লিটন – মিরাজের মাইল ফলক ব্যাটিংয়ে  ইতিহাস সৃষ্টির দুয়ারে বাংলাদেশ

সালেক সুফী

২৬/৬ ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে দুই লেট্ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাস এবং মেহেদী হাসান মিরাজের লড়াকু ব্যাটিং বাংলাদেশকে খাদের কিনার থেকে তুলে টেস্ট এবং সিরিজ জয়ের অবস্থানে নিয়ে গাছে। তৃতীয় দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৯/২ রান করে পাকিস্তান মাত্র ২১ রানে এগিয়ে আছে। চতুর্থ এবং পঞ্চম উভয় দিন বৃষ্টি বিঘ্ন ঘটাবে বলে পূর্বাভাসে বলা আছে। বাংলাদেশ কাল সকালে চট জলদি উইকেট তুলে নিয়ে টেস্ট এবং সিরিজ জয়ের অবস্থানে পৌঁছে যেতে পারে। কাল যেভাবে খেলেছে লিটন, মিরাজ এই টেস্ট পরাজয় ওদের প্রতি প্রকৃতির অন্যায় হবে। পাকিস্তানের ২৭৪ রানের জবাবে ২৬২ রানে শেষ হয় বাংলাদেশ ইনিংস। দিনশেষে হাসান মাহমুদ আব্দুল্লাহ শফিক এবং নৈশ প্রহরী খুররম সাজ্জাদকে ফিরিয়ে দিলে মাত্র ২১ রানে এগিয়ে থাকে।

বিশ্ব টেস্ট ইতিহাসে অনেক ব্যাটিং লড়াই কাহিনী লিখা আছে। কিন্তু কাল সকালে উইকেটের সিম, সুইং কাজে লাগিয়ে  খুররম সাজ্জাদ (৬/৯০) এবং মীর হামজা (২/৫০) বাংলাদেশ টপ অর্ডারকে গুড়িয়ে ( ১১.৩ ওভারে ২২ রানে ৬ উইকেট) দিয়েছিলো। কেউ ভাবেনি সেই অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। অথচ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ লিটন, মিরাজের তুলনাহীন ব্যাটিং দক্ষতায় মরুভূতিতে গোলাপ ফুল ফুটিয়েছে।

৫০ রানের নিচে ৬ উইকেট পড়ার পর ১৪৭ বছরের টেস্ট ইতিহাসে প্রথম দেড়শ রানের জুটি লিটন-মিরাজের, ২৬ রানে ৬ উইকেট হারানোর  পর ৭৮ রানে মিরাজের বিদায়ে এই জুটি থামে ১৬৫ রানে।  লিটন দাস করেন ১৩৮।

