ময়ূরাক্ষী সেন
সারাদিন ব্যস্ত সময় কাটিয়ে দিনশেষে ঘরে ফেরার কথা তো অনেক বলা হয়। কিন্তু আমাদের সারাদিনের বেশিরভাগ সময় কাটে কর্মস্থল বা অফিসে। জীবনে যতই ঝামেলা থাকুক না কেন অফিস থেকে কোনো মাফ নেই। ঘড়ির কাঁটা ধরে রোজ সকালে অফিসে যেতে হয় এবং সারাদিন নানা রকম স্ট্রেস নিয়ে কাজ করে বের হতে হয়। কিন্তু যে অফিসে আপনার কাটাতে হয় বেশিরভাগ সময় সে অফিসের ডেস্ক যদি থাকে অগোছালো কিংবা মনের মতো না হয় তাহলে কিন্তু কাজে মন দেওয়া হয়ে ওঠে মুশকিল। একটি সাজানো-গোছানো সুন্দর ডেস্ক কাজের প্রতি মোটিভেশন বাড়াতে পারে। তাই কেমন হতে পারে আপনার অফিস ডেস্ক তা নিয়ে রঙবেরঙের আয়োজন।
অফিসের ডেস্ক আপনি কিভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখবেন সেই স্বাধীনতা সব অফিসে দেওয়া থাকে। একটি সুন্দর ডেস্ক শুধু যে শুধু কাজের অনুপ্রেরণা বাড়াবে তা নয়, আপনার রুচি ও ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে।
এখন প্রযুক্তির যুগ। বেশিরভাগ কাজই স্মার্টফোন, পিসি কিংবা ল্যাপটপের মাধ্যমে করা হয়। কিন্তু যতই আধুনিক যুগ হোক না কেন, কলম খাতা পেন্সিল কখনওই অস্বীকার করতে পারবেন না। অফিস ডেস্ক মানেই সেখানে থাকবে নানা ধরনের স্টেশনারি। প্রয়োজনীয় সব স্টেশনারি যেমন কলম, পেন্সিল, পেপার, কাঁচি ইত্যাদি গুছিয়ে হাতের কাছে রাখার জন্য একটি বাস্কেট রাখতে পারেন। বাস্কেটের মধ্যে সব নির্দিষ্ট জিনিস রেখে দিলে কাজের সময় খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে। ডেস্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে প্লাস্টিকের বাস্কেট ব্যবহার না করে পাটের কিংবা কাঠের বাস্কেট রাখতে পারেন।
বাজারে এখন বিভিন্ন রঙের ও নকশার স্টেশনারি আইটেম পাওয়া যায়। আপনার ডেস্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে রঙিন নোটবুক এনে রাখতে পারেন। কালো ছাড়াও লাল, নীল, সবুজ রঙের কলম কিংবা সাইন পেন রাখতে পারেন। নোটবুকে আপনি পরের দিন সকালে অফিসে এসে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো আগে সেরে ফেলবেন তার তালিকা তৈরি করে রাখতে পারেন। এতে কাজ হবে গোছালো। যেহেতু এখন বেশিরভাগ কাজ ল্যাপটপে করতে হয় তাই টেবিলে ল্যাপটপ স্ট্যান্ড রাখতে পারেন। বসার চেয়ারটি যাতে আরামদায়ক হয় অবশ্যই সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তা না হলে দীর্ঘ সময় চেয়ারে বসে থাকার ফলে আপনার কোমর কিংবা পিট ব্যথা হতে পারে। অফিসের ফাইলপত্র গুছিয়ে রাখার জন্য একটি ফাইল হোল্ডার রাখুন। নিয়মিত বই এবং পেপার পড়ার অভ্যাস থাকলে একটি বাস্কেটের মধ্যে পেপার, কিছু বই এবং নানা ধরনের ম্যাগাজিন দিয়ে আপনার টেবিল সাজিয়ে রাখতে পারেন। এতে অফিস ডেস্কটি বেশ প্রোডাক্টিভ মনে হবে।
সাধারণভাবে অফিসে একটু স্ট্রেস ফুল পরিবেশ থাকে। কাজের ফাঁকে বিরতি নিয়ে ম্যাগাজিনের পাতায় চোখ বুলালে কিংবা পছন্দের বইয়ের কয়েক পাতা পড়লে হয়তো আপনার মন আবার ফুরফুরে হয়ে যেতে পারে। গান শোনার অভ্যাস থাকলে অবশ্যই টেবিল ডেস্ককে একটি হেডফোন রাখতে পারেন। কিছু হেডফোনে গানের সাউন্ড বাইরেও শোনা যায়, খেয়াল রাখুন আপনার হেডফোনে যাতে এ ধরনের সমস্যা না থাকে। এতে আপনার অন্য সহকর্মীরা বিরক্ত বোধ করতে পারে। আপনার ডেস্কের আশেপাশে একটু এয়ার ফ্রেশনার ছড়িয়ে দিতে পারেন। এতে আপনার ডেস্কের আশেপাশে স্নিগ্ধ সুগন্ধ বজায় থাকবে। প্রাকৃতিক সুগন্ধ চাইলে একটি মাটির ফুলদানিতে রজনীগন্ধা কিংবা দোলনচাঁপা ফুল এনে রেখে দিতে পারেন। এতে আপনার ডেস্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া ডেস্ককে মানিপ্লান্ট কিংবা ক্যাকটাসের মতো ছোট ইনডোর গাছ এনে রাখতে পারেন এতে আপনার ডেস্ক পাবে প্রকৃতির ছোঁয়া।
