শত কোটির তারকা

মাধবী লতা

সম্প্রতি ২০২৪ সালে বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের নতুন তালিকা প্রকাশ করেছে মার্কিন আলোচিত সাময়িকী ফোর্বস। কে কে আছেন এই তালিকায়? দেখে নিন আপনার কোনো প্রিয় তারকা এই তালিকায় আছেন কি না! জেনে নিতে পারেন তার আয়ের পরিমাণ। শতকোটি আয় ছাড়ানো এসব তারকারা কারা? এই তালিকায় ৭৮টি দেশের ২ হাজার ৭৮১ জন বিলিয়নিয়ারের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। এই তালিকায় নাম আসা বিনোদন জগতের তারকাদেরও গত এক বছরের সম্পদের পরিমাণ প্রকাশ করেছে ফোর্বস। গতবার না পেলেও এবারের তালিকায় স্থান পেয়েছেন টেইলর সুইফট। এছাড়াও আছেন আর অ্যান্ড বি, রিয়ান্না সহ অনেকেই। তবে তারকাদের মাঝে সবচেয়ে ধনী যিনি, তার সম্পদের পরিমাণ ৫.৫ বিলিয়ন ডলার।

সবচেয়ে ধনী জর্জ লুকাস

তারকাদের মাঝে সবচেয়ে ধনী স্টার ওয়ার্স নির্মাতা জর্জ লুকাস, তার সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৫.৫ বিলিয়ন ডলার। মূলত তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘লুকাস ফিল্মস’-এর কারণেই এত ধনী তিনি। জর্জ লুকাসের জন্ম ১৯৪৪ সালের ১৪ মে। তিনি মার্কিন চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক। তিনি ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়াতে ছাত্র থাকার সময় তৈরি টিএইচএক্স ১১৩৮ নামক চলচ্চিত্রের জন্য সর্ব প্রথম সমালোচকদের নজর কাড়েন। পড়ালেখা শেষে লুকাস ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলার সাথে মিলে আমেরিকান জোয়িট্রোপ নামের চলচ্চিত্র প্রযোজনা কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের প্রথম প্রয়াস ‘আমেরিকান গ্রাফিটি’ মার্কিন চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র বলে অভিহিত হয়েছে। ১৯৭৭ সালে লুকাস নির্মাণ করেন তখনকার দিনের সবচেয়ে ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র ‘স্টার ওয়ার্স-দি নিউ হোপ’। এই চলচ্চিত্র ও তার সিকুয়েল ‘এম্পায়ার স্ট্রাইক্স ব্যাক’ ও ‘রিটার্ন অফ দি জেডাই’ ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র সিরিজ। নব্বই দশকে লুকাস তার স্টার ওয়ার্স ভিত্তিক চলচ্চিত্র সিরিজের প্রিকোয়েল বা পূর্বকাহিনীর তিনটি চলচ্চিত্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। এই ধারায় তৈরি হয় ‘দি ফ্যান্টম মিনেস’, ‘এটাক অফ দি ক্লোন্স’ এবং ‘রিভেঞ্জ অফ দি সিথ’।

স্টিভেন স্পিলবার্গ

জর্জ লুকাসের পরেই আছে স্টিভেন স্পিলবার্গের নাম। এই গুণী নির্মাতার সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৪.৮ বিলিয়ন ডলার। স্টিভেন অ্যালান স্পিলবার্গের জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর। তিনিও একজন সফল মার্কিন চলচ্চিত্র পরিচালক এবং প্রযোজক। তিনি তিনবার একাডেমি পুরস্কার লাভ করেছেন এবং চলচ্চিত্র নির্মাণ করে সর্বকালের সবচেয়ে বেশি অর্থ উপার্জনকারী হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন। আন্তর্জাতিকভাবে তার চলচ্চিত্র থেকে মোট আয় প্রায় ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ফোর্বস সাময়িকীর তথ্য অনুযায়ী স্পিলবার্গের নেট লাভ হয়েছে ৩ বিলিয়ন ডলার। ২০০৬ সালে প্রিমিয়ার নামক চলচ্চিত্র সাময়িকী তাকে চলচ্চিত্রে শিল্পের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। স্পিলবার্গের চলচ্চিত্র জীবন প্রায় চার দশকের। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি ভিন্ন ভিন্ন অনেকগুলো ধরন নিয়ে কাজ করেছেন। ১৯৭০, ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকের সর্বোচ্চ অর্থ উপার্জনকারী তিনটি চলচ্চিত্রেরই নির্মাতা তিনি। এই চলচ্চিত্র তিনটি হল যথাক্রমে জস, ইটি দ্য এক্সট্রা-টেরেস্ট্রিয়াল এবং জুরাসিক পার্ক। চলচ্চিত্র জীবনের প্রথম দিকে তিনি যেসব বিজ্ঞান কল্পকাহিনীমূলক এবং অ্যাডভেঞ্চার চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন সেগুলোকে হলিউডের আধুনিক ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্রের আর্কটাইপ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

