চয়নিকা চৌধুরী দেশের অন্যতম নাট্য নির্মাতা। টেলিভিশনের তার প্রথম প্রচারিত নাটক এক জীবনে। এটি তারই লেখা নাটক। চয়নিকার লেখা প্রথম স্ক্রিপ্ট নিয়ে ১৯৯৮ সালে বোধ নামের নাটক তৈরি করেন মাহফুজ আহমেদ। এতে অভিনয় করেছিলেন শমী কায়সার ও মাহফুজ আহমেদ। ২০০১ সালে থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত চয়নিকা চৌধুরী নির্মাণ করেছেন ১২টি ধারাবাহিক নাটক এবং নাটক ও টেলিফিল্ম নির্মাণ করেছেন ১৯৩টি। টিভি চ্যানেলগুলোতে দেড়শ’ নাটক প্রচার হয়েছে একজন নারী নির্মাতার মধ্যে তিনি শীর্ষে আছেন। পাশাপাশি একটি বিশেষ দিবসে একজন নারী নির্দেশকের একসঙ্গে নয়টি নাটক প্রচার হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে চয়নিকা চৌধুরীর ক্ষেত্রে। তিনি নাটক লেখা শুরু করেন ১৯৯৫ সালে। নাটক পরিচালনা শুরু করেন ২০০১ সালে। আজ ১লা ডিসেম্বর এই গুণী নির্মাতার জন্মদিন।
বাংলাদেশের নাট্যপরিচালক হিসেবে চয়নিকা চৌধুরী একটি জনপ্রিয় নাম। পুরুষ শাসিত এই ইন্ডাস্ট্রিতে একজন নারী নির্মাতা হিসেবে নিজের দক্ষতা এবং মেধার প্রমাণ দিয়ে এসেছেন তিনি সেই প্রথম থেকেই। এই সময়ে এসে নারী নির্মাতাদের মধ্যে শীর্ষে আছেন একথা চোখ বন্ধ করেই বলা যায় সাথে সাথে দেশের জনপ্রিয় এবং দক্ষ পরিচালকদের লিস্টেও তার নাম উপরের দিকেই থাকবে। একক নাটকের নির্মাতা হিসেবে ৪০০ এর বেশি নাটক পরিচালনা করে অন্যন্য এক দৃষ্টান্ত তৈরী করেছেন তিনি।
বিগত দুই দশক ধরে অবিরাম কাজ করে চলেছেন চয়নিকা চৌধুরী। বিশেষ করে রোমান্টিক এবং সাহিত্যনির্ভর গল্পের নাটকে তিনি একজন অসাধারন পরিচালক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এতোটা সময় ধরে কাজ করার পরে এই সময়ে এসেও সাধারন মানুষের রুচি, মধ্যবিত্তের আবেগ খুব সহজেই ছুঁয়ে যেতে পারেন বলেই এখনো হাজার নির্মাণের ভিড়ে তার কাজগুলো আলাদা মর্যাদা পায়। ঈদ কিংবা বিশেষ দিনের নাটক, টেলিফিল্ম মানেই যে পরিচালকের নামটি বিশেষ ভাবে উচ্চারিত হবেই তিনি চয়নিকা চৌধুরী।
২০০১ সালের নিরিখে নারী নির্মাতা হিসেবে যাত্রা শুরু করাটা মোটেও সহজ বা সুখকর ছিলো না। তবুও নাটকের পরিচালক হিসেবে কাজ করার ইচ্ছা এবং ভালোবাসা তাকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে যেয়ে চয়নিকা চৌধুরী নিজেই জানালেন যে, এই দুই দশক ধরে কাজ করে যাওয়াটাই তো একটা বিশাল গল্প। মান বজায় রেখে, গল্প নির্বাচন এবং চরিত্রে সাথে মানিয়ে যাওয়া শিল্পীদের সাথে নিয়ে টেলিফিল্ম বা ধারাবাহিক ছাড়াই ৪০০ এর বেশি নাটক পরিচালনা করার অনুভূতি আসলে এককথায় বলে বা লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। এই অনুভূতি প্রচন্ড আনন্দের এবং একই সাথে অনেক ত্যাগ,কষ্ট এবং পরিশ্রমের ফসল।
টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে এই রকম সাফল্য বা প্রাপ্তি লাভের সময়ে তিনি আলাদাভাবে স্মরণ করেন লাইট এন্ড শ্যাডোর মুজিবর রায়হান, অ্যাড মিডিয়ার জায়েদান রাব্বি এবং তার ছোট বোন বাংলাদেশের অন্যতম দক্ষ এবং জনপ্রিয় অভিনেত্রী তমালিকা কর্মকারকে।
ব্যক্তিজীবনে খুবই সাধারণ জীবন-যাপনে অভ্যস্ত চয়নিকা চৌধুরী ছোটবেলায় গান ও নাচ শিখেছেন মায়ের উৎসাহে। ছায়ানট থেকে গান শিখে শান্তিনিকেতনে গানের কোর্স করেছেন। স্বামী, সংসার, ছেলে, মেয়ে নিয়েই তার ব্যক্তিজীবনের ব্যস্ততা। সেখানেও একজন সফল স্ত্রী, সফল মা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি।