স্যার, একেবারে তাজা, আমার পুকুরের ইলিশ

মাহবুব আলম

-রমজান আলী, আস আস, ভিতরে আস। এই সাতসকালে যে, কি বিষয়ে, জরুরি কিছু?

-না স্যার, এমনিতেই এলাম। শত হলেও আমাদের এই জেলা শহরে আপনি মেহমান। মেহমানের প্রতি খেয়াল রাখা আমাদের একটা দায়িত্ব। একটা কর্তব্যও বলতে পারেন স্যার, তাই আপনার জন্য মাছ নিয়ে এসেছি। ইলিশ মাছ।

এ কথা বলে রমজান আলী খুব সাবধানে সোলার প্যাকেট খুলে একটি ইলিশ তুলে ধরে বললেন,

-স্যার, একেবারে তাজা।

ইলিশের সাইজ দেখে ফারুক সাহেবের চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক বয়ে গেল। তিনি বললেন,

-এ তো দুই আড়াই কেজির কম হবে না। এত বড় ইলিশ তো দেখাই যায় না। কোথায় পেলে এই বড় ইলিশ।

-স্যার, এ আমার পুকুরের ইলিশ। আজ ভোরে ধরেছি। অনেক ইলিশ পেয়েছি। তাই ভাবলাম স্যারকে কয়েকটা দিয়ে আসি। স্যার, এই বাক্সে এক ডজন ইলিশ আছে।

ফারুক সাহেব বাক্সের দিকে তাকিয়ে দেখেন ওগুলোও বেশ বড় সাইজের। এটা দেখে তার জিভে রীতিমতো জল এসে গেল। আনন্দের আতিসায্যে স্ত্রীকে ডাকলেন। তার স্ত্রী ডলি এসে বিশাল সাইজের এত ইলিশ দেখে রীতিমত থ মেরে গেলেন। তারপর একটু ধাতস্থ হয়ে স্বামীকে বললেন, এত বড় ইলিশ আমি কোনদিন দেখিনি। শুনেছি বড় ইলিশের স্বাদই আলাদা। ভালোই হলো আজ দুপুরে ভাজবো দেখি কেমন টেস্ট হয়। এ কথা বলে ফারুক সাহেবের স্ত্রী ডলি আক্তার ড্রইংরুম থেকে ভিতরের রুমের দিকে এগোতেই রমজান আলী বললেন, ভাবি আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি এই ইলিশ খেলে এর স্বাদ ভুলতে পারবেন না। এ কথা বলে রমজান আলী আরো বললেন, ভাবি শুধু ইলিশ না, আপনার জন্য এক বস্তা আমও এনেছি। হিমসাগর, খুব মিষ্টি। বাইরে আমার গাড়িতে আছে। বাসায় কি কেউ আছেন? থাকলে একটু বলেন বস্তাটা নিয়ে আসুক। ভয় নেই, আমার ড্রাইভারও আছে। দুজনে সহজেই আমের বস্তা আনতে পারবে।

ফারুক সাহেব একটু টিপ্ননি কেটেই বললেন, তা ফারুক সাহেব আমও কি আপনার গাছের?

-জি স্যার, আমার গাছের আম। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চারা এনে লাগিয়েছি। বেশ ভালো আম হয়েছে। খুব মিষ্টি। স্যার, ফরমালিন মুক্ত ফ্রেশ আম।

এই কথাবার্তার মধ্যে ফারুক সাহেবের স্কুল পড়ুয়া পুত্র এসে হাজির। পুকুরের ইলিশ শুনে সে একেবারে বিস্মিত। চোখ বড় বড় করে সে তার বাবাকে প্রশ্ন করে বাবা, পুকুরে ইলিশ হয় এটা তো শুনিনি। তাহলে এটা কি করে সম্ভব এগুলো পুকুরের ইলিশ। অবস্থা বেগতিক দেখে ফারুক সাহেবের স্ত্রী ডলি আক্তার ছেলেকে বললেন, ও তুই বুঝবি না, যা তোর পড়ার ঘরে যা, আমি পরে বুঝিয়ে দেব। পুত্র কিছু না বলে নীরবে প্রস্থান করল। অন্যদিকে, ফারুক সাহেব স্ত্রীর উপস্থিত বুদ্ধিতে খুশি হয়ে মনে মনে তুষ্ট হলেন। তারপর চা খেতে খেতে বললেন, রমজান আলী শুনেছি যমুনার পাঙ্গাস খুব বিখ্যাত। এর স্বাদই নাকি আলাদা। আমি একদিন গিয়েছিলাম আরিচা ঘাটে। কিন্তু ওরা বলল স্যার সব সময় পাওয়া যায় না, মাঝেমধ্যে বড় পাঙ্গাস ওঠে। আমি খুব হতাশ হয়ে ফিরে এসেছি।