মাইকেল জর্ডান

তালিকার তৃতীয় স্থানে আছে মাইকেল জর্ডানের নাম। নাইকির জর্ডান ব্র্যান্ডের জন্যই মূলত এত অর্থ উপার্জন করেছেন তিনি। এছাড়াও অন্যান্য ব্র্যান্ড পার্টনারশিপ থেকে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করেন। মাইকেল জেফরি জর্ডানের জন্ম ১৯৬৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন পেশাদারী বাস্কেটবল খেলোয়াড়। তিনি তার প্রজন্মের সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাথলিট এবং বিশ্বজুড়ে এনবিএ-র খ্যাতি ছড়িয়ে দিতে ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বর্তমানে তিনি শার্লট ববক্যাট্স নামক বাস্কেটবল দলের আংশিক মালিক।

অপরাহ উইনফ্রে

এর পরেই আছেন অপরাহ উইনফ্রে। যার সম্পদের পরিমাণ ২.৮ বিলিয়ন। অপরাহ গেইল উইনফ্রে’র জন্ম ১৯৫৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। তিনি একজন জনপ্রিয় মার্কিন টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব। টক শো-এর উপস্থাপক হিসেবে তিনি ১৯৮০ এর দশকের মধ্যভাগ হতে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তিনি ওপ্রা নামেই সমধিক পরিচিত। আন্তর্জাতিকভাবে বিস্তৃত টক শো ‘দ্য অপরাহ উইনফ্রি শো’ এর জন্য পান একাধিক এমি পুরস্কার। নিজে ম্যাগাজিন প্রকাশের পাশাপাশি তিনি একজন শক্তিমান সাহিত্য সমালোচক এবং একাডেমি পুরস্কার মনোনীত অভিনেত্রী। তিনি বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে ধনী আফ্রিকান মার্কিন, উত্তর আমেরিকার প্রথম কোটিপতি। ২০১৩ সালে মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা তাকে রাষ্ট্রপতি পদক এবং ডিউক ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে।

জে-জেড

জে-জেড এর সম্পদের পরিমাণ  ২.৫ বিলিয়ন।  জে-জেড এর জন্ম ১৯৬৯ সালের ৪ ডিসেম্বর। তিনি একজন আমেরিকান র‌্যাপার এবং উদ্যোক্তা। নব্বই দশকের প্রথম দিকে হিপ-হপের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। জে-জেড এবং  দুই বন্ধু প্রথম অ্যালবাম প্রকাশের জন্য তাদের নিজস্ব কোম্পানি, রক-এ-ফেলা রেকর্ডস প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের প্রথম অ্যালবাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক মিলিয়নেরও বেশি বিক্রি হয়েছিল। এরপর একের পর এক চমক দিয়ে গেছেন। ২০২৩ সালে তিনি বিলবোর্ড এবং ভাইব দিয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ র‌্যাপার হিসেবে মনোনীত হন। এছাড়া  তিনি ডিফ-এর প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

কিম কার্দাশিয়ান

কিম কার্দাশিয়ানের সম্পদের পরিমাণ ১.৭ বিলিয়ন। কিম্বার্লি নোয়েল কার্দাশিয়ানের জন্ম ২১ অক্টোবর, ১৯৮০ সালে। তিনি একজন মার্কিন রিয়েলিটি টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব, অভিনেত্রী, সমাজকর্মী, ব্যবসায়ী এবং মডেল। তিনি লস এঞ্জেলেসে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই বেড়ে ওঠেন। কিপিং আপ-এর সাফল্যের পরে তিনি আসেন ‘কোর্টনি এন্ড কিম টেইক নিউইয়র্ক’ এবং ‘কোর্টনি এন্ড কিম টেইক’ মায়ামিতে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিজের পরিচয়ে কিছু ব্যবসা পরিচালনা করে চলেছেন। যেমন মোবাইল গেইম, মেকআপ পণ্য, এবং ২০১৫ এ ছবির বই সেলফিস। সবোর্চ্চ বেতন প্রাপ্ত টেলিভিশন রিয়েলিটি ব্যক্তিত্বের মধ্যে তিনি সবার উপরে।

