শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে পাকিস্তানকে ১ উইকেটে হারিয়ে শীর্ষে উঠলো দক্ষিণ আফ্রিকা

চেন্নাই, ২৭ অক্টোবর ২০২৩ (বাসস) : ওয়ানডে বিশ্বকাপের ২৬তম ম্যাচে পাকিস্তানের ছুঁড়ে দেয়া ২৭১ রানের টার্গেটে ২৬০ রানে নবম উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ১১ রান তুলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে অবিস্মরনীয় জয় এনে দেন কেশব মহারাজ ও তাবরাইজ শামসি। নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে আজ দক্ষিণ আফ্রিকা ১ উইকেটে হারায় পাকিস্তানকে। বিশ^কাপ  ইতিহাসে সপ্তমবারের মত কোন দল ১ উইকেটে ম্যাচ জিতলো। এরমধ্যে দু’বার বিজয়ী দলের তালিকায় নাম আছে প্রোটিয়াদের। পরাজিত দলের তালিকায় দু’বার নাম আছে পাকিস্তানের।

এই জয়ে ৬ খেলায় ১০ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে এগিয়ে থেকে টেবিলের শীর্ষে উঠলো দক্ষিণ আফ্রিকা। ৫ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে পিছিয়ে টেবিলে দ্বিতীয়স্থানে নেমে গেল স্বাগতিক ভারত। ৬ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ষষ্ঠস্থানেই থাকলো পাকিস্তান। এই হারেও পাকদের সেমির আশা অনেক যদি’র উপর টিকে আছে।

অধিনায়ক বাবর আজম ও সৌদ শাকিলের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৪৬ দশমিক ৪ ওভারে ২৭০ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। বাবর ৫০ ও শাকিল ৫২ রান করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার শামসি ৪ উইকেট নেন। জবাবে মার্করামের ৯১ রানে ১৬ বল বাকী রেখে ১ উইকেটে জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

চেন্নাইতে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্বান্ত নেয় পাকিস্তান। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার মার্কো জানসেনের তোপে সপ্তম ওভারে ৩৮ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারায় পাকিস্তান। আব্দুল্লাহ শফিক ৯ ও ইমাম উল হক ১২ রান করে আউট হন।

শুরুর ধাক্কা সামলে উঠতে সতীর্থদের নিয়ে বড় জুটির গড়ার চেষ্টা করেন বাবর। তৃতীয় উইকেটে মোহাম্মদ রিজওয়ানকে নিয়ে ৪৮ ও চতুর্থ উইকেটে ইফতিখার আহমেদের সাথে ৪৩ রান যোগ করেন বাবর।

বাবর-রিজওয়ানের জুটিতে ভাঙ্গন ধরান দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার জেরাল্ড কোয়েৎজি। ২৭ বলে ৩১ রান করা রিজওয়ানকে শিকার করেন তিনি। ২১ রান করা ইফতিখারকে শিকার করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন শামসি।

ইফতিখার ফেরার পর ওয়ানডেতে ওয়ানডেতে ৩১তম হাফ-সেঞ্চুরি করেন ৬৪ বল খেলা বাবর। অর্ধশতক পূর্ন করেই সেখানেই শামসির দ্বিতীয় শিকার হয়ে থামেন  বাবর। ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৬৫ বলে ৫০ রান করেন পাক অধিনায়ক।

১৪১ রানে পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে বাবর ফেরার পর উইকেট পতন ঠেকান শাকিল ও শাদাব খান। ষষ্ঠ উইকেটে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে রানের গতি বাড়ান তারা। হাফ-সেঞ্চুরির জুটি সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যাচ্ছিলো। তবে ৪০তম ওভারে শাদাবকে থামিয়ে জুটি ভাঙ্গেন কোয়েৎজি। ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৬ বলে ৪৩ রান করেন শাদাব।

পরের ওভারে থামেন শাকিল। ৫০ বলে ওয়ানডেতে তৃতীয় অর্ধশতক পূর্ণ করে শামসির তৃতীয় শিকারে পরিনত হন শাকিল। ৭টি চারে ৫২ বলে ৫২ রান করেন শাকিল।

২৪০ রানে সপ্তম ব্যাটার হিসেবে শাকিল আউট হবার পর মোহাম্মদ নাওয়াজের দৃঢ়তায় ৪৬ দশমিক ৪ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২৭০ রান পর্যন্ত যেতে পারে পাকিস্তান। ১টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৪ বলে ২৪ রান করেন নাওয়াজ। এ ম্যাচে ৪৫ রানে শেষ ৫ উইকেট হারায় পাকিস্তান।

