টাইগার বোলারদের ইনিংস সূচনাটা ছিল প্রথম ম্যাচের মতোই। শুরুতেই কয়েকটি উইকেট হারিয়ে জিম্বাবুয়েকে চাপে ফেলা। পরপর দুই ম্যাচে স্বাগতিকরা সেই চাপ ঠিকই সামলে উঠেছিল। ব্যাটাররা পেয়েছিলেন সেঞ্চুরি। তারা জিতে নিয়েছে সিরিজ। তবে শেষ ম্যাচে আর রক্ষা হয়নি রোডেশিয়ানদের। বাংলাদেশের বোলারদের সেই চাপ আর সামলে উঠতে পারলেন না সিকান্দার রাজারা। অভিষিক্ত এবাদত ও মোস্তাফিজের তোপে হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে। র্যাংকিংয়ে ১৫ নম্বরে থাকা জিম্বাবুয়ের কাছে হোয়াইটওয়াশ থেকে রক্ষা পেয়েছে বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচটি তারা জিতেছেন ১৫৪ রানে।
ইনিংসের শুরুটা হাসান মাহমুদের। তার করা বলটি ভেতরের দিকে ঢুকেছিল। বলটা আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে মিস করে গিয়েছিলেন তাকুদজোয়ানাশে কাইতানো। হয়েছেন এলবিডব্লু। একটু দেরি করেই হাত তুললেন আম্পায়ার। প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। মেহেদী হাসান মিরাজ এসেছেন দ্বিতীয় ওভারে। সফলও হলেন। ক্রিজ ছেড়ে তেড়েফুড়ে এসে খেলতে গিয়ে বলের লাইন পুরোপুরি মিস করে গেছেন মারুমানি। অফ স্টাম্প হারিয়েছেন তিনি, ফিরেন ১ রান করেই।
প্রথম ওয়ানডেতেও প্রথম ২ ওভারেই ২ উইকেট হারিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। ৩০৩ রান তাড়ায় সে ম্যাচ অবশ্য তারা জিতেছিল ৫ উইকেটে।
এবাদত হোসেনের বাড়তি বাউন্সে ভড়কে গিয়েছিলেন ওয়েসলি মেধেভেরে। তাঁর ব্যাটের কাঁধে লেগে বল গেল পয়েন্টে। মিরাজ ভুল করেননি। এবাদত ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেট পেয়ে গেলেন তাতেই। এরপর এল তাঁর স্যালুট উদ্যাপন। টেস্ট ক্রিকেটে যে দৃশ্য মোটামুটি পরিচিত, এবার সেটা দেখা গেল ওয়ানডেতেও। জিম্বাবুয়ে তৃতীয় উইকেট হারাল ১৮ রানেই।
দ্রুত তিন উইকেট হারানো জিম্বাবুয়ে স্বাভাবিকভাবেই চাপে। সেই চাপ সামলাতেই যেন ক্রিজে এলেন সিকান্দার রাজা। কিন্তু সিরিজে জিম্বাবুয়ের নায়ক টিকলেন মাত্র ১ বল! এবাদত করলেন দারুণ ইয়র্কার, যেটির জবাব ছিল না ম্যাচে জিম্বাবুয়ের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের। আগের দুই ম্যাচেই অপরাজিত থেকে ম্যাচ জেতানো রাজা এবার ফিরলেন ‘গোল্ডেন ডাক’ সঙ্গী করে। অভিষেকেই হ্যাটট্রিকের সামনে ছিলেন ইবাদত। হ্যাটট্রিক বলে আবার স্ট্রাইকে ছিলেন আরেক অভিষিক্ত—ক্লাইভ মাদান্দে। যদিও সেটি ছিল নো বল।
তখনও ক্রিজে টিকেছিলেন ইনোসেন্ট কাইয়া। প্রথম ম্যাচের এই সেঞ্চুরিয়ানের আজ ছিল জন্মদিন। তাই রাজার বিদায়ে জন্মদিন উপলক্ষ্যের একটা মাধ্যমও এসেছিল। কিন্তু জন্মদিনে খুব বেশিক্ষণ টিকলেন না কাইয়া। তাইজুল ইসলামের আর্ম বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান তিনি। ষষ্ঠ উইকেটটিও আসে তাইজুলের বলে। ফ্লাইটের সঙ্গে ছিল টার্নও দিয়েছিলেন। বলের নাগালই পাননি টনি মুনিয়োঙ্গা। বাকি কাজটা সহজেই সেরেছেন মুশফিকুর রহিম। আক্রমণ করতে গিয়ে ফিরে গেলেন মুনিয়োঙ্গা।
চোট কাটিয়ে একাদশে ফেরা মোস্তাফিজ বোলিংয়ে আসেন পাওয়ার প্লের শেষে। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই প্রথম উইকেট পেয়ে যান মোস্তাফিজ। বাউন্সারে লেগ সাইডে খেলতে গিয়েছিলেন লুক জঙ্গুয়ে, তবে বল গেছে অফ সাইডে, কাভারে। পরের ওভারেও আরও একটি শর্ট বল দিয়েছিলেন মোস্তাফিজ। ক্লাইভ মান্দাদে সেটি তুলে মেরেছিলেন। ক্যাচ ধরে তাকে ফেরান মুশফিকুর রহিম। শর্টবলের পর ফিজের ট্রেডমার্ক স্লোয়ার বল। তাতেই লিডিং এজড ব্র্যাডলি এভান্স। পয়েন্টে ক্যাচ নিয়েছেন মিরাজ।
৮৩ রানে ৯ উইকেট হারানো জিম্বাবুয়ের তখন টার্গেট কেবল তিন অঙ্কের রান স্পর্শ করা। সেটাই করলেন রিচার্ড এনগারাভা ও ভিক্টর নিয়াউচি। তারা গড়েন ৬৮ রানের এক জুটি। ভয়ংক হয়ে ওঠা এই জুটিটা অবশেষে ভাঙেন মোস্তাফিজ। এনগারাভা অপরাজিত থাকেন ৩৪ রানে। ২৭ রান তুলে নিয়াউচি আউট হলে ১৫১ রানে থামে জিম্বাবুয়ে। ১০৫ রানের সহজ জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।
টাইগারদের হয়ে মোস্তাফিজ চারটি, এবাদত ও তাইজুল দুটি এবং মিরাজ ও হাসান মাহমুদ নেন একটি করে উইকেট।
দেশ রূপান্তর