সালেক সুফী
ইনিংসের শেষ দিকে ৮ নম্বর ব্যাটসম্যান মেহেদী মিরাজের তীব্র প্রতিরোধে চট্টগ্রাম টেস্টে শুধু পরাজয়ের ব্যাবধান কমেছে। শ্রীলংকার ছুড়ে দেওয়া ৫১১ রানের অজেয় টার্গেট নিশানায় ব্যাট করে আজ ৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৯২ রানে টেস্ট জয় করে শ্রীলংকা দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে যোগ্য দল হিসাবে সিরিজ জয় এবং ধবল ধোলাইয়ের লজ্জা দিলো।
আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে শ্রীলংকার অবস্থান চতুর্থ। বাংলাদেশের অবনমন হলো অষ্টম অবস্থানে। বাংলাদেশ সিরিজ খেলবে পাকিস্তান এবং ভারতে, দক্ষিণ আফ্রিকা আসবে বাংলাদেশে, বাংলাদেশ খেলতে যাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টেস্ট ক্রিকেটে আগাম কিছু বলা নাকি বোকার কাজ। আমি বোকা হওয়া স্বীকার করেই বলছে কোনো টেস্টে পরাজয় এড়ানো বাংলাদেশের জন্য সহজ হবে না।
দুটি টেস্টের চার ইনিংসের শেষটিতে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ৩১৮ করলো। বাকি তিন ইনিংসে ২০০ রানের কোটাই পেরুতে পারেনি বাংলাদেশ। বাংলাদেশ যদি টেস্ট মেজাজে সাহসী ব্যাটিং করে প্রতি ইনিংসে ৩০০ করতে পারতো তাহলে বাংলাদেশের বোলাররা লড়াই করে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি করতে পারতো। অবশ্য বাংলাদেশের ফিল্ডিং ছিল খুবই নিম্নমানের। সিরিজ জুড়ে যেভাবে বাংলাদেশ ব্যাটিং বোলিং করেছে তার প্রতিফলন হয়েছে সিরিজের ফলাফলে।
আমি শ্রীলংকার অর্জনকে মোটেও খাটো করবো না। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং তিন ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ অতিথি দলের তুলনায় ছিল অনুজ্জ্বল। মোমিনুল, মিরাজ, তাইজুল, ছাড়া একমাত্র জাকির একটি ইনিংসে বলার মত ব্যাট হাতে দৃঢ়তা দেখিয়েছে। সিলেট টেস্টের উভয় ইনিংসে টপ অর্ডার আনাড়ির মত আত্মাহুতি দিয়েছে। চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৯ জন ব্যাটসম্যান উইকেটে স্থিতু হলেও মোমিনুল এবং মিরাজ ছাড়া কেউ ইনিংস বড় করতে পারেনি।
বলছি না একজন দুইজন ইনিংস বড় করলেই জিতে যেত বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে অনেক ক্যাচ বাংলাদেশ ফিল্ডাররা ফস্কালে শ্রীলংকা ৫৩১ রানের পাহাড় চূড়ায় উঠে যায়। ৬ জন ৫০ উর্ধ্ব স্কোর করলেও কেউ শত রান করেনি। এই ইনিংসটি টেস্ট ক্রিকেটে নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে। জবাবে ১৭৮ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। তবুও তৃতীয় দিনের শেষ প্রহরে হাসান মাহমুদ, খালেদের সংহারী বোলিং সিরিজে বাংলাদেশের উজ্জ্বলতম সময়। দ্বিতীয় ইনিংসে খেলাটি ৫ম দিনে নিয়ে যাওয়ার জন্য মেহেদী মিরাজকে বাহবা দিবো।
সিরিজে দুই টেস্ট জিতে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে সুবিধাজনক স্থানে পৌঁছানোর জন্য শ্রীলংকাকে টুপি খোলা কুর্ণিশ। যোগ্যতার কারণেই ম্যাচ এবং সিরিজ সেরা হয়েছে কামিন্দু মেন্ডিস। সিলেটে উভয় ইনিংসে শতরান করার পর চট্টগ্রমে প্রথম ইনিংসে সঙ্গীর অভাবে শতরান বঞ্চিত হয়েছে। দুই হাতে বোলিং করতে পারা কামিন্দু ৩ উইকেট নিয়ে সিরিজ জয় তরান্বিত করেছে। সিরিজ পেস বোলিং রিসোর্স অনেক সমৃদ্ধ। স্পিনেও অনেক বিকল্প আছে। এভাবে উন্নতির ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই টেস্ট ক্রিকেটে শ্রীলংকার সোনালি দিন ফিরে আসবে।
বিসিবিকে বলবো তিন ফরম্যাটেই দল নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা করা দরকার। কোন খেলোয়াড়কে কোন ফরম্যাটে খেলাবে সেটি গভীর বিচার বিশ্লেষণ করতে হবে। ক্রিকেট অপারেশন বিভাগ, নির্বাচকমণ্ডলীর অনেক কাজ। সিলেট এবং চট্টগ্রামে দুইটি আদর্শ উইকেটে খেলা হয়েছে। বিকেএসপি বা মিরপুরের ধীর, নিচু উইকেটে খেলে কখনো কোনো ফরম্যাটেই ধারবাহিক সাফল্য মিলবে না।
বাংলাদেশ কখনো কোন নীল চাঁদে ম্যাচ জিতবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে এবং বৈষয়িক টুর্নামেন্টে হতাশা জুটবে। বিসিবিকে চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে কোড অফ কন্ডাক্ট বিষয়ে শিথিলতা পরিহার করতে হবে। বেতনভুক কর্মকর্তাদের (খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ, নির্বাচক) সবাইকেই সাফল্য ব্যার্থতার দায় দায়িত্ব নিতে হবে। সব দেশ পরিকল্পিত পথে এগিয়ে যাচ্ছে। একমাত্র বাংলাদেশ স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিশাল ব্যাঙ্ক ব্যালান্স নিয়ে বিসিবি কেন বসে আছে?