শতাব্দীর সেরা টেস্ট সিরিজ :  ক্রিকেটের প্রাচীনতম সংস্করণের সঞ্জীবনী সুধা

বিশ্ব ক্রিকেটের দুই মোড়ল ভারত ইংল্যান্ডের মধ্যে সদ্য শেষ হওয়া ৫ ম্যাচের টেন্ডুলকার – অ্যান্ডার্সন টেস্ট সিরিজ শেয়ানে শেয়ানে রুদ্ধশাষ  লড়াই শেষে ২-২ সমতায় শেষ হয়েছে। ইংল্যান্ড প্রথম টেস্ট জয়ের পর ভারত দ্বিতীয় টেস্ট জিতে ১-১ সমতা আনে। ক্রিকেট মক্কা লর্ডসে অনুষ্ঠিত তৃতীয় টেস্ট জিতে ইংল্যান্ড ২-১ এগিয়ে যাবার পর ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে অধিকাংশ সময় ইংল্যান্ড এগিয়ে ছিল। ভারত দারুন লড়াই লড়াই সম্মানজনক ড্র অর্জন করায় লন্ডনের ওভালে শেষ টেস্টের আগে ইংল্যান্ড এগিয়ে ছিল ২-১।  টেস্টের চতুর্থ দিন পর্যন্ত টেস্টের ব্যালেন্স ঝুকে ছিল স্বাগতিক ইংল্যান্ডের দিকেই। কিন্তু এই সিরিজে কখনো হার না মানা মানসিকতা নিয়ে খেলা ভারত পঞ্চম দিন সকালে যুদ্ধ করে টেস্ট জয় এবং ২-২ সমতায় সিরিজ শেষ করে। অনেক নতুন মাইল ফলক স্থাপনের এই সিরিজের ৫ টেস্টের প্রতিটি সেশন ছিল উত্তেজনা এবং আকর্ষণে টইটম্বুর। দুটি সমান শক্তির দলের ব্যাটে বলের যুদ্ধ বিশ্ব ক্রিকেট প্রেমিকরা চুটিয়ে উপভোগ করেছে। অনেকেই মানছেন শতাব্দীর সেরা টেস্ট সিরিজ দেখলো ক্রিকেট বিশ্ব।

সিরিজটি ২০২৫-২০২৭ আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ পর্বে  উভয় দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগের তিন পর্বে নিউজিল্যান্ডে,অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা হয়েছে চ্যাম্পিয়ন। ভারত দুইবার ফাইনাল খেললেও নিজেদের মাটিতে ইংল্যান্ড ছিল দর্শকের ভূমিকায়। ভারত এখন বিশ্ব ক্রিকেটের সব ফরম্যাটে দারুন শক্তিশালী দল। ব্যাটিং বোলিং উভয় ক্ষেত্রেই আছে নবীন প্রবীনের মনি কাঞ্চন যোগাযোগে শক্তিশালী ইউনিট। এতটাই শক্তিশালী যে সাম্প্রতিক সময়ের দুই কিংবদন্তি ভিরাট কোহলি আর রোহিত শর্মার অবসর গ্রহণ ভারত দলের ভারসাম্যে আদৌ প্রভাব ফেলেনি। যশোভি জয়সোয়াল, কে এল রাহুল, শুভমান গিল, জাদেজা, এমনকি ওয়াশিংটন সুন্দর ব্যাট হাতে দায়িত্ব পালন করেছে। সিরিজের মাঝপথে মারকুটে ঋষভ পান্ট ছিটকে পড়লেও অন্যরা সামাল দিয়েছে। শুভমান গিল ব্যাট হাতে নিজেকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।

ভারতের এক্স ফ্যাক্টর জাসপ্রিত বুমরার ওয়ার্ক লোড ম্যানেজমেন্ট অনুভব করতে দেয়নি মোহাম্মদ সিরাজ, প্রসিড কৃষ্ণা, আর্শদীপ, আকাশ দ্বীপ। ওপর ক্স-ফ্যাক্টর কুলদীপ যাদবকে ব্যবহার করেনি ভারত। প্রথম পূর্ণাঙ্গ সিরিজে শুভমান গিলকে অধিনায়ক হিসাবে মনে ধরেছে।

অপরদিকে ইংল্যান্ড নিজেদের বাজ বল কৌশল সময় সুযোগ মত প্রয়োগ করেছে দক্ষতার সঙ্গে, জ্যাক ক্রলি, বেন ডাকেট, অলি পপ, হ্যারি ব্রুক দক্ষতার সঙ্গে ব্যাটিং করলেও ইংল্যান্ড বাটিংয়ের প্রাণ ভ্রমরা জো বূট নতুন মাইল ফলক অর্জন করে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। তবে ইংল্যান্ডের বোলিং কিছুটা খর্ব শক্তির।  ইংল্যান্ডের বোলিং খামতি অনেকটাই পুষিয়ে দিয়েছে চৌকষ অধিনায়ক বেন স্টোকস। তবে দুই দলের ভারসাম্য ছিল সমান পর্যায়ের। সিরিজের ২-২ সমতা প্রমান করে সিরিজের শেয়ানে শেয়ানে লড়াই।

সিরিজের চারটি টেস্ট ৫ দিনের ১৫ সেশন পর্যন্ত জীবন্ত ছিল। শেষ টেস্ট নাটকীয় পরিণতি ঘটেছে ৫ম দিনে। বিশ্ব ক্রিকেটে ফ্যাঞ্চাইজ ক্রিকেটের দাপটে যখন টেস্ট ক্রিকেট বর্ণ হীন হয়ে পড়ছিলো তখন এই টেস্ট সিরিজ উপহার দিলো নতুন সঞ্জীবনী সুধা। এমনি টেস্ট সিরিজ নিয়মিত হতে হলে দুই স্তরের টেস্ট ক্রিকেট হয়ত যথার্থ। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউ জিল্যান্ড, ইংল্যান্ড এই পাঁচ দলের সঙ্গে বাকি দলগুলোর এখন পার্থক্য সুস্পষ্ট।  তবে এটাও ঠিক বাকি দলগুলো পর্যাপ্ত সুযোগ পাচ্ছে না অর্থাভাব এবং ঘরোয়া ক্রিকেটের মান ক্রমান্বয়ে নিম্ন গতির কারণে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

six + 8 =