্যতা দিয়ে টপ অর্ডারে খেলার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও দলের প্রয়োজনে খেলেছে লেট্ মিডল অর্ডারে। সেখানে খেলেই অনেক সময় একক কৃতিত্বে ম্যাচ জিতিয়েছে। অনেক সময় বোলার উইথ গোল্ডেন আর্ম হিসাবে বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নিয়েছে, ব্রেকথ্রু এনে দিয়েছে। ওডিআই ক্রিকেটে উইকেট রক্ষক বাদে বাংলাদেশ দলে সবচেয়ে বেশি ক্যাচ লুফে নিয়েছে। জানামতে ওর এখন ম্যাচ ফিটনেসের ঘাটতি নেই. নানা জনকে চেষ্টা করা হলেও ওর কোনো যোগ্য বিকল্প গড়ে উঠেনি। এমনি অবস্থায় এশিয়া কাপের মত গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে রিয়াদকে বাদ নেয়া নিতান্ত অন্যায় শুধু না আত্মঘাতী সিদ্দান্ত হয়েছে। সময়ই বলে দেবে এই সিদ্ধান্ত কিভাবে বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে।
জানিনা এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, হাবিবুল বাসার সুমন এবং আবার রাজ্জাক সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচক মন্ডলী কতটা স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওরা নিজেরাই এই সিদ্ধান্তে আসার পেছনে হেড কোচ হাতুরাসিংহে ,অধিনায়ক সাকিব আল হাসান সহ টীম মানাজেমেন্টের প্রসঙ্গ টেনে এনেছে। হয়তো টিম ম্যানেজমেন্ট তরুণ খেলোয়াড়দের দলে নিতে চায়। তাই বলে প্রমাণিত সফল ,অভিজ্ঞ রিয়াদকে অবজ্ঞা করে আনকোরা নবীন শেখ মেহেদী, বার বার সুযোগ পেয়েও নিজেকে মেলে ধরতে বার্থ আফিফ হোসেন অথবা ওডিআই আদৌ না খেলা শামীম হাসেন পাটোয়ারী কেউ রিয়াদের বিকল্প হতে পারে না। বিষয়টি সাধারণ ক্রিকেট অনুরাগীরা যেমন বুঝে তেমনি ক্রিকেট অভিজ্ঞদের না বোঝার কোনো কারণ নেই। সুস্পষ্ট প্রতীয়মান রিয়াদের বাদ পড়ার পেছনে ক্রিকেট ছাড়াও অন্য কোনো কারণ আছে। কোনো প্রভাবশালী ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীর বিরাগভাজন হওয়ার কারণেই বাদ পড়েছে রিয়াদ।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে এমনি প্রাথমিক বিবেচনায় বাদ পরে পরে ফিরে আসার নজির আছে খোদ মিনহাজুল আবেদীন নান্নু এবং হাবিবুল বাসার সুমনের ক্ষেত্রেও। ভক্ত, ক্রিকেট বিশ্লেষকদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে রিয়াদকে ফিরিয়ে নেয়া হলে দলের লাভ বই ক্ষতি হবে না। ১৭ জনের স্থলে ১৮ জনের স্কোয়াড হলেই ক্ষতি কি? দেখলাম রিয়াদ সহ আরো ৮ জন প্রান্তিক খেলোয়াড়কে বিশেষ অনুশীলনের জন্য ডাকা হয়েছে মূল দলের শেষ মুহূর্তের বিকল্প হিসাবে প্রস্তুত রাখার জন্য। জানিনা এটি কিসের আলামত।
এশিয়া কাপে বাংলাদেশ গ্রুপ পর্যায়ে এশিয়া কাপ শিরোপাধারী শ্রীলংকার সঙ্গে শ্রীলকায় এবং আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের লাহোরে খেলতে হবে। তামিম বিহীন টপ অর্ডার কিন্তু চাপে পড়তে পারে দুটি ম্যাচেই। লিটন কিন্তু নড়বড়ে আছে এখন, শেখ নাঈম বা তানজিদ তামিম নবীন, শেষ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে ভালো খেলে নি নাজমুল শান্ত। চট জলদি ২-৩ উইকেট পরে গেলে সাকিব, মুশফিকের উপর প্রচন্ড চাপ পর্বে শ্রীলংকা এবং আফগানিস্তানের তুখোড় স্পিন আক্রমণ সামাল দেয়া। বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে রিয়াদের প্রমাণিত দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা মিস করবে। বাংলাদেশ যদি কোনোভাবে গ্রুপ অফ ফোরে উন্নীত হয় তাহলে পরাক্রমশালী ভারত পাকিস্তানের মোকাবিলায় আরো কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। এমনি পরিস্থিতিতে দেশের স্বার্থেই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে দলে ফেরানো অপরিহার্য বলে দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি।