শ্রীলংকায় ‘উদীয়মান এশিয়ান ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপ’, বাংলাদেশের স্বপ্ন ভঙ্গ

সালেক সুফী

এশিয়ার ছায়া ক্রিকেট দলগুলো এসিসি উদীয়মান ক্রিকেট প্রতিযোগিতার ফাইনালে এখন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান এবং ভারত। স্বাভাবিকভাবেই দুনিয়া জোড়া ক্রিকেট অনুরাগীরা যে কোনো সময় পাকিস্তান ভারত মুখোমুখি দেখতে উদগ্রিব উন্মুখ।

কিন্তু কাল সুযোগ ছিল ভালো অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ দলের শক্তিশালী ভারত দলকে ধরাশায়ী করে ফাইনালে পৌঁছানোর। কিন্তু কিছুটা ত্রুটিপূর্ণ আম্পায়ারিং এবং অনেকটা ভারত জুজুর ভয়ে হেরে আবারো স্বপ্ন হয়েছে বাংলাদেশের। ভালো বোলিং ফিল্ডিং করে ভারত ইনিংস ২১১ সীমিত এবং ভালো ব্যাটিং শুরু করেও ১৬০ রানে সাঙ্গ হয়েছে বাংলাদেশ ইনিংস। পরাজয় ৫১ রানের।

অপর সেমি ফাইনালে ৩২২ রান করা পাকিস্তান দাপুটে জয় পেয়েছে ৬০ রানে স্বাগতিক শ্রীলংকা দলের বিরুদ্ধে। শ্রীলংকা করেছে ২৬২ রান। ফাইনালে মুখোমুখি দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত পাকিস্তান।

বাংলাদেশ -ভারত সেমি ফাইনাল

বাংলাদেশ এ দল নিয়ে অনেক প্রত্যাশা ছিল. ছায়া দলে অধিকাংশ খেলোয়াড় ছিল বাংলাদেশ মূল দলের প্রান্তিক খেলোয়াড়।  অধিকাংশ খেলোয়াড় হয় অনুর্ধ ১৯ জাতীয় দল অথবা জাতীয় দলে খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন।  বাংলাদেশ টস জয় করে শুরু থেকেই চেপে ধরেছিলো ভারতকে। নিয়মিত বিরতিতে পড়ছিলো ভারতের উইকেট।

স্পিনার যুগল রকিবুল হাসান (২/৩৬) এবং মেহেদী হাসান (২/৩৯), পাশাপাশি পেসার তানজিম হাসান শাকিব ২/৫৮ তুলে নেওয়ায় ভারতের ইনিংস ২১১ রানে গুটিয়ে যায়। ভারত দলের অধিনায়ক ইয়াশ ধুল (৬৬) এবং অভিষেক শর্মা (৩৪) ছাড়া অন্য কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেনি।

ভারতের ইনিংসে নিতিন জোস রাকিবুলের বলে পরিষ্কার স্টামপেড আউট  হবার পরেও সেই সিদ্ধান্ত পাল্টানো হলো। সেটি নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে। খেলার বিরতিতে কিন্তু ভাবা হয়েছিল সীমিত টার্গেট বাংলাদেশ সহজেই উৎরে যাবে। ভালো শুরু করেছিল বাংলাদেশ মোহাম্মদ নাঈম এবং তানজিদ হাসান তামিমের প্রথম উইকেট জুটিতে ১২.৪ ওভারে ৭০ রান তুলে। কিন্তু নাঈম (৩৮) এবং তামিম (৫১ ) আউট হবার পর আতংকিত হয়ে খেই হারিয়ে ফেললো বাংলাদেশ।

যে দলে জাকির, সাইফ, জয়, সৌম্য রয়েছে সেই দল নিশান সিঁধু (৫/২০) এবং মাধব সুতারের (৩/৩২) বাম হাতি স্পিনের সামনে তাসের ঘরের মতো ঝরে পড়লো। হয়তো জয় এবং সৌম্যের বেনিফিট অফ ডাউট পাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানরাও ভারতীয় জুজুর ভয়ে মুষড়ে পড়েছে বরে মনে হয়। প্রত্যাশী বাংলাদেশী ক্রিকেট অনুরাগীদের আরো একটি স্বপ্ন ভঙ্গ হলো।

ভালো খেলে জয় পেয়েছে পাকিস্তান

টস জয় করে ব্যাটিং বেছে শুরু থেকেই দাপটে খেলেছে পাকিস্তান শ্রীলংকার বিরুদ্ধে। রানের চাকা সচল রেখে ৩২২ রান সংগ্রহ করে কাজের কাজটি শেষ করেছে পাকিস্তানের ছায়া দল। ওমর ইউসুফ (৮৮), অধিনায়ক মোহাম্মদ হারিস (৫২) এবং মুবাসীর খান (৪২) ছাড়াও কয়েকজন ২০-২৫ রান  করে দলের বিশাল সংগ্রহে অবদান রাখে।

শ্রীলঙ্কান দলের পক্ষে এই বিশাল রান তারা করে ম্যাচ জয় করা সহজ ছিল না। বিশেষত পাকিস্তানী পেসার আরশাদ ইকবাল (৫/৩৭) নিয়মিত বিরতিতে উইকেট তুলে নিয়ে কাজটি কঠিন করে তুলেছিল। তবুও লড়াই করেছে শুরুতে অভিস্কা ফার্নান্দো (৯৭) এবং শেষদিকে শাহান আরাছ চিয়াগো (৯৭)। শ্রীলংকার ইনিংস শেষ হয় ২৬২ রানে। ৬০ রানের বিশাল জয় পায় পাকিস্তান।

কয়েকদিন পরেই এশিয়া কাপ।  সেখানেও প্রতাপশালী প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত পাকিস্তান। দুটি জনপ্রিয় দল ভূরাজনীতির কারণে এখন দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলছে না। তাই ক্রিকেট প্রেমিকরা মুখিয়ে থাকে কখন বৈষয়িক আসরে দল দুটি মুখোমুখি হবে।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

four × 5 =