রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে সমরেশ মজুমদারের বিদায়

সমরেশ মজুমদার ছিলেন একজন নন্দিত লেখক। তার জন্মভূমির গণ্ডি পেরিয়ে সকল বাঙলা ভাষার পাঠকদের কাছে তিনি ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। তার মৃত্যুর পর কেউ যদি বলেন, ‘আমি সমরেশকে চিনি না, কখনো তার লেখা পাঠ করিনি।’ তাতেও তার সাহিত্য জীবনের কিছুই যাবে আসবে না। আপনি এখনো তাকে পাঠ করতে পারেন। নতুন করে তার লেখার সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন। কিংবা তাকে জানার প্রয়োজন বোধ না করলে এড়িয়েও যেতে পারেন। কঠিন সত্যটি হলো বাংলা সাহিত্যের আকাশ থেকে একের পর এক খসে পড়ছে উজ্জ্বল নক্ষত্র। সেই অনন্তযাত্রায় এবার যুক্ত হলেন কিংবদন্তি লেখক সমরেশ মজুমদার।

সমরেশ মজুমদার ২০২৩ সালের ৮ মে সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। রবীন্দ্রনাথের ১৬২তম জন্মজয়ন্তী ছিল সোমবার ৮ মে। আর এই দিনেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার। গুণী এই সাহিত্যিকের প্রতি রঙবেরঙ এর পক্ষ থেকে অনেক অনেক শ্রদ্ধা। মাসুম আওয়ালের প্রতিবেদন।

সমরেশ মজুমদারের কালজয়ী উপন্যাস

সাতকাহন, কালবেলা, কালপুরুষ, উত্তরাধিকার, মৌষল কাল, গর্ভধারিনী, আট কুঠুরি নয় দরজা এমন সব অসাধারণ উপন্যাসের রূপকার বাংলা সাহিত্যের অন্যতম নক্ষত্র কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার। তার কালজয়ী উপন্যাস কালবেলা থেকে চলচ্চিত্রও হয়েছে। কর্মজীবনে সমরেশ মজুমদার আনন্দবাজারের সাথে যুক্ত ছিলেন। গ্রুপ থিয়েটারের প্রতি তার প্রচণ্ড আসক্তি ছিল। তার প্রথম গল্প ‘অন্যমাত্রা’ লেখা হয়েছিল মঞ্চনাটক হিসেবে। গল্পটি ছাড়া হয়েছিল দেশ পত্রিকায় ১৯৬৭ সালে। প্রথম উপন্যাস ‘দৌড়’ ছাপা হয়েছিল দেশ পত্রিকায় ১৯৭৫ সালে। ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি থেকে গোয়েন্দাকাহিনি, কিশোর উপন্যাস লেখনিতে তার জুড়ি মেলা ভার। চা বাগানের মদেসিয়া সমাজ থেকে কলকাতার নিম্নবিত্ত মানুষেরা তার কলমে উঠে আসেন রক্ত-মাংস নিয়ে।

