সাগরিকায় আগাম বৈশাখী তান্ডব

সালেক সুফী: ব্যাট হাতে কাল বোশেখীর তান্ডব আর তার পর বৃষ্টি বিঘ্নিত সংক্ষিপ্ত খেলায় তাসকিন ঝড় লন্ড ভন্ড করে দিয়েছে গত সোমবার আয়ারল্যান্ডকে। রনি (৩৮ বলে ৬৭) আর লিটনের (২৩ বলে ৪৭) বাংলাদেশকে কাল টি-২০ সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়ার প্লাটফর্ম দিয়েছিল। হয়নি সেটি এক পর্যায়ে আইরিশ  নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে। তবুও বৃষ্টি ঝরার আগে ১৯.২ ওভারে ২০৭ বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ স্কোর ছিল। ব্যাটিং বজ্র নিনাদের পর আসলো বৃষ্টিধারা। বৃষ্টি আইনে ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে আয়ারল্যান্ডের  ৮ ওভারে পরিবর্তিত টার্গেট দাঁড়ালো ১০৪। আধুনিক ক্রিকেট অর্জন যোগ্য টার্গেট। কিন্তু পরিবর্তিত বাংলাদেশ যেন হারতে ভুলে গেছে। প্রথমে শুরু করেছিল হাসান মাহমুদ। এর পর অপ্রতিরুদ্ধ তাসকিন (৪/১৬) ধসিয়ে দিলো আয়ারল্যান্ডকে। ৫/৮১ করে ২২ রানে পরাজয় দিয়ে শুরু করলো টি ২০ মিশন। সাকিবের এক ওভার,  মেহেদী মিরাজের বাজপাখির মতো ক্যাচ, মুস্তাফিজের কিপ্টে শেষ ওভার কি ছিল না কাল। মনে হয় না পরিবর্তিত বাংলাদেশের হাতে সিরিজ পরাজয় এমনকি ধবল ধোলাই এড়াতে পারবে আয়ারল্যান্ড। জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডের সামনে খড়কুটা মনে হচ্ছে ওদের।

কাল আকাশে মেঘ ছিল। বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল। সিলেটে ওডিআই সিরিজে দাঁড়াতেই পারেনি সফরকারী আয়ারল্যান্ড তেজোদীপ্ত সুখের উল্লাসে উল্লসিত পরিবর্তিত বাংলাদেশের কাছে। ওদের হয়তো ছিল ঘুরে দাঁড়াবে টি ২০ সিরিজে। কাল শুরুতেই রনি লিটনের ব্যাটিং তান্ডব এলো মেলো করে দিয়েছিল আয়ারল্যান্ড বোলিং ফিল্ডিং। ৭.২ ওভারে দুইজনের যোগাযোগে আসলো ৯১ রান. দুইজন যেন আক্রমণাত্মক স্টোকস খেলায় একজন অন্যজনকে ছাড়িয়ে যাবার প্রতিযোগিতায় মেতেছিলো। ২৩ বলে ৪ টি চার আর ৩ ছয়ে ৪৭ রান করে ফিরেছিল লিটন। ৩৮ বলে ৬৭ রান করে ম্যাচ জয়ী রনি তালুকদারের ইনিংসে ছিল ৭ টি চার আর ৩ টি দৃষ্টি নন্দন ছয়ের মার। এমন দিনে শান্ত,  হৃদয় ছন্দ না পেলেও ৩০ রানের সংক্ষিপ্ত ইনিংসে জাত চিনিয়েছে শামীম পাটওয়ারী। সাকিব ১৩ বলে অপরাজিত ২০ রানের ইনিংসে ছিল ছন্দে। তবে বাংলাদেশ যে পেয়েছিলো সেখান থেকে ২৪০-২৫০ হতে পারতো। একসময় আয়ারল্যান্ড ভালো বোলিং করেছে। বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেই ১৯.২ ওভারে বাংলাদেশ করেছিল ৫/২০৭।

বৃষ্টি খেলাকে কেটে চিরে ৮ ওভারে সংক্ষিপ্ত করলো ডাকওয়ার্থ লুইসদের উদ্ভাবিত হিসেবে। আইরিশ টার্গেট ৮ ওভারে ১০৪। স্টার্লিং আর আদায়ের মারমূখী সূচনা করেছিল। কিন্তু তরুণ হাসান মাহমুদ প্রথম ওভারেই আদায়ারকে ফিরিয়ে দিয়ে গতি পাল্টে দিল। দুরন্ত তাসকিন প্রথম ওভারেই ৩ উইকেট নিয়ে স্তব্ধ করে দিল আইরিশ উৎসব। তাসকিনের দ্বিতীয় ওভারে মিরাজের ক্যাচটি ছিল চোখ চেয়ে দেখার মতো। সাকিব একটি মাত্র ওভার করে রান তরঙ্গ ছেদ করল। মুস্তাফিজ ছন্দে ফিরলো শেষ ওভারে। এতো কিছু যখন এক ম্যাচে হয় তখন প্রতিপক্ষের অসহায় আত্মসমপন ছাড়া কিই বা করার থাকে।

বাংলাদেশ ক্রিকেটে এই বসন্ত ধারাবাহিক হোক তাই চাই মনে প্রাণে।

সালেক সূফী, আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

eighteen + 8 =