আপনার অফিস ডেস্কে আয়না ঝুলানোর ব্যবস্থা থাকলে সেখানে ছোট আয়না এনে রাখতে পারেন। বাজারে ছোট থেকে মাঝারি সাইজের বাহারি নকশার আয়না পাওয়া যায় তা যদি ডেস্ককে ঝুলিয়ে রাখেন তাতে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া সেখানে ঝুলিয়ে রাখতে পারেন ফটো ফ্রেম। মাটির তৈরি হাতি ময়ূর পেঁচা ইত্যাদি ডেস্কের কোনায় রেখে দিতে পারেন। এটা আপনার ডেস্কটি বেশ নান্দনিক লাগবে।
অফিসে অতিরিক্ত কাজের ফাঁকে একটু চা কফি না হলে যেন চলে না! চা কিংবা কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে একটি সুন্দর রঙিন মগ এনে রাখতে পারেন। এছাড়া আপনার যদি নিয়মিত কোনো ওষুধ গ্রহণ করতে হয় তাহলে মাথা ব্যথার ঔষধ, এলার্জির ঔষধ এমন প্রয়োজনীয় ঔষধ একটি বাস্কেট রেখে দিতে পারেন। এতে দরকার পড়লে সব ওষুধ হাতের কাছে পাবেন।
অফিস ডেস্ক যদি যদি গোছানো না থাকে এবং প্রয়োজনের সময় যদি কোনো কিছু পাওয়া না যায় তাহলে আপনার কাজের প্রতি অনুপ্রেরণা হারিয়ে যাবে এবং মেজাজ থাকবে খিটখিটে। লাঞ্চ বিরতিতে আপনি যদি ডেস্কে বসে খাওয়া-দাওয়া করেন তাহলে লক্ষ্য রাখবেন যাতে ডেস্ক অপরিষ্কার না হয়। তবে চেষ্টা করবেন অফিস ডেস্কে বসে খাওয়া দাওয়া না করতে। কারণ এর ফলে আপনার ডেস্কে পিঁপড়া কিংবা মাছি হতে পারে।
ডেস্কের বই কিংবা ফাইলপত্রে যাতে অতিরিক্ত ধুলাবালি জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মাঝে মধ্যে সুতির একটি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে আপনার ফাইলপত্র এবং বইপত্রগুলো মুছে নিতে পারেন। বইপত্রে কিংবা টেবিলের কোনায় ধুলোবালি জমে গেলে আপনি যত সুন্দর করে ডেস্ক গুছিয়ে রাখেন না কেন তা ডেস্কের সৌন্দর্য নষ্ট করবে। এছাড়া খাবারের পর এঁটো প্লেট, বক্স কিংবা গ্লাস টেবিলের উপর রেখে দিবেন না। যদি আপনি ফুল দিয়ে ডেস্ক সাজিয়ে থাকেন তাহলে খেয়াল রাখবেন ফুল পচে গেলেই তা ফেলে দিবেন। তা না হলে দীর্ঘদিন টেবিলে যদি পচা ফুল থাকে তাহলে দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে। অফিস ডেস্কে প্রিন্ট করে কোনো মোটিভেশনাল কথা কিংবা যেসব বার্তা আপনার মনে সাহস এবং শক্তি যোগায় তেমন কিছু টানিয়ে রাখতে পারেন। কাজের ফাঁকে সেখানে চোখ গেলে কাজে শক্তি পাবেন। অফিসে যদি দীর্ঘ বিরতি পান তাহলে ডেস্কে কিছুক্ষণ পাওয়ার ন্যাপ নিয়ে নিতে পারেন। কাজের ফাঁকে এই ন্যাপ আপনাকে পুনরায় নতুন উদ্যমে কাজ করার শক্তি যোগাবে। সেক্ষেত্রে একটি কুশন এনেও রাখতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন সাজাতে গিয়ে আপনার ডেস্ক যাতে অতিরিক্ত হিবিজিবি মনে না হয়। সাজানোর ক্ষেত্রে সেসব উপকরণ ব্যবহার করবেন যা আপনার কাজে লাগে। অপ্রয়োজনীয় বা অতিরিক্ত জিনিস ডেস্কে থাকলে তা অপরিষ্কার দেখাবে। কাজের ফাঁকে নিজেকে হাইড্রেটিং রাখার জন্য পানির ব্যবস্থা রাখতে ভুলবেন না।
অনেক সময় অফিস ডেস্ক ছোট হলে তা মনের মতো সাজিয়ে তোলা যায় না। সেক্ষেত্রে তেমন কিছু না রেখে শুধুমাত্র পানি, ঔষধ, কাগজপত্রের মতো দরকারি জিনিসপত্রই গুছিয়ে রাখতে হবে। আপনার ডেস্কটি যে অনেক কিছু দিয়ে সাজিয়ে তুলতে হবে তা নয় বরং ছোট ছোট বিষয় লক্ষ্য রাখবেন যেমন ধুলাবালি জমে গেল কিনা, মশা মাছি পিঁপড়া ইত্যাদি আছে কিনা, কোনো দুর্গন্ধ যাতে না থাকে, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যাতে হাতের কাছে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। দীর্ঘ সময় অফিস ডেস্কে বসে থাকার ফলে ওজন বৃদ্ধি, কোমর ব্যথা, পিঠ ব্যথার মতো নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে কাজের ফাঁকে ফাঁকে কিছুক্ষণ অফিসে হাঁটাচলা করে নিতে পারেন।
লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ইন্টেরিয়র