সুরের পদ্মাবতী সাবিনা ইয়াসমিনের জন্মদিন আজ

সঙ্গীতের জীবন্ত কিংবদন্তি। সুরমূর্ছনায় শ্রোতাকে ডুবিয়ে রাখেন। চার দশকেরও অধিক সময় ধরে বাংলা গানের বিভিন্ন ধারায় বিচরণ। উচ্চাঙ্গ, ধ্রুপদী, লোকসঙ্গীত থেকে শুরু করে আধুনিক বাংলা, দেশাত্মবোধক গানসহ চলচ্চিত্রে মিশ্র আঙ্গিকের গানে খ্যাতি বিশ্বব্যাপী। গানের পাখি, সুরের পদ্মাবতী সাবিনা ইয়াসমিনের ৬৮তম জন্মদিন আজ রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর)। ১৯৫৪ সালের আজকের এই দিনে সাতক্ষীরা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন সাবিনা ইয়াসমিন। তার বাবার নাম লুৎফর রহমান ও মা বেগম মৌলুদা খাতুন। সাবিনা ইয়াসমিন বললেন, এবারের জন্মদিন নিয়ে বিশেষ কোন আয়োজন নেই।

আমার মেয়ে ও আমার কয়েকজন বন্ধু আসবে বাসায় বেড়াতে। বাসাতেই দিনটি বিশেষভাবে উদ্যাপনের চেষ্টা থাকবে। আর এখন তো প্রচ- গরমও। বাইরে বের হওয়াটাও অনেক কষ্টের। যে কারণে জন্মদিনে কোন চ্যানেলের আয়োজনেও যাওয়া হচ্ছে না। সবার কাছে দোয়া চাই আল্লাহ যেন ভাল রাখেন, সুস্থ রাখেন।

দেশাত্মবোধক গানেই সাবিনা ইয়াসমিনের যে বিরাট অবদান, তা দিয়েই এই বাংলার বুকে বেঁচে থাকবেন শ্রোতার হৃদয়ে। দেশের বিভিন্ন জাতীয় দিবসে তার গাওয়া গানই যেন আগামী দিনে নতুন করে পথ চলার সাহস জোগায়। দেশের গান ছাড়াও চলচ্চিত্রে হাজার হাজার গান গেয়েছেন তিনি। আর এমনি করেই গানে গানে সাবিনা ইয়াসমিন হয়ে উঠেছেন এদেশের তথা বাংলা ভাষাভাষীর অতি প্রিয় একজন শিল্পী হিসেবে।

জন্মদিন প্রসঙ্গে সাবিনা ইয়াসমিন আরও বলেন, জন্মদিন এলেই আব্বা-আম্মা এবং আমার বোনদের খুব মিস করি। কিন্তু তারপর সবার ভালবাসা পেয়ে আমি সে কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করি। ঈদ আসলে যেমন নতুন জামা কাপড় লুকিয়ে রাখতাম। জন্মদিন এলেও তাই করতাম। জন্মদিনে এসব কাপড় বের করতাম। আনন্দটাই ছিল অন্যরকম।

প্রয়াত বরেণ্য সুরকার-সঙ্গীত পরিচালক রবিন ঘোষের সঙ্গীত পরিচালনায় এহতেশাম পরিচালিত ‘নতুন সুর’ চলচ্চিত্রে ১৯৬২ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম গান করেন সাবিনা ইয়াসমিন। তবে ১৯৬৭ সালে আমজাদ হোসেন ও নূরুল হক বাচ্চু পরিচালিত ‘আগুন নিয়ে খেলা’ সিনেমাতে আলতাফ মাহমুদের সঙ্গীত পরিচালনায় ‘মধু জোছনা দীপালি’ গানটি গাওয়ার মধ্য দিয়ে প্লে-ব্যাক গায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। বরেণ্য এই সঙ্গীতশিল্পী ১৯৮৪ সালে একুশে পদক, ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারসহ সর্বোচ্চ ১৪ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৫ সালে প্রমোদকার (খান আতাউর রহমানের ছদ্ম নাম) পরিচালিত ‘সুজন সখী’ সিনেমাতে গান গাওয়ার জন্য প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

এরপর বিভিন্ন সময়ে আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, চাষী নজরুল ইসলামের ‘চন্দ্রনাথ’, মইনুল হোসেনের ‘প্রেমিক’, বুলবুল আহমেদের ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’, আমজাদ হোসেনের ‘দুই জীবন’, কাজী হায়াতের ‘দাঙ্গা’, মতিন রহমানের ‘রাধা কৃষ্ণ’, মোহাম্মদ হোসেনের ‘আজ গায়ে হলুদ’ ও চাষী নজরুল ইসলামের ‘দেবদাস’ চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭১ সালে নঈম গহরের লেখা ও আজাদ রহমানের সুরে সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’ গানটি মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম প্রেরণা জুগিয়েছিল।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

six − 3 =