মেহেদির ঘূর্ণি আর তাসকিনের গতি সুইংয়ের মণিকাঞ্চন সম্মিলনে ২৭৪ রানে সীমিত রেখেছিলো পাকিস্তান প্রথম  ইনিংসকে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দিনে পরিকল্পনা ছিল দেখে শুনে ব্যাটিং করে সেই সীমানা পেরিয়ে সন্তোষ জনক অবস্থানে পৌঁছানো। উইকেটে ঘাস ছিল, নতুন বলে সুইং ছিল। বোলিং বান্ধব পরিস্থিতি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানের দুই নবীন পেসার খুররম সাজ্জাদ এবং মীর হামজা প্রলয় নাচ সৃষ্টি করলো। জাকির, সাদমান, শান্ত, মোমিনুল, মুশফিক, সাকিব সাজঘরে আসা  যাওয়ার মিছিল করলে ১১.৩ ওভারেই দলের অবস্থান দাঁড়ালো ২২/৬।  অনেকেই ভাবলেন বাংলাদেশ স্বল্প রানে গুটিয়ে যাবে। ফলো ওন করে টেস্ট পরাজয় ঘটবে বাংলাদেশের। কিন্তু ৭ম উইকেটে জুটি বেঁধে সাহস দক্ষতার সঙ্গে ঘুরে দাঁড়ালো লিটন এবং মিরাজ। দুজনের যোগাযোগে ১৬৫ রানের ইনিংস শুধুমাত্র নতুন মাইল ফলক সৃষ্টি করে নি। বাংলাদেশকে নিশ্চিত পর্যায়ের কালো গহ্বর থেকে তুলে সন্তোষ জনক অবস্থানে আসীন করেছে। ১২৪ বলে ১২ চার এবং এক ছয়ে সাজানো ৭৮রান করে মেরাজ আউট হবার পর তাসকিন সহসা ফিরে যায়। তখনও ৮১ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। সেখান থেকে হাসান মাহমুদকে সঙ্গী করে ৯ম উইকেট জুটিতে তীব্র প্রতিরোধ সৃষ্টি করে লিটন। ১৩ চার এবং ৪ ছয়ের মোড়কে আচ্ছাদিত লিটনের ১৩৮ পরিস্থিতি এবং প্রেক্ষাপট বিচারে আধুনিক বিশ্ব ক্রিকেটে অন্যতম সেরা ইনিংস বিবেচনার দাবি রাখে। ইনিংসটিতে ছিল সাহস, দক্ষতা, উইকেটে টিকে থাকার সুতীব্র বাসনা।  সেই সঙ্গে বাহারি স্ট্রোকসের ফুলঝুরি। এমনকি হাসান মাহমুদ  ৫১ বল খেলে ১৩ রানে ছিল অপরাজিত। দীর্ঘক্ষন উইকেট আগলে রেখে হাসান লিটনের যোগ্য সঙ্গীর ভূমিকা পালন করে। ২৬২ রানে বাংলাদেশ ইনিংস শেষ হলে মাত্র ১২ রানে পিছিয়ে থাকে বাংলাদেশ। টেস্ট ইতিহাসে অনেক কঠিন পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর নজির আছে। বাংলাদেশের লেট অর্ডার ব্যাটসম্যানদের লড়াই করে ফিরে আশা অবশ্যই সেই কাতারে উপরের দিকে স্থান পাবে।

এখানেই শেষ নয়। দিনশেষে ৩.৪ ওভারে পাকিস্তানের দুই উইকেট তুলে নেয় উজ্জীবিত বাংলাদেশ। হাসান মাহমুদ ফিরিয়ে দেয় এই সিরিজে নিজেকে হারিয়ে ফেলা আব্দুল্লাহ শফিক এবং নৈশ প্রহরী খুররম সাজ্জাদকে। ৮ উইকেট হাতে নিয়ে মাত্র ২১ রানে এগিয়ে আছে পাকিস্তান। সিরিজ পরাজয় এবং ধবল ধোলাই এড়াতে হলে পাকিস্তানকে অন্তত ২৭৫-৩০০ লিড নিতে হবে। বল এখনো নতুন। চতুর্থ দিন সকালের সেশন বলে দিবে কোন পথে কি পরিণতি হবে সিরিজের। অবশ্য বৃষ্টি বিঘ্ন ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।

পাকিস্তানের দুই অপেক্ষাকৃত নবীন পেসার খুররম সাজ্জাদ (৬/৯০) এবং মীর হামজা (২/৫০) তারিফ করতে হয়। দিনের শুরুতে উইকেটের সহায়তা কাজে লাগিয়ে মৌমাছির মত হুল ফুটিয়ে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিল ওরা। বলের সাইন চলে যাবার পর লিটন মিরাজ ওদের শাসন করে দলকে পতনের কালো গুহা থেকে আলোর পথে নিয়ে যায়। প্রশংসা করতেই হবে পরিবর্তিত বাংলাদেশের কিছুতেই হার না  মানা মানসিকতার।  আজ খেলাটিতে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। জানিনা বৃষ্টি খেলায় কিভাবে প্রভাব ফেলবে। ইতিহাস সৃষ্টির দুয়ারে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। লিটন, মিরাজের মহাকব্যিক জুটির পর টেস্ট হেরে যাওয়া হবে প্রকৃতির অবিচার।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

16 − two =