লজ্জাহীন বাংলাদেশের লজ্জাজনক পরাজয়

সালেক সুফী: এশিয়া কাপ টি২০ চ্যাম্পিয়নশিপের নিজেদের প্রথম খেলায় দুর্দান্ত টাইগার বাহিনীকে পারফরমেন্স দিয়ে  ৭ উইকেটের বিশাল বাবধানের ম্যাচ জয় করেছে আফগানিস্তান।  ক্রিকেটের সংক্ষিপ্তম ফরমেট টি২০ ফরম্যাটে এমনিতেই যোজন যোজন ব্যবধান আফগানিস্তান আর বাংলাদেশের। আফগান দলে আছে মুজীম, রাশিদ, নবী, জাজাইয়ের মতো টি২০ ফরম্যাটের ফেরিওয়ালা।

ইদানিং আরো কয়েকজন উদীয়মান তারুণ্যের আবির্ভাব ঘটেছে। বিশেষত ফজল হক ফারুকী এবং নাভিনুল হকের সংযোজন আফগান দলের রসায়ন পাল্টে দিয়েছে। তারা দুজন বিচক্ষণতার সঙ্গে বোলিং করে বিপক্ষ দলের অগ্রযাত্রা রহিত করছে প্রতিনিয়ত। বদলে যাওয়া ক্রিকেট পৃথিবীতে সব ফরম্যাটে  ওরা দেশকে বড়ো কিছু দেওয়ার সামর্থ দেখাচ্ছে। ইনিংস সূচনায় ওদের দুজনের আগ্রাসন স্বাভাবিক বলে আমি মনে করি। এই দলটি ধারাবাহিক হলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের রসায়ন বদলে যেতে পারে।

আমি বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের ক্রিকেট হামাগুড়ি দেওয়া শিশুকাল কাছে থেকে দেখছি। বলতে দ্বিধা নেই শারীরিক সক্ষমতা, খেলার মান, দক্ষতায় অন্তত টি২০ ফরম্যাটে বাংলাদেশ থেকে অনেক এগিয়ে আফগানিস্তান। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আফগান দলের পারফরম্যান্সের তুলনায় বাংলাদেশ যোজন যোজন পিছিয়ে। অথচ আফগানিস্তানে বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক।

আফগানিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছে বাংলাদেশের অনেক পরে। অথচ কাল যেভাবে নিরঙ্কুশ আধিপত্য বিস্তার করে ৭ উইকেট ব্যবধানে জয় পেলো তা থেকে বলতেই হয় অন্তত টি২০ ফরম্যাটে বাংলাদেশ এখন ধারে কাছে নেই।  আফগান ক্রিকেট এগিয়ে চলেছে একটি ভিশন  নিয়ে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভিশন বলতে কিছুই দৃশ্যমান নেই। ক্রমাগত পরাজিত হলেও বোধোদয় হয় না বিসিবির।

এই টুর্নামেন্টে অবশ্যই আফগানিস্তান এগিয়ে ছিল। আফগান দল দেশে বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে ভারতে অনুশীলন করে। দ্বিপাক্ষিক অনেক সিরিজ অনুষ্ঠিত হয় ইউএইতে। আর তাই দুবাই, সারজার উইকেটের ধরন ওদের পরিচিত। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খাবি হাওয়া বাংলাদেশ সকল ফরম্যাটে এখন পতনের পাদদেশে।

কেউ আশা করে না বাংলাদেশ এশিয়া কাপে জয় পেয়ে চমক দেখাবে।  কিন্তু যেভাবে বাংলাদেশ শ্রীলংকার কাছে বিনা যুদ্ধে আত্মসমর্পণ করলো তা দেখে হতাশ হওয়া স্বাভাবিক।

নতুন উইকেট দেখতে শুষ্ক থাকায় সাকিব বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিলো। আফগানিস্তান দলের প্রথম ম্যাচ দেখে বাংলাদেশ রণকৌশল  সাজিয়েছে বলে মনে হয়নি। বিজয়, নাঈমের মাঝে আস্থার অভাব  দৃষ্টিকটূ লেগেছে। সাকিব, মুশফিকের ব্যর্থতা দলকে খাদের কিনারায় নিয়ে যায়। তবুও মোসাদ্দেক-রিয়াদের সংক্রিয়তায় ইনিংস ১০০ পেরিয়ে ১২৭/৭ শেষ হয়। বলাই বাহুল্য বাংলাদেশের অন্তত ৩০ রান কম হয়েছিল। ব্যাটম্যানদের মধ্যে মোসাদ্দেক আর মাহমুদুল্লাহ ছাড়া বাকি সবাই নাদানের মতো খেলেছে। আধুনিক ক্রিকেটে ১২৭ রান কোনো বিবেচনায় ম্যাচ জয়ী সংগ্রহ বলা যাবে না।

জবাবে আফগানিস্তান শুরুতে কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও দুই জাদরানের কৌশলী ব্যাটিং পুঁজি করে ৭ উইকেটে ম্যাচ জয় করে প্রথম দল হিসাবে দ্বিতীয় রাউন্ডে উন্নীত হয়। আমি আহত হলেও বিষয়টি অপ্রত্যাশিত মনে হয়নি। তবে দেখেছি আফগান দলের ম্যাচ পরিকল্পনা ছিল না। আফগান দলের উঁচু মানের বোলিং মোকাবিলা করার সামর্থ্যই ছিল না বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের।

পয়াজয়ে বাংলাদেশের দ্বিতীয় রাউন্ডে উত্তীর্ণ হওয়া অনিশ্চিত হয়ে গেছে। মনে হয় এই দল শ্রীলংকাকে পরাজিত করতে পারবে। না পারলে শূন্য হাতেই ফিরবে বাংলাদেশ। এতেও লজ্জাহীন বিসিবির লজ্জা হবে না।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

eighteen − six =