সমরেশ মজুমদারের লেখক হয়ে ওঠা

এক সাক্ষাৎকারে সমরেশকে প্রশ্ন করা হয়, কেন লেখক হলেন? উত্তরে সমরেশ মজুমদার বলেন, আমি তো লেখক হতে চাইনি। আমাকে লেখক বানানো হয়েছে। আমি নাটক লিখতাম। কিন্তু নাটক করার জায়গা পাওয়া যেত না। এর মধ্যে একজন আমাকে বললেন, তুমি নাটকটাকে গল্প করো। তাই করলাম। গল্পটা ছাপা হলো একটি পত্রিকায়। এ গল্পের সম্মানী হিসেবে আমাকে ১৫ টাকা পাঠানো হয়েছিল। সেই টাকা পেয়ে আমার বন্ধুদের খুব উৎসাহ। তখন কফির দাম ছিল মাত্র আট আনা। তো বন্ধুরা দুই দিন ধরে কফি খেলো। খেয়ে আমাকে বারবার বলতে লাগলো, আরও গল্প লিখতে। এভাবেই আমি লেখক হয়ে উঠলাম। সমরেশ মজুমদারকে প্রশ্ন করা হয়, আপনার ‘সাতকাহন’ উপন্যাসটি খুবই জনপ্রিয়। এটি লেখার প্রেক্ষাপট কি ছিল? সমরেশ মজুমদার বললেন, আমি চা বাগানে থাকতাম। আমার বাড়ির পাশে এগারো-বারো বছরের একটি মেয়ে ছিল। সে আমাদের খেলার সাথীও ছিল। তো তাকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়। কান্না করতে করতে শ্বশুরবাড়ি গিয়েছে। আমরা তার কান্না দেখে প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারিনি। মেয়ে চলে গেল। আবার তিনদিন পর ফিরে এলো। বিধবা হয়ে। সেই যে ঘরের ভেতরে ঢুকলো, আর বাইরে এলো না। আমাদের সঙ্গে খেলতেও আসে নাই। এটা আমাকে আঘাত করেছিল। সেই থেকেই ‘সাতকাহন’ লেখার গল্প খুঁজে পাই। আরও একটি প্রশ্ন ছিল এমন, আপনি দেড় শতাধিক উপন্যাস লিখেছেন। এসব উপন্যাসের প্রতিটিরই চরিত্র ও বিষয়বস্তু আলাদা। এটা কীভাবে সম্ভব? সমরেশ মজুমদারের উত্তরটি ছিল এমন, আমার তো আর হুমায়ূন আহমেদের মতো প্রতিভা নেই। আমি এক সময় ভাবলাম, কীভাবে লেখক হিসেবে আমি জায়গা করতে পারি। তখন বুঝতে পারলাম, এর একটাই উপায় আছে, যদি প্রত্যেকটা লেখা আলাদা করতে পারি। যাতে কোনো পাঠক পড়ে না বলতে পারে, এটা তো আগেই পড়েছি। এটাই আমার বাঁচার একমাত্র পথ। সমরেশ মজুমদারের এমন সতস্ফূর্ত কথাগুলো যে কোনো লেখকের জীবনের অনুপ্রেরণা হতে পারে।

এক নজরে সমরেশ মজুমদার

সমরেশ মজুমদার ১৯৪২ সালের ১০ মার্চ (বাংলা ১৩৪৮ সনের ২৬ শে ফাল্গুন) পশ্চিমবঙ্গের গয়েরকাটায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম কৃষ্ণদাস মজুমদার ও মাতা শ্যামলী দেবী। তার শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের গয়েরকাটা চা বাগানে। ভবানী মাস্টারের পাঠশালায় তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। এরপর পড়েন জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলে। তিনি কলকাতায় আসেন ১৯৬০ সালে। বাংলায় স্নাতক সম্পন্ন করেন কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

সমরেশ মজুমদারের গোয়েন্দা

সমরেশ মজুমদার সৃষ্ট বাংলা সাহিত্যের একটি জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র অর্জুন। এই সিরিজের প্রথম বই ‘খুনখারাপি’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৪ সালে। এই সিরিজের প্রধান পটভূমি উত্তরবঙ্গ। অর্জুনের বাড়ি জলপাইগুড়ি শহরে। তবে উত্তরবঙ্গের বাইরে, এমনকি বিদেশেও অর্জুনের কয়েকটি অভিযান রয়েছে। অর্জুনের গুরু প্রাক্তন গোয়েন্দা অমল সোম। এছাড়াও আছেন মজাদার চরিত্র মেজর এবং বিষ্টুসাহেব যারা প্রায়শই অর্জুনের সংগী হয়েছেন বিভিন্ন অভিযানে। অর্জুন নিজের গোয়েন্দা পরিচয় পছন্দ করে না, সত্যসন্ধানী বলে থাকে।

