সাত মসজিদ রোডের সব বুফে রেস্তোরাঁ বন্ধ

ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডের সব বুফে রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখা হয়েছে। অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে চলমান অভিযান, সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনাসহ বেশ কিছু কারণে এসব রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এর আগে রবিবার (৩ মার্চ) রাতে এসব রেস্তোরাঁয় অভিযান চালায় পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে রেস্তোরাঁ মালিকদের চিঠি দিয়ে তিন দিনের মধ্যে কাগজপত্র নিয়ে হাজির হতে বলা হয়। এছাড়া অভিযানের ভয়ে অনেকেই প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছেন। সোমবার (৪ মার্চ) সাত মসজিদ রোডে সরেজমিন এ চিত্র পাওয়া যায়।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বেইলি রোডে আগুনের ঘটনার পর অবৈধভাবে পরিচালিত বাণিজ্যিক ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করে প্রশাসন। এরই অংশ হিসেবে রবিবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রেস্তোরাঁয় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন আছে কিনা, জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি রয়েছে কিনা, নিরাপদ স্থানে রেখে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা, এছাড়াও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র এবং ঝুঁকির বিষয়টি নজরদারি করা হয়। রবিবার রাত ১১টা পর্যন্ত পুলিশের অভিযান চলাকালে আটক করা হয় বিভিন্ন রেস্তোরাঁর অন্তত ৩০ জনকে। তাদের মধ্যে কয়েকটি রেস্তোরাঁর ম্যানেজার রয়েছেন।

ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, গত শনিবার (২ মার্চ) ডিএমপির সদর দফতর থেকে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের রেস্তোরাঁয় অভিযান চালানোর বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। অননুমোদিত এবং ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এরপরই রবিবার দুপুরের পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন থানার পুলিশ সংশ্লিষ্ট এলাকার রেস্তোরাঁয় অভিযান শুরু করে।

এদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পুলিশ ধানমন্ডি এলাকায় অন্তত ২২টি রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে ১৯ জনকে গ্রেফতার করেছে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন ধানমন্ডি থানার ওসি পারভেজ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।’

পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সবচেয়ে বেশি গ্রেফতার করা হয়েছে ধানমন্ডি এলাকা থেকেই। সোমবার (৪ মার্চ) দুপুরে সাত মসজিদ রোডের বিভিন্ন রেস্তোরাঁ ঘুরে দেখা যায়, সেগুলো বন্ধ আছে। ধানমন্ডির ঝিগাতলা থেকে ২৭ নম্বর পর্যন্ত বুফে-রেস্তোরাঁ আছে অন্তত ২১টি। তবে কফিশপ, রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য খাবারের দোকান রয়েছে তিন শতাধিক। অভিযানের কারণে প্রায় সব কফিশপ ও রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ধানমন্ডির ১০/এ সড়কের ইম্পেরিয়াল আমিন সেন্টারে বুফে রেস্তোরাঁ আছে ছয়টি। প্রতিটি রেস্তোরাঁ বন্ধ পাওয়া গেছে। এই বিল্ডিংয়ে অবস্থিত ‘দ্য বুফে স্টোরি’র একজন কর্মকর্তা জানান, সরকারি বিধিনিষেধের কারণে তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। কবে খুলবে তা তিনি সঠিক জানেন না।

তবে তাদের ফেসবুক পেজে মেসেজ দেওয়া হলে জানানো হয়, ‘আজকে বন্ধ আছে। আগামীকাল থেকে রিজারভেশন নেওয়া যাবে।’ একই বিল্ডিংয়ের এমব্রসিয়া ইনফিনিটি লাউঞ্জের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, আজকে রেস্টুরেন্ট বন্ধ আছে। তবে আগামীকাল খোলা থাকবে কিনা, সে বিষয়ে তারা কিছু বলতে পারছেন না।

এদিকে সোমবার দুপুরে গাউসিয়া টুইন পিক ভবনে অভিযান চালিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযান চলাকালে ভবনের ছাদে থাকা একটি রেস্তোরাঁ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভবনের সব রেস্তোরাঁ সিলগালা করেছেন রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানজিনা সারোয়ার।

এই ভবনে বুফে রেস্তোরাঁ আছে সাতটি। ভবনটির বাণিজ্যিক এফ-১ ক্যাটাগরির অনুমোদন থাকলেও রেস্তোরাঁর জন্য এফ-২ ক্যাটাগরির অনুমোদন প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন রাজউকের কর্মকর্তারা। সেটি না থাকায় রেস্তোরাঁগুলো সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।

ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডের জিএইচ হাইটস ভবনেও অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। সেখানকার একজন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী জানান, আমাদের এখান থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে যাচাই-বাছাইয়ের পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের এখানে তেমন কোনও অনিয়ম খুঁজে পায়নি পুলিশ। তবে সোমবারের অভিযানের কারণে ধানমন্ডির ঝিগাতলা থেকে ১৯ নম্বর রোড পর্যন্ত ৮০ শতাংশ রেস্তোরাঁ বন্ধ রয়েছে।

অপরদিকে সোমবার দুপুরে ঝিগাতলায় অভিযান চালায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানের আগেই কেয়ারি ক্রিসেন্ট ভবনের সব রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। সোমবার দুপুর ২টা ৫০ মিনিটের দিকে ডিএসসিসি এখানে তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করতে এলে এমন চিত্রই দেখা যায়। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর আলম।

চার মামলায় আসামি ৩০

পুলিশ বাদী হয়ে ঝিগাতলার কেয়ারি ক্রিসেন্ট টাওয়ারের ৯ জন, গাউসিয়া টুইন পিক ভবনের ১৫ জন, জিএইচ হাইটস ভবনের ৬ জনকে আসামি করে ধানমন্ডি থানায় চারটি মামলা দায়ের করেছে। চারটি মামলার মধ্যে দুটি কেয়ারি ক্রিসেন্ট টাওয়ারে অবস্থিত রেস্তোরাঁগুলো থেকে আটক করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, বেপরোয়া ও অবেহলাজনিত কারণে মানুষের জীবন বিপণ্ন হতে পারে জানা সত্ত্বেও এসব রেস্তোরাঁয় বিস্ফোরক (গ্যাস সিলিন্ডার) সম্পর্কে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। নিজেদের খেয়ালখুশি মতো অগ্নি বা দাহ্য বস্তু ব্যবহার করে তারা ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ অগ্নিকাণ্ডে নারী শিশুসহ ৪৬ জন মারা যান। তাদের মধ্যে ৪৪ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি দুই জনের মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে রাখা হয়েছে।

এরপর রবিবার (৩ মার্চ) রাতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার রেস্টুরেন্টগুলোতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে পুলিশ। আজ সোমবার (৪ মার্চ) ধানমন্ডিতে অননুমোদিত রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে রাজউক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

বাংলা ট্রিবিউন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

5 − four =