স্মার্ট বাংলাদেশের প্রত্যয় জ্বালানির সাশ্রয়

তারিক মোহাম্মদ

১৯৭৫ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহুজাতিক তেল কোম্পানি শেল অয়েল এর কাছ থেকে ৪.৫ মিলিয়ন পাউন্ড স্টার্লিংয়ে (তৎকালীন ১৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা প্রায়) পাঁচটি গ্যাস ক্ষেত্র কিনে নেন। গ্যাসক্ষেত্র পাঁচটি হচ্ছে – তিতাস, বাখরাবাদ, রশিদপুর, হবিগঞ্জ ও কৈলাসটিলা। একইসঙ্গে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিশন কোম্পানিতে থাকা শেল অয়েলের সব শেয়ার  কিনে নেয় বাংলাদেশ। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জ্বালানিখাতে এই সিদ্ধান্তকে দূরদর্শী পরিকল্পনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পরবর্তীকালে এই গ্যাস ক্ষেত্রগুলো জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তার বড় নির্ভরস্থল হয়ে ওঠে। যার উপর ভিত্তি করেই এখন দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের জ্বালানি খাত। ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ  সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০১০ সালের ১২ আগস্ট এক পরিপত্রে ৯ আগস্টকে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে প্রতিবছর এই দিন সরকার জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।এবারের জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবসের প্রতিপাদ্য – “স্মার্ট বাংলাদেশের প্রত্যয় জ্বালানির সাশ্রয়”। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সূচকের উর্ধ্বগতি নিশ্চিতকরতে জ্বালানির অপচয় রোধ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত। এই গুরুত্ব বিবেচনায় এ বছর জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবসের প্রতিপাদ্য অত্যন্ত সময়োপযোগী।

বাংলাদেশ সংবিধানের ১৪৩ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে যে – বাংলাদেশের যে কোন ভূমির অন্তঃস্থ সকল খনিজ ও অন্যান্য মূল্য সম্পন্ন সামগ্রী; বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় জলসীমার অন্তবর্তী মহাসাগরের অন্তঃস্থ কিংবা বাংলাদেশের মহীসোপানের উপরিস্থ মহাসাগরের অন্তঃস্থসকল ভূমি, খনিজ ও অন্যান্য মূল্যসম্পন্ন সামগ্রী; প্রজাতন্ত্রের উপর ন্যস্ত হইবে । সংবিধানের ১৪৩ অনুচ্ছেদের আলোকে রাষ্ট্রের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু দেশীয় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদের উপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা তথা সার্বভৌম ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৫ সালের ৯ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু যে দিন ৫টি গ্যাসক্ষেত্র কেনার ফাইল স্বাক্ষর করেন সেদিন তিনি তাঁর তৎকালীন একান্ত সচিব ড. ফরাউদ্দিন-কে বলেন, “আজ বাঙালির অন্যতম মুক্তির সনদে স্বাক্ষর করবো” । বহুজাতিক কোম্পানি শেল প্রারম্ভিক ভাবে গ্যাসক্ষেত্রগুল বিক্রয় করতে চায়নি। তখন বঙ্গবন্ধু জাতীয় সংসদে নতুন আইন প্রণয়ন করে গ্যাসক্ষেত্রসমূহ রাষ্ট্রীয়ভাবে অধিগ্রহণের অর্থাৎ জাতীয়করণের হুমকি প্রদান করেন যা এর আগে ১৯৫১ সালে ইরানে, ১৯৬১ সালে ইরাকে এবং ১৯৬২ মালেমিশরে ঘটেছিলো। ওই ৫টি গ্যাস ফিল্ডে তখন মজুদ ছিল ২০.৭৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। ৪৬ বছর গ্যাস সরবরাহের পরও বর্তমানে ওই ৫টি গ্যাসক্ষেত্রে ৫.৫৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস অবশিষ্ট রয়েছে। বহুজাতিক কোম্পানি সমূহের অনুকূলে খনিজ ও জ্বালানি সম্পদের ওপর প্রদত্ত ইজারা ভিত্তিক মালিকানা জাতীয় স্বার্থে বাতিল করে জারি করা বঙ্গবন্ধুর এই পদক্ষেপ ছিল তারই নেতৃত্বে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী মাইলফলক।

