দুই বছর পর সেলিন ডিওনের প্রত্যাবর্তন

আইফেল টাওয়ারের পাদদেশে অলিম্পিকের জৌলুশ। সামনে হাজার হাজার দর্শক। প্রায় অন্ধকার মঞ্চে দূর থেকেও উজ্জ্বল সেলিন ডিওন। তাঁর রুপালি গাউন জ্বলজ্বল করছে। হাতে মাইক্রোফোন তুলে নিলেন গায়িকা। কণ্ঠে ধরলেন এডিথ পিয়াফের জনপ্রিয় ফরাসি ব্যালাড ‘হ্যায়মে আ লামা’। সঙ্গী কেবল একটি পিয়ানো। টানা সাড়ে তিন মিনিট কণ্ঠের জাদুতে মন্ত্রমুগ্ধ করলেন। গান শেষ হতেই দর্শকদের উচ্ছ্বসিত করতালিতে মুখর প্রাঙ্গণ। অশ্রুসিক্ত সেলিন ডিওন। দর্শকদের দিকে তাকিয়ে লম্বা শ্বাস নিলেন। তাঁর চোখের কোণে তখনো চিকচিক করছে অশ্রুফোঁটা।

শুক্রবার অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দিয়ে মঞ্চে ফিরলেন সেলিন ডিওন। দুই বছরের বেশি সময় পর। এই দুই বছর ছিল সেলিনের জীবনের সবচেয়ে করুণ সময়। এমনিতে ভীষণ প্রাণচঞ্চল মানুষ সেলিন, তাঁর কণ্ঠে সব সময় উঠে এসেছে প্রত্যাশার বার্তা। তবে ২০০২ সালে ৫৪ বছর বয়সে এসে জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি খান কানাডিয়ান এই পপগায়িকা। সে সময় সেলিন প্রথম জানান, স্টিফ পারসন সিনড্রোম নামের এক জটিল স্নায়ুরোগে আক্রান্ত তিনি। বাতিল করে দেন সব শো। আর কখনো কনসার্ট ভর্তি শ্রোতার সামনে গাইতে পারবেন কি না, সেই আশঙ্কাও দেখা দিয়েছিল। সেই থেকে প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত এই অসুখের সঙ্গে লড়াই করে গেছেন সেলিন।

সম্প্রতি প্রকাশ পাওয়া ‘আই অ্যাম: সেলিন ডিওন’ তথ্যচিত্রেও স্নায়ুরোগের বিষয়টি উল্লেখ করেন গায়িকা। তথ্যচিত্রের এক দৃশ্যে দেখা গেছে, সেলিনকে চেপে ধরে রেখেছেন চিকিৎসকেরা। খিঁচুনিতে কেঁপে কেঁপে উঠছে তাঁর শরীর। হাত-পা আড়ষ্ট। কাঁপতে কাঁপতে বেঁকে যাচ্ছে ঠোঁট। কথা বলতে গেলে জড়িয়ে যাচ্ছে জিব। শুধু গোঙানির মতো আওয়াজ বের হচ্ছে কণ্ঠ দিয়ে।

এই তীব্র অসুস্থতার মধ্যেও মঞ্চে ফেরার প্রত্যাশা ছিল সেলিনের। বলেছিলেন, ‘তবু আমি থামব না। মঞ্চে ফিরবই। যদি আমাকে হামাগুড়ি দিয়ে মঞ্চে উঠতে হয়, তবু উঠব।’ শুক্রবারের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অবশেষে তাঁর প্রত্যাশা পূরণ হলো। মঞ্চে তিনি শুধু ফিরেছেন, তা-ই নয়, আবেগে ভাসিয়েছেন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা তাঁর লাখো ভক্তকে।

প্যারিস অলিম্পিকের মাধ্যমে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই আয়োজনে পারফর্ম করলেন সেলিন। এর আগে ১৯৯৬ সালে আটলান্টায় গেয়েছিলেন ‘দ্য পাওয়ার অব দ্য ড্রিম’। সেলিনের প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে অলিম্পিক গেমসের এক্স অ্যাকাউন্টে শেয়ার করা হয়েছে তাঁর সেই পারফরম্যান্সের ভিডিও।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

fourteen + 17 =