দক্ষিণ আফ্রিকার শামসি ১০ ওভারে ৬০ রানে ৪ উইকেট শিকার করেন। জানসেন ৪৩ রানে ৩টি ও কোয়েৎজি ৪২ রানে ২ উইকেট নেন।

২৭১ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে পাকিস্তানের বোলারদের উপর চড়াও হন দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার কুইন্টন ডি কক। এতে ৩ ওভারে ৩৪ রান পেয়ে যায় প্রোটিয়ারা। চতুর্থ ওভারে ডি কককে থামান পাকিস্তানের পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি। ৫টি চারে ১৪ বলে ২৪ রান করেন এবারের আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ডি কক।

দ্বিতীয় উইকেটে জুটি গড়ার চেষ্টায় বেশি দূর যেতে পারেননি আরেক ওপেনার অধিনায়ক তেম্বা বাভুমা ও রাসি ভ্যান ডার ডুসেন। ৩৩ রান যোগ হবার পর বাভুমাকে শিকার করে জুটি ভাঙ্গেন পাকিস্তানের পেসার মোহাম্মদ ওয়াসিম। আউট হওয়ার আগে  ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৮ রান করেন বাভুমা।

৬৭ রানে দুই ওপেনার ফেরার পর তৃতীয় উইকেটে ৫৪ বলে ৫৪ রান তুলেন ডুসেন ও মার্করাম। ডুসেনকে ২১ রানে বিদায় দিয়ে পাকিস্তানকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন পাকিস্তানের স্পিনার উসামা মীর। পাঁচ নম্বরে বিধ্বংসী ব্যাটার হেনরিচ ক্লাসেনকে ১২ রানের বেশি করতে দেননি ওয়াসিম। ১৩৬ রানে চতুর্থ উইকেট পতনে চাপে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা।

এ অবস্থায় জুটি বেঁধে পাকিস্তানের বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন মার্করাম ও ডেভিড মিলার। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলে দলের স্কোর ২শ পার করেন তারা। এই জুটিতেই ৫০ বল খেলে ওয়ানডেতে দশম হাফ-সেঞ্চুরি করেন মার্করাম।

২টি করে চার-ছক্কা হাঁকানো মিলারকে ২৯ রানে বিদায় দিয়ে পাকিস্তানকে খেলায় ফেরার পথ দেখান আফ্রিদি। মার্করাম-মিলার   জুটিতে  ৬৯ বলে ৭০ রান যোগ করেন ।

মিলারের বিদায়ে উইকেটে আসেন জানসেন। ১৪ বলে ২০ রানের ইনিংস খেলে পেসার হারিস রউফের প্রথম শিকার হন জানসেন।

জানসেন ফিরলেও দক্ষিণ আফ্রিকার ভরসা হয়ে ক্রিজে ছিলেন মার্করাম। ৪১তম ওভারে সপ্তম ব্যাটার হিসেবে দলীয় ২৫০ রানে মীরের বলে বাবরকে ক্যাচ দিয়ে মার্করাম বিদায় নিলে  প্রোটিয়ারা চাপে পড়ে যায়।  সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও  ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৯৩ বলে ৯১ রান করে আউট হন  মার্করাম।

এরপর দলীয় ২৬০ রানে দক্ষিণ আফ্রিকার নবম উইকেট তুলে নিলে, পাকিস্তানের জয় সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু শেষ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ১১ রান তুলে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় নিশ্চিত করেন মহারাজ ও শামসি। চার রান দূরে থাকতে নাওয়াজের করা ৪৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি মারেন মহারাজ। শামসি ৪ ও মহারাজ ৭ রানে অপরাজিত থাকেন। পাকিস্তানের আফ্রিদি ৩টি, রউফ-ওয়াসিম ও মীর ২টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন শামসি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

পাকিস্তান : ২৭০/১০, ৪৬.৪ ওভার (শাকিল ৫২, বাবর ৫০, শামসি ৪/৬০)।

দক্ষিণ আফ্রিকা : ২৭১/৯, ৪৭.২ ওভার (মার্করাম ৯১, মিলার ২৯, আফ্রিদি ৩/৪৫)।

ফল : দক্ষিণ আফ্রিকা ১ উইকেটে জয়ী।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

nineteen − ten =