মার্কিন নাট্যকার এ আর গার্নির ‘লাভ লেটার্স’ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হলো শুক্রবার রাজধানীর বেইলি রোডের বাংলাদেশ মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে । নাটকটিকে বাংলায় আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে রূপান্তর করছেন অধ্যাপক আবদুস সেলিম। নাট্য সংগঠন থিয়েটারের এটি ৪৮তম প্রযোজনা। নির্দেশনা দিয়েছেন ত্রপা মজুমদার। প্রধান দুটি চরিত্র অনন্ত শাহেদ চৌধুরীর ভূমিকায় রামেন্দু মজুমদার ও মাইশা ইসলামের চরিত্র রূপায়ণ করেছেন ফেরদৌসী মজুমদার। তাদের সহায়তা করেছেন রবিন বসাক ও নাজমুন নাহার।
পুলিৎজার পুরস্কারের মনোনয়ন পাওয়া জনপ্রিয় এই নাটক পৃথিবীর বহু ভাষায় অনূদিত হয়ে মঞ্চস্থ হয়েছে। নাটকে দুটি বিপরীত স্বভাবের মানব–মানবীর কৈশোর থেকে শুরু করে জীবনের অন্তিম পর্যায় অবধি বহুবিধ ঘটনাপ্রবাহ উঠে এসেছে তাদের পত্র বিনিময়ের ভেতর দিয়ে। ব্যক্তিগত আবেগ–অনুভূতির পাশাপাশি সমকালীন সামাজিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ, বিশেষত ছয় দফার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের বিষয়গুলো একটি বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
অনন্ত পড়ালেখা করেছে ক্যাডেট কলেজে। ব্যারিস্টারি পড়েছে লন্ডনে। সরাসরি অংশ নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধে। পরে যুদ্ধাপরাধ নিয়ে গবেষণা আর রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছে। সংসদ সদস্য হয়েছে, মন্ত্রী হয়েছে। স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে তার সফল জীবন। অপর দিকে মাইশা কনভেন্ট স্কুলে পড়ালেখা করে ভর্তি হয়েছে আর্ট কলেজে। সেখান থেকে প্যারিসে উচ্চশিক্ষা। তার ছবির প্রদর্শনী হয়েছে লন্ডনে। শিল্পী হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে। বিয়ে করেছে এক ব্রিটিশ নাগরিককে। দুই মেয়ে তার। তবে শেষাবধি তার সংসার টেকেনি। শেষ জীবনটা বড়ই বিষণ্ন তার।
অনন্ত-মাইশার জীবন এক সরলরেখায় এগোয়নি, এক বিন্দুতে মিলিতও হয়নি। তাদের ভেতরে গভীর বন্ধুত্বের চেয়ে এক গভীরতর সম্পর্ক বিরাজমান থেকেছে সব সময়। প্রকাশ্যে পরস্পরের কাছে স্বীকার না করলেও জীবনের একপর্যায়ে এসে তারা উভয়েই অনুভব করেছে, এই সম্পর্ক আসলে প্রেমের। তারা প্রগাঢ়ভাবেই দুজন ভালোবেসেছে দুজনকে। কিন্তু তার পরিণতি হলো বিয়োগান্ত।
চিঠি পাঠের ফাঁকে ফাঁকে বিশেষ বিশেষ ঘটনার ও স্থানের ছবি, কার্ড ও অনন্তের চিঠির জবাবে মাইশা যেসব ছবি এঁকে পাঠিয়েছে, তা মঞ্চের নেপথ্য পর্দায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বদলে যেতে থাকা ঘটনাক্রম ও স্থানের সঙ্গে মিল রেখে ব্যবহার করা নেপথ্য সংগীত, নিরন্তর টুং টুং ঘণ্টাধ্বনিতে সময়ের প্রবহমানতা বৈচিত্র্য এনেছে এই পাঠ পর্বে। আর প্রাজ্ঞ দুই মঞ্চ কুশীলব রামেন্দু-ফেরদৌসীর অনবদ্য উপস্থাপনা উপভোগ্য করে তুলেছিল নাটকটিকে। অভিনয় শেষে দর্শকেরা দাঁড়িয়ে বিপুল করতালিতে অভিনন্দিত করলেন তাঁদের।
নাটকটি উৎসর্গ করা হয় প্রয়াত নাট্যজন আলী যাকেরের স্মৃতির প্রতি। প্রথমে তারই এই নাটকে অনন্তের ভূমিকা রূপায়ণের কথা ছিল। কিন্তু অনিরাময় কর্কটরোগে তার প্রয়াণে সেটি আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কাল শনিবার সন্ধ্যা সাতটায় ‘লাভ লেটার্স’–এর দ্বিতীয় প্রদর্শনী হবে।