খুনখারাপি গল্পগ্রন্থে আত্মপ্রকাশের পর থেকে অর্জুনের অনেকগুলি উপন্যাস ও ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে আনন্দমেলা, শুকতারা, কিশোর ভারতী প্রভৃতি পত্রপত্রিকার পাতায়। আনন্দ পাবলিশার্স, পত্র ভারতী, দেব সাহিত্য কুটীর প্রভৃতি প্রকাশনা সংস্থা থেকে অর্জুনের কাহিনিগুলো বিভিন্ন সময়ে গ্রন্থাকারে বের হয়েছে। সত্যসন্ধানী অর্জুন সিরিজের বইগুলো: অর্জুন এবার নিউ ইয়র্কে, আদিম অন্ধকারে অর্জুন, শুকনা ঝাড়ে অর্জুন, অর্জুন এবার বাংলাদেশে, খিলজির গুহায় অর্জুন, অর্জুন এবার চিলাপাতায়, অর্জুন এখন সোনার গাঁয়, রকেট বাসে অর্জুন, অর্জুন এবং চাইনিজ সিগারেট, অর্জুনের প্রতিদ্বন্দ্বী। দুই দিকে এক অর্জুন খুনখারাপি ও সীতাহরণ রহস্য এই দুই গ্রন্থের গল্প নিয়ে ‘কালিম্পংয়ে অর্জুন’ সিনেমা নির্মিত হয়। এছাড়াও ‘দেড়দিন’ অবলম্বনে হিন্দি টেলিসিরিয়াল ‘জঙ্গল কি গ্যাহেরাই মে’ পরিবেশিত হয় ছোটপর্দায়।

সাহিত্যচর্চা ও প্রাপ্তি

অনেক অসাধারণ গল্প উপন্যাসের এই রূপকার জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অনেক পুরস্কার অর্জন করেছেন। ১৯৮২ সালে আনন্দ পুরস্কার, ১৯৮৪ সালে সাহিত্য আকাদেমী পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার এবং আইয়াইএমএস পুরস্কার জয় করেন। চিত্রনাট্য লেখক হিসেবে জয় করেন বিএফজেএ, দিশারী এবং চলচ্চিত্র প্রসার সমিতির অ্যাওয়ার্ড। সমরেশ পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের অন্যতম সেরা লেখক হিসাবে পাঠকমন জয় করে আছেন এবং থাকবেন।

হুমায়ূন আহমেদের সমুদ্র বিলাসে

বাংলাদেশে অনেকবার এসেছেন সমরেশ। হুমায়ূন আহমদের সাথে সেন্টমার্টিন দ্বীপের বড়িতেও গিয়েছেন। সুখের আবাসন ‘সমুদ্র বিলাস’-এ থেকেছেন, ভ্রমণগদ্য লিখেছেন। তার অনেক লেখায় ঘুরে ফিরে এসেছে বাংলাদেশ।

সমরেশ মজুমদারের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উত্তরাধিকার’, ‘কালবেলা’, ‘কালপুরুষ’সহ অসংখ্য কালজয়ী উপন্যাসের স্রষ্ঠা সমরেশ মজুমদার বাংলাদেশ ও কলকাতাসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বাংলা ভাষাভাষি মানুষের হৃদয়ে গভীর ভালোবাসায় স্থান করে নিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ছিলেন একজন শুদ্ধাচারী লেখক। তাঁর লেখনিতে বাঙালি সংস্কৃতির নানা দিক সহস্র ধারায় উৎসারিত হয়েছে। বিশিষ্ট এই ঔপন্যাসিকের মৃত্যুতে সাহিত্য জগত বিশেষ করে বাংলা সাহিত্যের এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো। প্রধানমন্ত্রী সমরেশ মজুমদারের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

