হাসন রাজার ৯৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

মরমি কবি ও সাধক হাসন রাজার ৯৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে তিনি প্রয়াত হন। করোনাকাল পেরিয়ে সবকিছু সরব হয়ে উঠলেও অনেকটা নীরবেই কাটবে হাসন রাজার মৃত্যুবার্ষিকী।  তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সরকারিভাবে কোনো আয়োজনের খবর পাওয়া যায়নি। তবে পারিবারিকভাবে রীতি অনুযায়ী মিলাদ ও শিরনি বিতরণের আয়োজন করা হবে।

‘মরণ কথা স্মরণ হইলো না’, ‘মাটির পিঞ্জিরার মাঝে বন্দি হইয়া রে কান্দে হাসন রাজা মন মনিয়া রে’, ‘একদিন তোর হইব রে মরণ রে হাসন রাজা’, ‘রঙের বাড়ই রঙের বাড়ই রে’, ‘লোকে বলে ঘরবাড়ি ভালা না আমার’, ‘আগুন লাগাইয়া দিলও কুনে হাসন রাজার মনে’সহ জনপ্রিয় অসংখ্য গানের স্রষ্টা হাসন রাজা। ১৮৫৪ সালের সুনামগঞ্জ শহরের নিকটবর্তী সুরমা নদীর তীরে লক্ষ্মণশ্রী পরগনার তেঘরিয়া গ্রামে ধনাঢ্য জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এ মরমি কবি।

পিতা ছিলেন প্রতাপশালী জমিদার দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী ও মাতার নাম হুরমত বিবি। তাদের তৃতীয় পুত্র ছিলেন হাসন রাজা। তিনি সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, রামপাশা, লক্ষ্মণশ্রী আর সিলেটের একাংশ নিয়ে পাঁচ লাখ বিঘার বিশাল অঞ্চলের জমিদার ছিলেন। পিতা ও মাতা উভয়ের কাছ থেকে পাওয়া বিশাল জমিদারির মালিকানা চলে আসে কিশোর বয়সে তার হাতে। বেহিসাবি সম্পদ আর ক্ষমতার দাপটে বেপরোয়া জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি।

জাগতিক লোভ-লালসা, ক্ষমতা, জবরদখল করে তার প্রতিপত্তি বাড়ানোর কাজে প্রবৃত্ত ছিলেন এই প্রবল পরাক্রমশালী জমিদার। কিন্তু একসময় তার ভেতরের জাগতিক চাহিদার এ ভ্রান্তি ঘুচে যায়। তিনি তার সম্পদ জনকল্যাণের জন্য উইল করে দিয়ে কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে হাওরে হাওরে ভাসতে থাকেন। সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজতে গিয়ে সৃষ্টিকর্তার প্রেমে পাগল হাসন রাজা সেই সময় থেকেই নিজের গান গেয়েই বিখ্যাত হয়েছেন দেশে-বিদেশে।

হাসন রাজার গানের মাঝে নিহিত রয়েছে সৃষ্টিকর্তা, দুনিয়ার নশ্বর জীবন এবং নিজের কৃত কর্মের প্রতি অনুশোচনার কথা। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে তার রচিত ২০৬টি গান নিয়ে একটি সংকলন প্রকাশিত হয়। এ সংকলনের নাম ছিল ‘হাসন উদাস’। এর বাইরে আরো কিছু গান বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সুনামগঞ্জ শহরের লক্ষ্মণশ্রীতে মায়ের কবরের পাশে কবর দেয়া হয় তাকে। তার এ কবরখানা তিনি মৃত্যুর আগে নিজেই প্রস্তুত করেছিলেন।

বণিক বার্তা

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

20 + 11 =