পিটার জ্যাকশন

পিটার জ্যাকশনের সম্পদের পরিমাণ ১.৫ বিলিয়ন। পিটার জ্যাকসনের জন্ম ৩১ অক্টোবর, ১৯৬১ সাল। নিউ জিল্যান্ডের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক তিনি। জে আর আর টোকিয়েন রচিত বিখ্যাত রূপকথার উপন্যাস ‘দ্য লর্ড অফ দ্য রিংস’ অবলম্বনে তিনি একাধারে তিনটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। দ্য লর্ড অফ দ্য রিংস চলচ্চিত্র ত্রয়ী নামে পরিচিত এই ছবিগুলোর মধ্যে শেষটির কারণে তিনি একাডেমি পুরস্কার লাভ করেছেন।

রিয়ান্না

রিয়ান্না’র সম্পদের পরিমাণ ১.৪ বিলিয়ন। রবেইন রিয়ান্না ফেন্টির জন্ম ২৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৮ সালে। তিনি একজন বার্বাডিয়ান গায়ক, গীতিকার এবং অভিনেত্রী। জন্ম সেন্ট মাইকেল, বার্বাডোসে এবং বেড়ে উঠেছেন ব্রিজটাউনে। তিনি প্রথম সংগীত জগতে প্রবেশ করেন ২০০৩ সালে প্রযোজক ইভান রজার্সের  ডেমো টেপে অংশগ্রহণ করে। পরে তিনি ডেফ জ্যাম রের্কডিংস এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। ২০০৫ সালে রিয়ান্না তার প্রথম স্টুডিও অ্যালবাম মিউজিক অব দ্য সান এবং আ গার্ল লাইক মি (২০০৬) প্রকাশ করে খ্যাতি অর্জন করেন। এরপর তাক লাগিয়েছেন অনেক কাজ করে।

টাইগার উডস

টাইগার উডস এর সম্পদের পরিমাণ ১.৩ বিলিয়ন। এলদ্রিক টন্ট ‘টাইগার’ উড এর জন্ম ডিসেম্বর ৩০, ১৯৭৫ সালে। তিনি একজন মার্কিন পেশাদারি গলফার এবং সর্বকালের সেরা গলফার। উডস ক্যালিফোর্নিয়ার সাইপ্রেসে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আর্ল ও মাতা কুলটিল্ডা উডস। তিনি এই দম্পতির একমাত্র সন্তান।

ম্যাজিক জনসন

ম্যাজিক জনসন এর সম্পদের পরিমাণ  ১.২ বিলিয়ন।  ম্যাজিক জনসনের জন্ম ১৯৫৯ সালের ১৪ আগস্ট। তিনি একজন আমেরিকান ব্যবসায়ী এবং সাবেক পেশাদার বাস্কেটবল খেলোয়াড়। জনসন এনবিএ ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত। ১৩ মৌসুমের জন্য জনসন লেকার্সে খেলেছেন।

টেইলর সুইফট

টেইলর সুইফটের সম্পদের পরিমাণ ১.১ বিলিয়ন। টেইলর অ্যালিসন সুইফট এর জন্ম ১৩ ডিসেম্বর, ১৯৮৯ সালে। তিনি একজন গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী মার্কিন কান্ট্রি সংগীত শিল্পী, গীতিকার, প্রযোজক এবং অভিনেত্রী। টেইলর সুইফটের জন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায়। সুইফটের অ্যালবাম ফিয়ারলেস যুক্তরাষ্ট্রে ১১ নভেম্বর ২০০৮ সালে মুক্তি পায়। মুক্তি পাওয়ার সাথে সাথেই অ্যালবামটি বিলবোর্ড অ্যালবাম তালিকার শীর্ষস্থান দখল করে। অ্যালবামটির ৫৯২,৩০৪ কপি বিক্রি পরিমাণ ২০০৮ সালের অন্য যেকোন কান্ট্রি সংগীত শিল্পীর প্রকাশিত অ্যালবামের চেয়ে বেশি।

উল্লেখ্য, ফোর্বসের সর্বশেষ এই তালিকায় ২৩৩ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে প্রথম স্থানে রয়েছেন ফ্রান্সের ধনকুবের বার্নার্ড আর্নল্ট। ১৯৫ বিলিয়ন ডলার নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ইলন মাস্ক এবং ১৯৪ বিলিয়ন ডলার নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন জেফ বেজস।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: হলি বলি টলি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

five × 2 =