আশির দশক থেকে যার গানের মূর্ছনা মাতিয়ে রেখেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। যার গানের কথা ছুয়েঁছে সব শ্রেনী পেশার মানুষের হৃদয়কে। যার গান শুনে এমনিতেই চলে আসে এক অজানা ভালো লাগা অনুভূতি। তিনি হলেন আমাদের সবার প্রিয় মাকসুদুল হক। ভক্তরা যাকে ভালোবেসে ডাকেন ‘ম্যাক’। উৎসব-পার্বণের সাথেও বিশেষভাবে জড়িয়ে গেছে এই নামটি। তার গাওয়া ‘মেলায় যাইরে’ গানটিকে বলা হয় বাংলা ব্যান্ডের অন্যতম এক মাইলফলক। শুধু রক ঘরানার গানই নয়, হৃদয়খোলা কণ্ঠে চলচ্চিত্রেও প্লেব্যাক করেছেন মাকসুদ। প্রেম, বিরহ, বিষাদ আর ভালোবাসায় অনেকের কাছেই তিনি যেনো এখনও এক আশ্রয়ের নাম।
ফিডব্যাক আর ঢাকা যাই হোক সঙ্গীতকে নিজের ইবাদত জ্ঞান করা মাকসুদুল হক তার প্রজন্মের সবচেয়ে ইর্ষনীয় অবস্থানে থেকেও সামজিক অনিয়ম, মাদক, মৌলবাদীতা, যুদ্ধাপরাধসহ সকল বিষয়কে গানের মাঝে এনে মানুষকে তার চোখে আঙ্গুল দিয়ে এর ভয়াবহতা দেখিয়ে গেছেন। বিপরীতে তার সমসাময়িক শিল্পীরা তখনও আমি তুমি আর জনপ্রিয়তা বাড়ানীয়া সঙ্গীত চর্চায় রত ছিলেন। কোনো সন্দেহ নেই এতে, তাদের চেয়ে মাকসুদের জনপ্রিয়তা কমেছে। কোনো সন্দেহ এতে মাকসুদ হারিয়েছে তার মিডিয়া গ্রহণযোগ্যতা। তারপরেও মাকসুদের আদতে কিছু হয়নি। মাকসুদের হারানোর কিছু নেই। মাকসুদের কোনো কোনো গান ইতিমধ্যে তার স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে দিয়েছে। সমাজ সচেতন মাকসুদ শুধু গানে নয় লেখায়ও তার বিশ্বাসের কথা প্রচার করে গেছেন নিরবিচ্ছিন্নভাবে। তার লেখা ‘আমি বাংলাদেশের দালাল বলছি’ সে স্বাক্ষর বহন করে।
তার সচেতন কলম সব সময়ই ছিল বয়সকেন্দ্রীক জুলুমের বিরুদ্ধে। তারুণ্য আর আধুনিকতার পক্ষে। দেশের কলুষিত রাজনৈতিক চর্চার বিপরীতে। অসামান্য বিবেচনাবোধ মাকসুদের সব কিছুকেই করেছে আলাদা। মৌলবাদীতা আর যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে এতো সরাসরি কোনো আক্রমণ মিডিয়ার কেউ সাহস করে দেখায়নি। বিরাগভাজন হবে জেনেও নিজেকে বৈচিত্র সন্ধান থেকেও দুরে রাখেনি। প্রধান প্রচার মাধ্যম থেকেও নিষিদ্ধ হয়ে আফসোস করতে দেখা যায়নি। বরং কণ্ঠ ছিল আরো উচ্চকিত। দমেননী নিপিড়ন আর অপপ্রচারেও। নিজেকে রেখেছেন নিজের আকণ্ঠ সাধনাতেই নিমজ্জিত।