রমজান আলী, তুমি তো এখানকার মানুষ। জেলেদের সঙ্গে কি চেনাজানা আছে, থাকলে বড় পাঙ্গাসের খবর পেলে আমাকে জানিও। আমি যেখানেই থাকি না কেন সোজা ঘাটে চলে যাব।

-স্যার, আপনি চিন্তা করবেন না একটা ব্যবস্থা হবে। তবে এটা ঠিক যে, বড় পাঙ্গাস হঠাৎ হঠাৎই ওঠে। আর তা কেউ না কেউ ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। স্যার, আপনি নিশ্চিত থাকেন এক মাসের মধ্যে আমি আপনার সামনে বড় পাঙ্গাস হাজির করব। আমি কথা দিলাম। স্যার আমার কথার নড়চড় হয় না। এই কথা বলে রমজান আলী একটা তৃপ্তির হাসি দিয়ে তার ধবধবে সাদা দাড়িতে হাত বুলালেন।

রমজান আলী মানিকগঞ্জের একজন নামকরা ব্যক্তি। ঠিকাদারি ছাড়াও তার নানান ব্যবসা-বাণিজ্য আছে। তাই শহর থেকে কোনো বড় কর্মকর্তা এলে তিনি এইভাবেই তার সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। আর বিশেষ করে যদি ঠিকাদারি সম্পর্কিত হয় তাহলে তো কথাই নেই।

অন্যদিকে, ফারুক সাহেব যার পুরো নাম ফারুক আক্তার খান। একটা সরকারি প্রতিষ্ঠানের বড় কর্মকর্তা। তার একটা গালভরা বড় পদবীও আছে। সম্প্রতি তিনি বদলি হয়ে মানিকগঞ্জে এসেছেন। অবশ্য, তার স্ত্রী পুত্র কন্যা ঢাকাতেই থাকেন। মাঝেমধ্যে আসে মানিকগঞ্জে, অনেকটা পিকনিক করতে। সেই যাইহোক রমজান আলী দেখা সাক্ষাৎ আর উপহার দেওয়ার দিন সৌভাগ্যবশত ফারুক সাহেবের স্ত্রীর দর্শন পেয়ে যান এবং প্রথম দর্শনেই তার স্ত্রীর মন জয় করে নেন। বিশাল সাইজের এক ডজন ইলিশ আর এক বস্তা আম দিয়ে।

আমাদের দেশে এটা কোনো নতুন ঘটনা নয়। এই ঘটনা, এই রীতিনীতি চলে আসছে সেই ব্রিটিশ আমল থেকে। গ্রামে নতুন দারোগা এলে তাকে খাসি মেরে খাওয়ানোর রীতি অনেক পুরানো। অবশ্যই এর সাথে কিছু নগদ নারায়ণও দিতে হয়। এটা স্রেফ ভদ্রতা।

আর যাদের কর্তা ব্যক্তিদের কাছে কাজ থাকে বা কর্তা ব্যক্তিদের থেকে কাজ করিয়ে নিতে হয় তাদের তো উপঢৌকনের সঙ্গে নগদ অর্থও দিতেই হয়, এবং দিচ্ছেও। এটা যে যত ভালোভাবে দিতে পারে সে সবচেয়ে সফল ব্যক্তি, সফল ব্যবসায়ী। একে সাধারণভাবে বলা হয় ঘুষ।

এই ঘুষ নিয়ে মজার গল্প আছে। ব্রিটিশ ভারতে এক ম্যাজিস্ট্রেট একদিন দেখেন তার পিয়নের সামনে বেশ কয়েক ফানা বড় সাইজের সাগরকলা। এটা দেখে সাহেব তার বাঙালি আর্দালীকে জিজ্ঞাসা করলেন এগুলো কি? আর্দালি প্রথমে ভয় চুপসে গেলেন। এবং ভয়ে ভয়ে সত্যি কথা বলে দিলেন। বললেন, স্যার এগুলো ঘুষ।

