হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে ম্যাচ জিতে ফাইনালের পথে দৃঢ়পদে আগুয়ান বাংলাদেশ

সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠানরত এশিয়া কাপ টি২০ টুর্নামেন্ট ২০২৫ গ্রূপ অফ ফোর পর্যায়ের প্রথম খেলায় একবল হাতে রেখে শ্রীলংকাকে ৪ উইকেটে পরাজিত করে বাংলাদেশ ফাইনালের পথে দৃঢ়পদে এগিয়ে গেলো। টস জয় করে প্রতিদ্বন্দ্বী শ্রীলংকাকে ব্যাটিং করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। দুর্বল বোলিং এবং ফিলডিংয়ের কারণে শ্রীলংকা নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৬৮/৭ রান করেছিল।

ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে কঠিন টার্গেট তাড়া করে একসময় বাংলাদেশ নিজেদের ২০ ওভারের সূচনায় ৪/১৬৪ করে সহজ জয়ের দুয়ার প্রান্তে ছিল। শেষ ওভারের নাটকীয়তায় আরো দুই উইকেট হারিয়ে ১৯.৫ ওভারে ১৬৯/৬ করে বাংলাদেশ ৪ উইকেটে ম্যাচ জিতে প্রথম রাউন্ডে হারের মধুর প্রতিশোধ নেয়।  আর এই জয়ে বাংলাদেশের সামনে এখন ফাইনাল খেলার সুবর্ণ সুযোগ উন্মোচিত হয়েছে।

হাতে আছে দুটি ম্যাচ ভারত এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। একটি ম্যাচ জয়ী হলেই বাংলাদেশ খেলবে স্বপ্নের ফাইনাল। কাল যখন ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার লোগান সিটিতে তখন রাত শেষে সুবহে সাদেক।  রাত জাগা ভোরের পাখি হয়ে বিজয়ে উদ্ভাসিত আমরা।

একটু ধীর গতির উইকেটে বাংলাদেশ শুরুতে পিথুন নিশাঙ্কার উইকেট তুলে নিলেও বোলাররা সঠিক লাইন লেংথে ধারাবাহিকভাবে বোলিং না করায় শ্রীলংকান ইনিংস দ্রুতলয়ে এগিয়ে চলেছিল। শরিফুল ইসলাম (০/৪০), নাসুম আহমেদ (০.৩৬) এবং তাসকিন আহমেদ ( ১/৩৭) বেধড়ক মার খেলেও মুস্তাফিজের খুনে কিপ্টে বোলিং (৩/২০) শ্রীলংকান ইনিংসকে ১৬৮/৭ রানে সীমিত রাখে।

৩ চার এবং ৬ ছয়ে ৬৪ রান করে দাসুন শানাকা শ্রীলংকাকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যায়। শুরুতে কুশল মেন্ডিস ২৫ বলে ৩৪ করে ভালো সূচনা করেছিল। বাংলাদেশ ম্যাচে ৩-৪টি ক্যাচ ফেলে দেয়। গ্রাউন্ড ফিল্ডিং ভালো হয়নি। অধিকাংশ বোলার মার খেলেও কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ ছিল নিজের মূর্তিতে সক্রিয়। অন্তত দুটি ক্যাচ ওর বলে ফসকালেও চার ওভারে ২০ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নেয় ফিজ। মেহেদী হাসান ২৫ রান দিয়ে সংগ্রহ করে ২ উইকেট।

জয়ের নেশায় উজ্জীবিত বাংলাদেশ শুরুতে তানজিদ তামিমের উইকেট হারালেও সাইফ হাসানের (৪৫ বলে ৬১) অনবদ্য বাটিংয়ে শক্ত অবস্থানে পৌঁছায়। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে অধিনায়ক লিটন দাস (২৩) ৫৯ রান যোগ হয়। এর পর সাইফ এবং হৃদয় দুই মেধাবী তরুণ ৩য় উইকেট জুটিতে স্বাচ্ছন্দ্যে ৫৪ রান যোগ করলে একপর্যায়ে বাংলাদেশের রান দাঁড়ায় ১৪ ওভারে ২ উইকেটে ১১৪।  সেখান থেকে সহজে ম্যাচ জিতবে সেটি ছিল অনুমিত।

সাইফ ২ চার এবং ৪ ছয়ে ৪৫ বলে ৬১ রান করার পর তাওহীদ হৃদয় ৩৭ বলে ৫৮ রানের গতিময় ইনিংস খেলে। শেষ ওভারে ৬ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৫ রান। কিন্তু দ্বিতীয় এবং চতুর্থ বলে আরো দুই উইকেট পড়ে যাওয়ায় সৃষ্টি হয় নাটকীয়তা। অবশেষে নাসুম আহমেদ শেষ ওভারের ৫ম বলে জয়সূচক রান তুলে নিলে ১৬৯/৬ করে ৪ উইকেটে জয়ী হয় বাংলাদেশ।

খেলতে হবে শক্তিশালী ভারত এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। বর্তমান অবস্থান থেকে অন্তত একটি ম্যাচ জয় করে ফাইনাল খেলার সুযোগ এখন অবারিত। উল্লেখ্য যে বাংলাদেশ ইতিপূর্বে এশিয়া কাপে দুইবার ফাইনাল খেললেও শিরোপা অধরা রয়েছে। তরুণ দলটির এবারে কিন্তু চমক জাগালেও জাগাতে পারে।

কাল দুবাইয়ের ধীর গতির উইকেটে ৩ পেসার ২ স্পিনার নেয়ার কৌশল ভালো লাগেনি। বিশেষত শরিফুল এবং তাসকিন খুব বেশি খাটো লেংথে বোলিং করেছে। বাংলাদেশের ফিল্ডিং ছিল নড়বড়ে। অন্তত ৩টি সহজ ক্যাচ ফস্কে গেছে।

তবে ভালো বোলিং করেছে মুস্তাফিজ এবং মাহেদী। শেষ ওভারে কিপ্টে ছিল তাসকিন। শ্রীলংকান কৌশল কাজে লাগেনি। বাংলাদেশ ভালো ব্যাটিং করে ম্যাচ জয় করেছে। এই জয় অবশ্যই বাংলাদেশকে উজ্জীবিত করবে বড় জয়ের পুঁজি হিসাবে। তবে বাংলাদেশকে বোলিং ফিল্ডিং আরো চৌকষ ভাবে করতে হবে। বাংলাদেশিরা আশায় বুক বাঁধতেই পারে বড় অর্জনের।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

2 × five =