সাবিনা ইয়াসমিনের জন্মদিন আজ

আজ দেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের জন্মদিন। তবে দিনটিতে তিনি দেশে নেই। দেড় মাস আগে আমেরিকা গিয়েছেন কিছু অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য। দেশটির বিভিন্ন স্টেটে প্রবাসীদের আমন্ত্রণে গান করছেন তিনি। তবে এ মুহূর্তে তিনি রয়েছেন কানাডায়। জন্মদিনও সেখানেই পালন করবেন এ সংগীতশিল্পী। আগামীকাল যাবেন নিউইয়র্ক। এমনিতেই দেশ থাকাকালীন কখনোই ঘটা করে জন্মদিন পালন করেন না সাবিনা ইয়াসমিন। তার মতে, ‘জন্মদিন মানেই জীবন থেকে আরও একটি বছর হারিয়ে যাওয়া’। আমেরিকায় তার কাছের মানুষেরা দিনটি বিশেষায়িত করার চেষ্টা করবেন বলে জানা গেছে। ছোটবেলার জন্ম দিন কেমন ছিল জানতে চাইলে এ কিংবদন্তি বলেন, ‘জন্মদিন এলেই আব্বা আম্মা এবং আমার বোনদের খুব মিস করি। কিন্তু তারপর সবার ভালোবাসা পেয়ে আমি সে কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করি। ঈদ এলে যেমন নতুন জামাকাপড় লুকিয়ে রাখতাম, ছোটবেলায় জন্মদিন এলেও তাই করতাম। জন্মদিনে এসব কাপড় বের করতাম। তখন আনন্দটাই ছিল অনরকম।’ ১৩ সেপ্টেম্বর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। অসংখ্য বাংলা চলচ্চিত্রে তিনি গান গেয়েছেন। এছাড়া দেশাত্মবোধক থেকে শুরু করে উচ্চাঙ্গ, ধ্রুপদী, লোকসংগীত ও আধুনিক বাংলাসহ বিভিন্ন ধারার নানা আঙ্গিকের সুরে গান গেয়ে নিজেকে দেশের অন্যতম সেরা সংগীতশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

পেয়েছেনও দুহাত ভরে। চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়ে তিনি রেকর্ড ১৪টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন। বাচসাস পুরস্কার পেয়েছেন ছয়টি। শিল্পকলার সংগীত শাখায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ১৯৮৪ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক এবং ১৯৯৬ সালে সর্বোচ্চ বেসামরিক রাষ্ট্রীয় সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে।

আজ সোমবার সেই গুণি কণ্ঠশিল্পীর জন্মদিন। ৬৯ পেরিয়ে ৭০ বসন্তে পা দিয়েছেন তিনি। ১৯৫৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাবিনা ইয়াসমিনের জন্ম হয়েছিল ঢাকায়। যদিও তাদের পৈতৃক নিবাস সাতক্ষীরায়। তার পিতা লুতফর রহমান ব্রিটিশ রাজের অধীনে সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন এবং মায়ের নাম বেগম মৌলুদা খাতুন।

সাবিনা ইয়াসমিনরা পাঁচ বোনের মধ্যে চার বোনই সংগীতের সঙ্গে যুক্ত। ফরিদা ইয়াসমিন, ফৌজিয়া ইয়াসমিন, নীলুফার ইয়াসমিন এবং সাবিনা ইয়াসমিন। তার আরেক বোন নাজমা ইয়াসমিন। ভগ্নীপতি চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনেতা ও সুরকার খান আতাউর রহমান এবং তার ভাগ্নে সংগীতশিল্পী কাম অভিনেতা আগুন।

সাবিনা ইয়াসমিন শৈশব থেকে গানের তালিম নেয়া শুরু করেন। সাত বছর বয়সে প্রথম মঞ্চে গান করেন খেলাঘর নামে একটি বেতার অনুষ্ঠানে। ১৯৬২ সালে ‘নতুন সুর’ চলচ্চিত্রে রবীন ঘোষের সুরে ছোটদের গানে অংশ নেন তিনি। চলচ্চিত্রে পূর্ণ নেপথ্য সংগীতশিল্পী হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৬৭ সালে ‘আগুন নিয়ে খেলা’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে।

১৯৭২ সালে ‘অবুঝ মন’ চলচ্চিত্রের ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’ গানে কণ্ঠ দিয়ে তিনি প্রথম জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ১৯৭৬ সালে প্রদত্ত প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তিনি ‘সুজন সখী’ চলচ্চিত্রের ‘সব সখীরে পার করিতে’ গানের জন্য শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন এবং এরপর ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ (১৯৭৮), ‘সুন্দরী’ (১৯৭৯) ও ‘কসাই’ (১৯৮০) চলচ্চিত্রের জন্য টানা আরও তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

১৯৮০-এর দশকে তার গাওয়া ‘জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো’, ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মত’ ও ‘চিঠি দিও প্রতিদিন’ গানগুলো জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এই সময়ে তিনি চন্দ্রনাথ (১৯৮৪), প্রেমিক (১৯৮৫), রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত (১৯৮৭) ও দুই জীবন (১৯৮৮) চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়ে চারটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এরপর তিনি দাঙ্গা (১৯৯১), রাধা কৃষ্ণ (১৯৯২), দুই দুয়ারী (২০০০), দুই নয়নের আলো (২০০৫), ও দেবদাস (২০১৩) চলচ্চিত্রের গানের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি সর্বশেষ পুত্র (২০১৮) চলচ্চিত্রের গানের জন্য তার ১৪তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া দেশাত্মবোধক গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো’, ‘সব ক’টা জানালা খুলে দাও না’, ‘ও আমার বাংলা মা’, ‘মাঝি নাও ছাড়িয়া দে’, ‘সুন্দর সুবর্ণ’ ও ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার’। গান গাওয়ার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সংগীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে বিচারকের দায়িত্বও সামলান নিয়মিত।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

15 + 9 =