এটা শুনে সাহেব প্রসন্ন হলেন। আর বললেন ‘ঘুষ ইজ ভেরি গুড ফর হেলথ’। এটা শুনে আর্দালি, পিয়ন ও কেরানি মনে মনে মহাখুশি। মুখে না বললেও মনে মনে বলল যাক বাঁচা গেল। সাহেব রাগ করেননি বরং খুশি হয়েছেন। অতএব এখন থেকে ঘুষ জায়েজ। সাহেব জায়েজ করলে অন্যের কি বলার আছে?

কথিত আছে সেই থেকেই নাকি এ দেশে ঘুষের প্রচলন শুরু হয়েছে। আসলে বিষয়টা ঠিক নয়। এ দেশে ঘুষের প্রচলন অনেক আগে থেকেই ছিল। মুঘল, পাঠান এমনকি আড়াই হাজার বছর আগে সম্রাট অশোকের যুগেও ঘুষের প্রচলন ছিল। চানক্যের শ্লোকই এর বড় প্রমাণ। তবে তা ছিল খুবই সীমিত পর্যায়ে। প্রধানত রাজন্যবর্গের মধ্যে রাজদরবারে পদস্থ কর্মকর্তারা ঘুষের লেনদেন করতেন। সম্রাট অশোকের কাহিনি যারা পড়েছেন তারা জানেন সম্রাট বিন্দুসার গ্রিক স্ত্রী ঘুষ দিয়ে কিভাবে তার নিজ গর্ভের পুত্রকে পরবর্তী সম্রাট করার চেষ্টা করেছেন। তিনি সম্রাটের অন্যান্য স্ত্রীদের সন্তানকে অযোগ্য ও সম্রাটের প্রতি অবাধ্য প্রমাণের জন্য জন্য রাজন্যবর্গকে নিয়মিত ঘুষ দিতেন। এমনকি বিন্দুসার গ্রিক স্ত্রী অশোকসহ তার বেশ কয়েকজন ভাইকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে বিশাল অংকের ঘুষ দিয়ে।

মুঘল আমলেও ঘুষের লেনদেন ছিল। অবশ্য, এক্ষেত্রেও ওপর তলায়ই এই ঘুষের লেনদেন ছিল। কোনো এলাকার নবাব, নিজাম, সুবেদার হবার জন্য বড় অংকের ঘুষ দিতে হতো রাজন্যবর্গকে যারা তাদের পক্ষে সম্রাটকে প্রভাবিত করতেন। এক কথায় সম্রাটের সিলমোহর আদায় করবেন। এ বিষয়ে একটি উদাহরণ দেওয়া যায় তা হলোÑ বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খানের মৃত্যুর পর তৎকালীন নিয়ম অনুযায়ী মুর্শিদকুলি খানের পুত্রকে নবাব করার কথা। সেই অনুযায়ী দিল্লির সনদ আনতে প্রয়োজনীয় উপটোকনসহ সম্রাটের কাছে পত্র প্রেরণ করা হয়। কিন্তু দিল্লির তৎকালীন অমর্ত্যরা ওই পত্রকে উপেক্ষা করে মুর্শিদকুলি খানের সেনাপতি আলীবর্দী খানকে নবাবীর সনদ প্রদান করেন। এর পেছনে ছিল মূলত বড় অংকের ঘুষ ও নানান উপটোকন।