তারকাদের শোক

‘কালবেলা’র এই স্রষ্টার প্রয়াণে শোকের মাতম শুধু সাহিত্য অঙ্গণে নয়, ছড়িয়ে গেছে বাঙালির সব শ্রেণি পেশার মানুষের মনে। সাধারণের পাশাপাশি প্রখ্যাত এই সাহিত্যিকের মৃত্যুতে দুই বাংলার তারকারাও শোকার্ত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক জানিয়েছেন প্রসেনজিৎ থেকে শুরু করে জয়া আহসান, সৃজিত মুখার্জী, পাওলি দাম, চঞ্চল চৌধুরীর মতো তারকারাও।

আনন্দবাজার পত্রিকাকে পাওলি দাম বলেন, সমরেশদা আর নেই। এটা ভাবতেই অসুবিধা হচ্ছে। ২০০৬ সালের শেষ দিক। ২০০৭ সালে ‘কালবেলার’ শুটিং শুরু করি। এর আগে মাঝে মাঝে আড্ডা হতো তার সঙ্গে। পরিচালক গৌতম ঘোষ থাকতেন, খুকুদিও থাকতেন। কাজ নিয়ে কথা হতো। সমরেশদা অনেক আড্ডাবাজ ছিলেন। সিনেমা, সাহিত্য থেকে খাওয়া-দাওয়া, সব বিষয়েই সমান আগ্রহ ছিল তার। অনেক মজার মজার গল্প বলতেন ও হাসাতে পারতেন। বাংলাদেশের প্রতিও টান ছিল তার। আমি ফরিদপুরের মেয়ে, এটা শুনেই গল্প শুরু করেছিলেন। বাংলাদেশের রান্না-বান্না, মানুষজন, সবই থাকতো গল্পে। মাধবীলতা আমার প্রথম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বলা যায়। আগে এভাবে দায়িত্ব আসেনি। খুব যত্ন সহকারে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। এ কারণে চরিত্রের স্রষ্টার সঙ্গে কথা বলার আগ্রহও বেশি ছিল। তেমনই এক আলোচনায় সমরেশদা জানতে পারেন, আমি রসায়নের শিক্ষার্থী। পড়ালেখায় মন রয়েছে আমার। তখন তিনি জানতে চেয়েছিলেন, রসায়ন পড়ে হঠাৎ অভিনয়ে এলাম কেন? তিনি বলেছিলেন, রসায়নের শিক্ষা ব্যবহার করেই কাজ করতে পারতাম আমি। তাকে বলেছিলাম, অভিনয়েও তো রসায়নের ধারণা থাকা দরকার। রসায়নের জ্ঞান তো কাজেই লাগে। আমার এ জবাবে বেশ মজা পেয়েছিলেন তিনি। পরে যখন দেখা হয়েছে, মাঝে মাঝেই আমার এই কথা উল্লেখ করতেন সমরেশদা। এ নায়িকা বলেন, মাধবীলতা ভালোবাসার প্রতীক। বাঙালির চোখে আলাদাভাবে জায়গা করে নিয়েছে সেই চরিত্র। মাধবীলতা হওয়ার জন্য নানা চেষ্টা করেছি। শেষে যখন সিনেমাটি হলো, সমরেশদা সেটি দেখে অনেক প্রশংসা করেছিলেন আমার। বলেছিলেন, ‘আমার লেখার মাধবীলতা আর পর্দায় তোমার চরিত্রের মধ্যে কোনো পার্থক্য পাইনি। তুমি এটা কী করে করলে?’ সরাসরি লেখকের কাছ থেকে এ কথা শুনতে পাওয়া আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তির। এরপর শীর্ষেন্দুদা, সুনীলদার লেখা চরিত্রেও কাজ করেছি। তবে সমরেশদার সেই প্রশংসা আমাকে সবসময় সাহস জুগিয়েছে। সেই সিনেমা দেখে সমরেশদা আবার বলেছিলেন, রসায়ন সম্পর্কে তোমার বক্তব্য দারুণ ছিল। আমাদের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক হয়েছিল। পরে অনেক সময় এমনিই গল্প করতে যেতে বলতেন। আমি তার বাড়ি, অফিসে গিয়েছি আগে। তবে করোনার পর আর দেখা হয়নি। করোনার সময় সবার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সমরেশদার সঙ্গে এমনটা হয়েছিল। আর কখনো দেখা হবে না তার সঙ্গে।

