সালেক সুফী
দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে বলা যায় বাংলাদেশের শোচনীয় পরাজয় এবং সিরিজ ধবল ধোলাই নিশ্চিত হয়ে গেছে। এখন দেখতে হবে বাংলাদেশ ইনিংস পরাজয় এড়াতে পারে কিনা। নিষ্প্রাণ উইকেটে বাংলাদেশকে দুই দিন পাঁচ সেশনের বেশি রোদে পুড়িয়ে রান বন্যায় প্লাবিত করে দক্ষিণ আফ্রিকা।
তিন ব্যাটসম্যান টনি ডি জর্জি (১৭৭), ত্রিস্তান স্তাব (১০৬ ) এবং উইলান মুলডার (১০৫*) শতরান এবং দুই ব্যাটসম্যান শেরুরান মাতস্যামি (৭০*) এবং ডেভিড বাডিংটন (৫৯) অর্ধশত করায় দক্ষিণ আফ্রিকা ৫৭৭/৬ রানের প্লাবনে প্লাবিত করে ইনিংস ঘোষণা করে।
প্রায় দুই দিন পাঁচ সেশনের বেশি ১১৪.২ ওভার বোলিং করে পরিশ্রান্ত বাংলাদেশ দ্বিতীয় দিন শেষে করেছে। ম্যাচ বাঁচানো বা ধবল ধোলাই এড়ানো দূরের কথা ইনিংস পরাজয় এড়াতেই বাংলাদেশের আরো ৩৩৮ রান প্রয়োজন। হাতে আছে ৬ উইকেট। জানিনা বাংলাদেশের ক্রিকেটের এই শোচনীয় পরিণতি দেখে কারো লজ্জা হয় কিনা। আমাদের কিন্তু লজ্জার সঙ্গে দুঃখ হয়।
প্রশ্ন ওঠা প্রাসঙ্গিক। ব্যালান্সড বোলিং আক্রমণ নিয়েও কেন স্পোর্টিং উইকেটের ঝুঁকি নিতে পারে না। কৌশল এবং মানসিকতার পরিবর্তন না হলে বাংলাদেশকে দেশ বিদেশে টেস্ট ক্রিকেটে বিব্রত হওয়া থেকে মুক্তি মিলবে না।
দ্বিতীয় দিন সকালে নতুন বল নিয়ে শুরু করে বাংলাদেশ। উইকেটে কোনো সাড়া মিলেনি। জর্জি-স্টাব জুটি বাংলাদেশকে হতাশ করে বিপদজনক ভাবে এগিয়ে চলে। ধৈর্য হারায় নি তাইজুল ইসলাম। লাইন লেংথ বজায় রেখে ক্রমাগত বোলিং করার সুবাদে পুরস্কার মিলে।
দলের সংগ্রহ ৩৮৬ পৌঁছার পর দ্রুত ৩ উইকেট তুলে নিয়ে আশা জাগায় তাইজুল। ৫ রানে ৩ উইকেটের পতন ঘটায় স্কোর দাঁড়ায় ৫/৩৯১। আশা জাগে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়াবার। কিছু সময় পরে রিকেলটনকে ফেরায় নাহিদ।
কিন্তু এই পর্যায়ে এসে উইলান মুলডার ( ১০৫*) এবং সেনারান মুথুসামি ( ৭০*) নির্দয় প্রহার করে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৫৭৭/৬ ধরা ছোয়ার বাইরে নিয়ে যায়। ইনিংসে ৩ সেঞ্চুরি এবং দুই অর্ধশত প্রমাণ করে নিস্প্রান উইকেট করার বাংলাদেশের কৌশল ছিল নিষ্ফলা।
বাংলাদেশ বোলারদের ১১৪.৩ বল করতে হয়। ৫৭৭ রান পাহাড়ে চাপা পরে বাংলাদেশ। ৫২.২ ওভার বোলিং করে ১৯৮ রানে ৫ উইকেট লাভ করে তাইজুল। দক্ষিণ আফ্রিকার অপেক্ষাকৃত নবীন ব্যাটসম্যানদের প্রশংসা করতেই হবে। উইকেট এবং পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে ওরা প্রশংসনীয় ব্যাটিং করেছে। মুল্ডারের শতরান হবার পর ৫৭৫ /৬ ইনিংস ঘোষণা করে দক্ষিণ আফ্রিকা।
ব্যাটিং করার সময় বিধি ভঙ্গ করে প্রোটিয়া উইকেটের উপরে দৌড়ানোর কারণে ৫ রান বোনাস পায় বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাটিং শুরু করে রুবাবা আতঙ্কে ভুগতে থাকা বাংলাদেশ প্রথম ওভারে সাদমান ইসলাম ,৫ম ওভারে জাকির হাসান এবং ষষ্ট ওভারে মাহমুদুল হাসানকে হারায়। যে উইকেটে বাংলাদেশের বোলারদের উইকেট নিতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়েছে সেখানে অনায়াসে উইকেট বিলিয়ে দেয় বাংলাদেশ।
তৃতীয় উইকেট পতনের পর নৈশ প্রহরী হিসাবে পাঠানো হয় হাসান মাহমুদকে। আলোক স্বল্পতা মাথায় রেখে কেশব মহারাজকে বোলিংয়ে আনা হয়। ফিরে যায় নৈশ প্রহরী। ৩২ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
কিছুই বলার নেই যেভাবে আউট হয়েছে সাদমান, জাকির এবং জয়। হাসান মাহমুদকে কিছু বলার নেই। উইকেটে সিম মুভমেন্ট দেখিনি। বাংলাদেশ টপ অর্ডারকে ট্রমা আক্রান্ত মনে হয়েছে। মহারাজের যে বলে আউট হয়েছে বাংলাদেশের যে কোনো ব্যাটসম্যান একইভাবে আউট হতে পারতো।
খেলার এখনো তিন দিন বাকি আছে। ফলাফল কি হবে সেটি এখনো বাংলাদেশের সদ্য ক্রিকেট শিখতে থাকা কিশোরে বলে দিতে পারবে। আমি ক্রিকেটারদের পেশাদারিত্বকে দায়ী করার পাশাপাশি বিসিবিকে দায়ী করবো।
এই ধরনের উইকেটে খেলে বাংলাদেশ ১১৪ ওভার মাঠে থেকে পরিশ্রান্ত অবসন্ন ছিল। ব্যালান্সড বোলিং আক্রমণ থাকা সত্ত্বেও কেন নিষ্প্রাণ উইকেট বানিয়ে বিপর্যস্ত করা হলো বাংলাদেশকে। কারো কি কোনো জবাবদিহি নেই? নিশ্চিত লজ্জাজনক পর্যায়ের পথে বাংলাদেশ। তৃতীয় দিন পার করতে পারবে কি না সন্দেহ আছে।