তবে এটা ঠিক যে, মুঘল আমলে ঘুষ নিয়ে ধরা পড়লে রক্ষা ছিল না। নির্ঘাত শাস্তি, কঠোর শাস্তি। এ বিষয়ে সম্রাট আকবরের একটি বিচার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বীরবল নামের এক ব্যক্তি একদিন আগ্রা থেকে ফতেপুরসিক্রিতে গিয়ে হাজির হন সম্রাটের দর্শন প্রাপ্তির জন্য। কিন্তু প্রাসাদের গেটে তাকে বাধা দেওয়া হয়। অনেক অনুনয় বিনয় করার পরও প্রাসাদের রক্ষীরা তাকে প্রাসাদে প্রবেশের অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানান। তবে কিছু অর্থ দিলে অনুমতি দেবে বলে জানায়। কিন্তু বীরবলের কাছে কোনো অর্থই ছিল না। তাই তিনি বাধ্য হয়ে প্রাসাদ রক্ষীর হাতে পায়ে ধরেন। এমনভাবে ধরেন যে প্রাসাদরক্ষীর মনটা গলে যায়। তবে তাকে শর্ত দেন সম্রাটের কাছে তিনি যে ইনাম ধন-রত্ন, টাকা-পয়সা পাবেন তার অর্ধেক তাকে দিতে হবে। বীরবল ওই শর্তে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হন। আর রাজি হওয়া মাত্রই প্রাসাদরক্ষী তাকে প্রাসাদের ভিতর ঢুকিয়ে দেন।

এ সময় সম্রাট আকবর দেওয়ানি আমে উপস্থিত হওয়া জনতার সুখ দুঃখ অভাব অভিযোগ শুনছিলেন। সবার কথা শোনবার পর বীরবলকে দেখে বললেন, তুমি কি চাও বল এ কথা শুনে বীরবল বলে, আমি চাই আমাকে ১০০ বেত্রাঘাত করা হোক। এই কথা শুনে খোদ সম্রাটসহ উপস্থিত সভাসদ একেবারে হতভম্ভ হয়ে গেলেন। এ লোক বলে কি? সবাই আসে সম্রাটের কাছে অর্থ সাহায্যের জন্য, আর এই লোক কি না বেত্রাঘাত চায়?

সম্রাট আকবর বিস্মিত হয়ে আবারও জিজ্ঞেস করলেন, তুমি অন্য কিছু চাও। যা চাইবে তাই দেব।

কিন্তু বীরবল অনঢ়। বীরবল দৃঢ় কণ্ঠে বললেন, হুজুর আমি অন্য কোনো কিছুই চাই না। আমি চাই আমার পিঠে ১০০টি বেত্রাঘাত করা হোক। বীরবলের দৃঢ়তা দেখে সম্রাট আকবর বেত্রাঘাতের জন্য নির্ধারিত সেনাকে ডাকলেন। এবং বীরবলকে শেষবারের মতো বললেন, তুমি কি সত্যিই বেত্রাঘাত চাও। তুমি কি প্রস্তুত এই কঠিন বেত্রাঘাতের জন্য। বীরবল সহাস্য বদনে বললেন, হুজুর আমি প্রস্তুত তবে একটা কথা আছে।

সম্রাট বললেন, বল তোমার আখেরি খায়েশ।

হুজুর প্রাসাদে ঢোকার অনুমতির জন্য প্রাসাদরক্ষী আমাকে বলেছেন, আমি যে ইনাম পাবো তার অর্ধেক তাকে দিতে হবে। আমি তার শর্তে রাজি হয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি। অর্ধেক ইনাম তাকে দেব। তাই বলছি কী ১০০ বেত্রাঘাতের অর্ধেক আমার প্রাপ্য আর বাকি অর্ধেকের প্রাপ্য রক্ষী।

একথা শুনে সম্রাট আকবর লজ্জা অপমানে একেবারে অগ্নিশর্মা হয়ে গেলেন। তিনি বললেন, একি হচ্ছে তার প্রাসাদে; তিনি রক্ষীকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন তুমি কি এই লোকের প্রাপ্ত ইনামের অর্ধেক দাবি করেছ। রক্ষী ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে আমতা আমতা করে বললেন, হুজুর ভুল হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে আর কোনদিন এমন হবে না।

সম্রাট আকবর তখন বললেন, অর্ধেক নয় ওর ইনামের পুরোটাই তোমাকে দেওয়া হবে। তুমি কি খুশি?

রক্ষী জী জাঁহাপনা বলে সম্রাটকে কুর্নিশ করল।

রক্ষীর কুর্নিশ শেষ হলে সম্রাট আকবর বললেন, তুমি কি জানো এই লোক কি ইনাম চেয়েছে?