ইতোপূর্বে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ১৪ মার্চ ‘The ESSO Undertaking Acquisition Ordinance, 1975’ এর মাধ্যমে বাংলাদেশে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের ESSO Eastern Inc.-কে অধিগ্রহণ করে এদেশে জ্বালানি তেল মজুদ,  সরবরাহ ও বিতরণে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ সংবিধানের ১৬ নং অনুচ্ছেদের আলোকে গ্রামীণ উন্নয়ন এবং নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য দূর করার জন্য গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতায়নের বিষয়টিকে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধু সরকার সিলেট ও ছাতক গ্যাসক্ষেত্রের পরিচালনার দায়িত্ব নিজ হাতে নেয়। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে স্বল্পসময়ে যে কাজ করেছেন অন্যেরা দীর্ঘ সময়ে তার ধারেকাছেও নেই। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ রাষ্ট্রপতির আদেশ নং-২৭ এর মাধ্যমে দেশের তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান এবং পেট্রোলিয়াম অপারেশনের সব বিষয় পরিচালনা ও পরিবীক্ষণের জন্য লক্ষ্যে বাংলাদেশ খনিজ,  তেল ও গ্যাস কর্পোরেশন গঠন করেন, ১৯৭৪ সালে এর সংক্ষিপ্ত নাম করণ করা হয় পেট্রোবাংলা । তিনি জ্বালানি খাতকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে পেট্রোলিয়াম আইন ও পেট্রোলিয়াম পলিসি প্রণয়ন করেন। উক্ত আইন ও পলিসির আওতায় তিনি দেশীয় কোনো মূলধন বা বিনিয়োগ ছাড়াই বিদেশি বা বহুজাতিক কোম্পানির মাধ্যমে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান এবং উৎপাদনের লক্ষ্যে পেট্রোলিয়াম কনসেশন প্রথা বিলুপ্ত করে প্রডাকশন শেয়ারিং কন্টাক্ট (উৎপাদন বন্টন চুক্তি)   পদ্ধতি বাংলাদেশে প্রবর্তন করেন যা বর্তমানে সারা বিশ্বে বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয়। একইভাবে, কয়লাসহ কঠিন খনিজ অনুসন্ধান ও আহরণের জন্য বাংলাদেশ মিনারেল এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন গঠন করেন। সংস্থা দুটির চেয়ারম্যানকে সচিবের পদমর্যাদা দেওয়া হয়। চালু করেন। বাংলাদেশের সমুদ্র ও সমুদ্র সীমারক্ষার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে ‘The Territorial Waters and Maritime Zones Act’ প্রণয়ন করেন। ৫টি বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে সমুদ্র উপকূলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের চুক্তি করেন। ওই সময়ই বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরকে পুনর্গঠন ও গতিশীল করা হয়। মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি প্রকল্পের আর্থ-কারিগরি সমীক্ষার জন্য পরামর্শক নিয়োগ এবং আলজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, সোভিয়েত রাশিয়াসহ পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পেট্রোবাংলার কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। বঙ্গবন্ধু কর্তৃক এই সকল প্রতিষ্ঠান সমূহ স্থাপন ও এর উন্নয়নকল্পে গৃহীত কার্যক্রম আজ ও এদেশের জ্বালানি সেক্টরের নিরাপত্তা বলয় হিসেবে কাজ করছে।

রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ এর ৮ম অধ্যায় এর শিরোনাম হলো ‘একটি উচ্চআয়ের দেশের জন্য টেকসই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি’। এর অধীনে ২০৪১ সাল নাগাদ অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা হিসাবে গ্রিডভিত্তিক বিদ্যুতের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৫৬,৭৩৪ মেগাওয়াট; শীর্ষ মুহূর্তের সর্বোচ্চ চাহিদা ৫১,০০০ মেগাওয়ট; সিস্টেমলস ৬%-এ হ্রাস করা,  জ্বালানি সেক্টরে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ ৬০% -এ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ অভিগম্যতা ১০০% -এ উন্নীত করা,  ১১৭৭ কিঃ মিঃ পেট্রোলিয়াম পাই পলাইন স্থাপন, তেল শোধনাগারের প্রসেসিং সক্ষমতা ১৯.৫০ মিলিয়ন টনে উন্নীতকরণ,  ৯,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানি করা এবং জ্বালানি খাতকে আর্থিকভাবে লাভ জনক করার নিমিত্ত মোট সম্পদের উপর ৮%  মুনাফা অর্জন লক্ষ্যমাত্রা হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী সিদ্ধান্তের ধারা বাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ (মধ্যম আয়ের দেশ) ও রূপকল্প- ২০৪১ (উন্নত দেশের মর্যাদা) অর্জনে জ্বালানী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। অতীতের সরকারগুলোর জ্বালানি হিসেবে গ্যাসের ওপর অত্যধিক নির্ভরশীলতার ভ্রান্তনীতি পরিবর্তন করে শেখ হাসিনার সরকার জ্বালানির বহুমুখীকরণের (Diversification) নীতি গ্রহণ করেছে। এই ব্যবস্থায় দেশের জ্বালানী মিশ্রণে দেশীয় গ্যাস সম্পদের পাশাপাশি কয়লা, আমদানিকৃত এলএনজি, পারমানবিক বিদ্যুৎ, তরল জ্বালানী, আন্তঃরাষ্ট্রীয় জ্বালানি বাণিজ্যের মাধ্যমে আহরিত জ্বালানি/বিদ্যুৎ,  নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে একটি টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। সুন্দলপুর, শ্রীকাইল, রূপগঞ্জ, ভোলানর্থ ও জকিগঞ্জ নামে মোট ৫টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। আরো নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের জন্য বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার লাইন কিলোমিটার ২-ডি সিইসমিক জরিপ এবং ১ হাজার ৫৩৬ বর্গকিলোমিটার ৩-ডি সিইসমিক জরিপ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বাগেরহাট জেলার রামপালে ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (BPDB), ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ  কেন্দ্র স্থাপন করেছে। রাশিয়ার রোসাটোম স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি কর্পোরেশন কর্তৃক পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুর নামক স্থানে ২.৪ গিগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে যা বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সেক্টরে শেখ হাসিনার সরকার বৈপ্লবিক সাফল্য দেখিয়েছে। মহেশখালী, মাতারবাড়ী এবং পায়রাতে আওয়ামী লীগ সরকার একটি ‘এনার্জি হাব’ গড়ে তুলছে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ২২৮ কিলোওয়াট, যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৫৬০ কিলোওয়াট। একই সময়ে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতাভুক্ত ছিল মোট জনসংখ্যার ৪৭ শতাংশ,  যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে শতভাগ। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ৩২৬৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে। বর্তমানে সরকারের বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষমতা ২৫,৫৬৬ মেগাওয়াট। ২০০৯ সালের জানুয়ারীতে দেশে মোট বিদ্যুৎ গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৮ লক্ষ, শেখ হাসিনার সরকার এটি ৪ কোটি ২৭ লক্ষে উন্নীত করেছেন। ২০০৯ সালের জানুয়ারীতে সঞ্চালন লাইন ছিল মাত্র ৮,০০০ সার্কিট কি: মি: যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৩,৫১৮ সার্কিট কি:মি:  এ উন্নীত করেছেন। ২০০৯ সালে বিদ্যুতের বিতরণ লাইন ছিল ২ লক্ষ ৬০ হাজার কি:মি: যা বর্তমানে ৬ লক্ষ ২৬ হাজার কি:মি:  এ উন্নীত করা হয়েছে। পৃথিবীর কমদেশই এতো অল্পসময়ে এতো বেশি সাফল্য দেখাতে পেরেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ভারত থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ আনার জন্যে ভেড়ামারায় যে ক্রসবর্ডার ইন্টারকানেকশন স্থাপিত হয়েছে,  এছাড়া ভারতের ত্রিপুরার সাথেও ক্রসবর্ডার ইন্টারকানেকশন স্থাপিত হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের মোট সরবরাহকৃত বিদ্যুতের ১০ শতাংশ ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে। এছাড়া ভারতের ঝাড়খণ্ড ও ত্রিপুরা থেকে যথাক্রমে ১৪৯৬ ও ৩৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎসহ মোট ১৮৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভারতের সাথে বাংলাদেশের যে ক্রসবর্ডার ইন্টারকানেকশন স্থাপিত হয়েছে, বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় এই ইন্টারকানেকশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া ভুটান ও নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আনার কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কার্যক্রম কার্যকরী ও সুদক্ষভাবে পরিচালনা করছে। বর্তমানে ৭টি সমুদ্রব্লকে আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি সমূহ একক ও যৌথভাবে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। দেশে তেল-গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন ১৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট (২০০৮ সালে) হতে ২৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত করণসহ মোট গ্যাস সরবরাহ ৩২৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে (এলএনজিসহ) উন্নীত করেছে।

সম্প্রতি মহান জাতীয় সংসদে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেছেন, সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ক্যাপটিভ ও নবায়ন যোগ্যসহ বর্তমানে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৭ হাজার ৩৬১ মেগাওয়াট। ১৯ এপ্রিল ২০২২ একদিনে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়েছে। অথচ, ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট এবং প্রকৃত উৎপাদন ছিল ৩ হাজার ২৬৮ মেগাওয়াটের কাছাকাছি। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেছেন,  নতুন আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র ইলিশায় মজুদসহ দেশে প্রাথমিক গ্যাসের মজুদ ৪০ দশমিক ৪৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট এবং উত্তোলন যোগ্য গ্যাসের মজুদ ২৮ দশমিক ৭৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে গত বছরের ৩১ মে পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৯৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে এবং ৮ দশমিক ৮২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ অবশিষ্ট রয়েছে। দৈনিক গড়ে ২ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বিবেচনায় এই গ্যাস আগামী ১০ বছর চলবে।

রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে উঠে দাঁড়াবে এবং জ্বালানি নিরাপত্তা সমৃদ্ধ জাতি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে এটাই আপামর দেশবাসীর ঐকান্তিক কামনা।

লেখক: উপ-পরিচালক গণযোগাযোগ অধিদফতর

পিআইডি ফিচার

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

13 − seven =