রোমঞ্চকর ম্যাচে সার্বিয়ার সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করল ক্যামেরুন

ছয় গোলের রোমঞ্চকর এক ম্যাচে সাবিয়ার সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছে ক্যামেরুন। প্রথম ম্যাচে জয় না পাওয়ায় আল-ওয়াকরাহ’র আল-জানুব স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপে সোমবারের ম্যাচটিকেই জয়ের লক্ষ্য হিসেবে নিয়েছিল আফ্রিকান অদম্য সিংহ ও ইউরোপীয় ফুটবলের পরাশক্তি দলটি । কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউ কাউকে হারাতে পারেনি। ৩-৩ গোলে ড্র হয়েছে হাই ভোল্টেজ ম্যাচটি।

বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই হেরে গিয়েছিল সার্বিয়া ও ক্যামেরুন। যে কারণে টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে আজ জয় ছাড়া বিকল্প কোন পথ খোলা ছিলনা দল দুটির। ক্যামেরুন প্রথমে গোল করে এগিয়ে গেলেও ইনজুরি টাইমে পরপর দুই গোল করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় সার্বিয়া। পিছিয়ে পড়ার পরও ২-১ গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে যেতে সক্ষম হয় ইউরোপীয় জায়ান্টরা। ম্যাচের ২৯ মিনিটে গোল করে অদম্য সিংহদের এগিয়ে দেন জিন-চার্লস কাস্তেলেত্তো। তবে প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে স্ট্রাহিনজা পাভলোভিচ ও সার্গেই মিলিনকোভিচ-সাভিচ  গোল করে সার্বিয়াকে এগিয়ে দেন। বিরতির পর সার্বিয়ার হয়ে আলেক্সান্দার মিট্রোভিচ এবং ক্যামেরুনের হয়ে গোল করেন যথাক্রমে ভিনসেন্ট আবুবকর ও এরিক ম্যাক্সিম ছুপো-মোটিং।

ম্যাচের ৫ম মিনিটেই আক্রমণ রচনা করে ক্যামেরুন। তবে সার্বিয়ান রক্ষনের দৃঢ়তায় এই দফায় কোন রকম পরীক্ষা দিতে হয়নি গোল রক্ষক ভানয়া মিলিনকোভিচ-সাভিচকে।  ১০ম মিনিটে আক্রমনে যায় সার্বিয়া। এটি ছিল পরিকল্পিত একটি আক্রমণ। ডুসান টাডিচ মধ্যমাঠ থেকে বল নিয়ে ডি বক্সে ঢুকে গিয়ে আলেক্সান্দার মিট্রোভিচকে পাস দিলে তিনি পোস্টের একেবারে সামনে থেকেই শট নেন ক্যামেরুনের পোস্টে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বলটি ক্রসবারের বাঁ পাশে লেগে ফিরে আসে। ফলে নিশ্চিত গোল থেকে বঞ্চিত হয় সার্বিয়া।

১৫তম মিনিটে আবারো ডি বক্সের ভেতর থেকে মিট্রোভিচ শট নিলেও সেটি বারে লেগে ফিরে আসে। এরপর  ১৮ মিনিটে প্রতিআক্রমণ থেকে ক্যামেরুনের মার্টিন হোংলা ডি বক্সের লাইন থেকে শট নিলে সেটি ক্রস বারের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায। এ সময় বলের নিয়ন্ত্রন ৫৯ শতাংশ ছিল সার্বিয়দের।

স্রোতের বিপরীতে গিয়েই ম্যাচের ২৯ মিনিটে গোল করে এগিয়ে যায় ক্যামেরুন। এই সময় পিয়েরে কুন্ডের ক্রসের বল নিকোলাস এনকুলের মাথায় লেগে সার্বিয় পোস্টের সামনে এসে পড়লে আলতো টোকা দিয়ে বলটি জালে জড়িয়ে দেন কাস্তেলেত্তো (১-০)। ক্যামেরুন এগিয়ে গেলেও প্রথমার্ধের নাটকীয়তা তখনো শুরুই হয়নি। এই অর্ধের নাটকীয়তা শুরু হয় ম্যাচ রেফারির ৬ মিনিটের অতিরিক্ত সময় ঘোষণার পর।

অতিরিক্ত খাতের দ্বিতীয় মিনিটেই গোলটি পরিশোধ করে দেয় সার্বিয়া। ডি বক্সের বাইরে থেকে ডুসান টাডিচের ফ্রি কিকের বল দর্শনীয় হেডে জালে জড়িয়ে দেন সার্বিয় ডিফেন্ডার পাভলোভিচ (১-১)। এখানেই শেষ নয়, দুই  মিনিট পর আরো একটি গোল করে ম্যাচের লিড নেয় সার্বিয়া।  আন্দ্রিয়া জিভকোভিচ এর পাস থেকে বল পেয়ে ডি বক্সের বাইরে থেকে আচমকা মাটি কামড়ানো শটে গোল করেন সার্গেই মিলিনকোভিচ (২-১)। ফলে ২-১ গোলের স্বস্তির লিড নিয়ে বিরতিতে যায় সার্বিয়া।

বিরতি থেকে ফেরার পরও সার্বিয়দের আধিপত্য অব্যাহত ছিল। ম্যাচের ৫৩ মিনিটে আরো এক গোল করে জয়ের মঞ্চ সম্পূর্ণ প্রস্তুত করে নেয় তারা। মধ্যমাঠে সার্বিয় তারকা আলেক্সান্দার মিট্রোভিচ বল নিয়ে বেশ দ্রুত ক্যামেরুনের ডি বক্সে গিয়ে সেটি পাস দেন ফিলিপ কোস্টিচকে। তিনি সেটি দেন জিভকোভিচ এর কাছে। জিভকোভিচ নিজেই গোল করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তিনি সেটি ফিরিয়ে দেন মিট্রোভিচের কাছে। বলটি বাঁ পায়ে জালের দিকে গড়িয়ে দেন সার্বিয় তারকা (৩-১)।

তখনো কেউ জানতো না এর পর রোমঞ্চকর আরেকটি নাটক মঞ্চায়নের অপক্ষোয় রয়েছে আফ্রিকান অদম্য সিংহরা। ম্যাচের ৬৩ মিনিটে অফসাইড ট্র্যাক ভেঙ্গে প্রতিআক্রমণ থেকে পাওয়া বল নিয়ে একাই সার্বিয় পোস্টে ঢুকে গোল করে ব্যবধান কমিয়ে আনেন ভিনসেন্ট আবুবকর। প্রথম দফায় সেটি অফসাইড কল আসলেও পরে ভিএআর প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে গোলের ঘোষনা দেন কর্তব্যরত রেফারি। এতেই ৩-২ ব্যবধানে কমে আসে ম্যাচের ফলাফল। তবে তিন মিনিট পর শেষ চমকটি দেন ক্যামেরুনের আরেক তারকা এরিক ম্যাক্সিম ছুপো-মোটিং। ৬৬ মিনিটে মধ্যমাঠ থেকে অফসাইড ট্র্যাক ভেঙ্গে সার্বিয় সিমানায় ঢুকে পড়েন আবুবকর। ডি বক্সের ভেতর ঢুকে তিনি বলটি পাস দেন সমান্তরালে ছুটে আসা সতির্থ ছুপো-মোটিংকে। চলন্ত বলটি দক্ষতার সঙ্গে জালে জড়ান তিনি (৩-৩)। এতেই সমতা ফিরে পায় অদম্য সিংহরা।

বাসস

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

13 − thirteen =