জয়া আহসান বলেন, ‘এক প্রিয়র জন্মদিনের আলোতে আর এক প্রিয়র মৃত্যুর বেদনা বুকে বেজে চলেছে নিরন্তর। পৃথিবীর এই কালবেলায় সমরেশ মজুমদার এই পার্থিব পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। ২৫ এর সকালে সারা আকাশজুড়ে তারই যেন অনুরণন। সৃষ্টিতে, সাহিত্যে এই দুই প্রিয়ই নিরন্তর যাতায়াত করে চলুন আজীবন, এই তো প্রাপ্তি, এখানে মৃত্যুর মহিমা শূন্য হয়ে আসে।’ চঞ্চল চৌধুরী শ্রদ্ধা নিবেদন করে তিনি পোস্টে লেখেন, ‘মৃত্যু কি সহজ, কি নিঃশব্দে আসে অথচ মানুষ চিরকালই জীবন নিয়ে গর্ব করে যায়।’ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় লেখেন, ‘সাহিত্য জগতে নক্ষত্র পতন। ছেলেরবেলার স্মৃতির ছন্দপতন ঘটল। আপনার কথাই আজ আপনার জন্য ধার নিলাম। ছাইটা হল স্মৃতি, আগুনটা হল বর্তমান। আপনি থাকবেন আপনার সকল কালজয়ী সৃষ্টিতে এবং আমাদের সকলের স্মৃতিতে।’ কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র লেখেন, ‘সমরেশ কাকু আমার বালিকা বেলার প্রেম তোমার কালবেলা।’ শ্রীলেখার মতো ‘কালবেলা’র ভীষণ ভক্ত নির্মাতা সৃজিত মুখার্জী। তিনি লেখেন, ‘প্রেম বলতে এখনও অনিমেষ মাধবীলতা বুঝি। বিপ্লব বলতেও। ভালো থাকবেন।’ অভিনেত্রী, শিল্পী ও নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওন সমরেশ মজুমদারের সাথে একটি ছবি পোস্ট করে লিখেন, ‘সমরেশ দা’! অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি লেখেন, ‘আমরা কাউকে অকারণেই মনে রেখে দেই চিরকাল! যাকে মনে রাখার কোনো কারণই নেই ‘সমরেশ মজুমদার’। অভিনেত্রী মৌটুসী বিশ্বাস সমরেশ মজুমদারের একটি ভিডিও সাক্ষাৎকার পোস্ট করে লিখেছেন, ‘দুই কি চারদিন হবে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে উৎসর্গ করে বিভিন্ন জনের সাক্ষাৎকার দেখছিলাম হইচই-এ আর ভাবছিলাম আজীবন এই মানুষগুলো থাকলে কত ভালো হতো। আজ সমরেশ মজুমদার চলে গেলেন। আমাদের কী দারুণ কিশোরবেলা আর বড়বেলা দিয়েছেন। জন্ম এবং কর্ম গুরুত্বপূর্ণ করে গিয়েছেন যারা তাদের ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছি। শ্রদ্ধা এবং অনেক ভালোবাসা রইল।’

শেষ কথা

শেষ জীবনে সিওপিডিতে ভুগছিলেন সমরেশ মজুমদার। সাথে ছিল স্লিপ অ্যাপনিয়াও (ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সমস্যা)। ২০২৩ সালের ২৫ই এপ্রিল মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত সমস্যার কারণে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। সেখানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। এই বিদায় যেন বিদায় নয়, সমরেশ মজুমদার বেঁচে থাকবেন তার লেখায়, অসংখ্য পাঠকের মনে।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: স্মৃতিচারণ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

fourteen + eleven =