‘যুদ্ধে’ ছিলেন সাকিব

বিশ্বকাপে গতকাল শ্রীলংকান এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের বিপক্ষে ‘টাইমড আউটের’ আবেদন করে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ভাবে আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছেন  বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। কিন্তু বিষয়টি ঠিক না ভুল এটি বিবেচনা না করে বাংলাদেশের জয়টাই সাকিবের কাছে ঐ মুহূর্তে মূখ্য হয়ে উঠেছিল বলে স্বীকার করেছেন।

ইতোমধ্যেই বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়েছে বাংলাদেশ । এখন শুধু একটাই লক্ষ্য অন্তত শীর্ষ সাতে টিকে থেকে আগামী চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা নিশ্চিত করা। আর তাই কাল শ্রীলংকার বিপক্ষে জয়ের বিকল্প ছিলনা। ঐ দুই পয়েন্টে বাংলাদেশ টেবিলের সাত নম্বরে উঠে এসেছে। শেষ পর্যন্ত শ্রীলংকাকে ৩ উইকেটে পরাজিত করে আপাতত কিছুটা এগিয়েছে বাংলাদেশ। এখন শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাকি কাজটুকু করার অপেক্ষা।

গতকালকের ম্যাচে ক্রিজে এসে ব্যাটিংয়ের প্রস্তুতি নিতে দুই মিনিটের বেশী সময় নিয়েছিলেন ম্যাথুজ। আইসিসির আইনানুযায়ী প্রতিপক্ষ অধিনায়ক এক্ষেত্রে আউটের আবেদন করতে পারেন। আর সাকিব সেটাই করেছেন। এর মাধ্যমে ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম ব্যাটার হিসেবে ‘টাইমড আউটের’ শিকার হয়েছেন ম্যাথুজ।

বিষয়টা ক্রিকেট স্পিরিটের সাথে যায়না, এমন সমালোচনা অনেকেই করেছেন সাকিবের বিরদ্ধে। কিন্তু বিষয়টাকে সাকিব নিজে দেখছেন একটু অন্যভাবেই। মাঠে দেশের হয়ে খেলাটা তার কাছে যুদ্ধ, আর যুদ্ধে জিততে তো সবই করতে হয়। ম্যাচ শেষের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সঞ্চালক সঞ্জয় মাঞ্জরেকারের এক প্রশ্নে বাংলাদেশ অধিনায়ক সেটাই বলেছেন, ‘এটা আইনে আছে। আমি জানি না এটা ঠিক নাকি বেঠিক। মনে হচ্ছিল আমি যুদ্ধে আছি। আমার একটা সিদ্ধান্ত নিতেই হতো। আমাকে দলের জয় নিশ্চিত করতে হতো। সে জন্য যা দরকার তা করব। ঠিক নাকি বেঠিক, এ নিয়ে বিতর্ক হবে। যদি আইনে থাকে, তাহলে আমার এই সুযোগগুলো নিতে আপত্তি নেই। ম্যাথুজের সাথে ঐ বিষয়টা লড়াই করার তাড়না আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। আমার বয়স ৩৬, স্বাভাবিক ভাবে লড়াইয়ের মানসিকতা সবসময় আসেনা। কিন্তু আজ লড়াইয়ের বিষয়টা সহজেই মনের মধ্যে এসে গিয়েছিল।’

সাকিব তার অল রাউন্ড পারফরমেন্স দিয়ে বাংলাদেশর জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন। ৫৭ রানে দুই উইকেট তুলে নেবার পর ব্যাট হাতে ৬৫ বলে খেলেছেন ৮২ রানের ম্যাচ জয়ী ইনিংস। শ্রীলংকার দেয়া ২৭৯ রানের টার্গেট ৫৩ বল হাতে রেখে টপকে যায় বাংলাদেশ।

নাজমুল হাসান শান্ত করেছেন ৯০ রান। তৃতীয় উইকেটে সাকিব-শান্ত   ১৬৯ রানের জুটি গড়েছিলেন। যার  সুবাদে দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ দুই পয়েন্ট সংগ্রহ করার পুঁজি খুঁজে পায়।

সাকিব আরো বলেছেন, ‘আমি যখন টসে জয়ী হই তখন বোলিং নিতে কোন দ্বিধাবোধ করিনি। এখানে আমরা অনুশীলন করেছি, যে কারনে জানতাম সন্ধ্যায় প্রচুর শিশির থাকবে। শান্তর সাথে পার্টনারশীপটা ভাল ছিল, তবে দুজন মিলে খেলাটা শেষ করতে পারলে আরো খুশী হতাম।’

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৬ উইকেটের জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এরপর পারফরমেন্সের গ্রাফ ক্রমেই নীচে নামতে থাকে। টানা ছয় পরাজয়ে সেমিফাইনালের দৌড় থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। দেরীতে হলেও কালকের জয়ে কিছুটা হলে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

সাকিব বলেন, ‘আমাদের আরো ধারাবাহিক হওয়া উচিত ছিল, হতাশাটা এখানেই। বোলাররা সামনে থেকে আজ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছে। স্পিনাররা রান আটকে দিয়েছে, আজ দুজন স্পিনারই ভাল বোলিং করেছেন। বোলিংই আমাদের এবারের বিশ্বকাপে জয়ের পিছনে কাজ করেছে। বিশ্বকাপে ফাস্ট বোলাররা ভাল বল করেছে। আমরা প্রত্যাশানুযায়ী খেলতে পারিনি। কিন্তু আমরা জানতাম লড়াইয়ে ফিরে আসার মানসিকতা আমাদের আছে। আমাদের নিজেদের ওপর আস্থা আছে। আমরা ফিরে আসার জন্য পরিশ্রম করেছি, আজ তার ফল পেয়েছি। মাঠও আমাদের সহযোগিতা করেছে। এখানকার বাউন্ডারি ছোট, লংকান বোলারদের গতিকে আমি কাজে লাগিয়েছি। সৌভাগ্যবশত সেগুলো কাজে এসেছে, আর আমারও আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল।’

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

four × two =