-না জাঁহাপনা।

-এই লোক চেয়েছে ১০০ বেত্রাঘাত। প্রস্তুত হও। ১০০ বেত্রাঘাতের জন্য।

এই হলে মুঘল আমলে ঘুষের বিচার, কঠোর দণ্ড।

মীরজাফর আলী খান, জগৎ শেঠ ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বড় অংকের অর্থ দিয়ে ইয়ার লতিফসহ সিরাজউদ্দৌলা ঘনিষ্ঠ অনেক আমত্য ও সেনাপতিদের কিনে ফেলেছিলেন। যার পরিণতি পলাশীর যুদ্ধে সিরাজের পরাজয় ও মর্মান্তিক মৃত্যু।

বাংলাদেশে আমরা যারা সুলতান সুলেমান সিরিজ দেখেছি তাদের নিশ্চয়ই মনে আছে সুলেমানের রাজদরবারে কিভাবে ঘুষের লেনদেন হয়েছে। প্রতিটি হত্যা ষড়যন্ত্রের জন্য ব্যাপক ঘুষ দিতে হয়েছে কর্মচারীদের। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, ঘুষের ইতিহাস অনেক পুরানো। আড়াই তিন চার এমন কী পাঁচ হাজার বছরের। তবে এই ঘুষ ছিল মূলত উপরতলার যা ইতিমধ্যে বলেছি। নিচতলায় যে একেবারে ছিল না তা নয়, ছিল নিশ্চয়ই। তবে তা খুবই সীমিত পর্যায়ে।

পাকিস্তান আমলে দেখেছি, আমাদের দেশের ছোটখাটো ঘুষের লেনদেন হতো টেবিলের নিচ দিয়ে। কিন্তু এখন দিন বদলেছে। দেশ স্বাধীন হয়েছে। ঘুষ লেনদেন আর টেবিলের নিচ দিয়ে রাকঢাক করে নয়, একেবারে প্রকাশ্যে দরদাম করে হয়। এবং ঘুষের টাকা প্রকাশ্যে গুণে নেয় ঘুষ গ্রহিতা।

এ বিষয়ে আমি আমার এক বন্ধুর কাছে শুনেছি, চকবাজারের একটি ব্যাংকের ম্যানেজার ঘুষের টাকা তার টেবিলে সাজিয়ে রাখতেন। একদিন আমার এই বন্ধুর সামনে ঘুষ নিয়ে টাকার বান্ডিল গুনতে গিয়ে দেখেন বেশ কয়েকটি ৫০০ টাকার নোট ছেঁড়াফাটা জোড়া তালি দেওয়া। এটা দেখে বিরক্ত হয়ে ম্যানেজার সাহেব মন্তব্য করেন. কি দিনকাল পরলো ঘুষের টাকাও ছেঁড়াফাটা জোড়া তালি দেওয়া।

শুরুতেই বলেছি, পুকুরের ইলিশ ও নিজ গাছের হিমসাগর আমের কথা। এই ইলিশ আর আম শুধু মানিকগঞ্জের কর্মকর্তা উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের ভাগ্যে জোটে না। এটা জোটে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রভাবশালী নেতা আমলা মন্ত্রীদের ভাগ্যও।

বড় বড় ঠিকাদার ব্যবসায়ী আর্থিক লেনদেনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সম্পর্ক জোরদার করতে অনেকেই নিজ স্ত্রীর হাতে তৈরি পিঠা পুলি, ঘরে পাতা দই, ঘরে তৈরি হরেক রকম মিষ্টি নিয়ে হাজির হন প্রভাশালী ব্যক্তিদের বাড়িতে। সেই সাথে নিয়ে যান নিজ নিজ এলাকার বিখ্যাত সব সামগ্রী। যেমন মুক্তাগাছার মণ্ডা, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, যশোরের প্যারা সন্দেশ, বগুড়ার দই, পোড়াবাড়ি, চমচম, যশোরের বিখ্যাত কৈ, বাগেরহাটের গলদা চিংড়ি, পোরশা মাছ, সেই সাথে দিনাজপুরের লিচু আর রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের ঝুড়ি ইত্যাদি। এটা এখন আর গোপন কিছু নয়, একেবারে ওপেন সিক্রেট। বিষয়টা এখন এমন একপর্যায়ে এসে ঠেকেছে যে, এটাকে এখন আর কেউ কোনো দোষ হিসেবে নেয় না দেখে না। তাইতো এখন ইংরেজ সাহেবের মতো সবাই বলে ‘ঘুষ ইজ গুড ফর হেলথ’।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: রম্য রচনা

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

three × one =