হিট স্ট্রোকের লক্ষণ এবং জীবন বাঁচাতে করণীয়

চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় হিট স্ট্রোক মেডিকেল ইমার্জেন্সি। তাপদাহের কারণে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি তাপমাত্রা (৩৫-৪০ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং বাতাসের আর্দ্রতার অনুপস্থিতিতে কোনো ব্যক্তি দীর্ঘ সময় তীব্র রোদে অবস্থান করলে অথবা শারীরিক পরিশ্রম করলে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাপজনিত তারতম্যের কারণে কোনো ব্যক্তির শরীরের স্বাভাবিক তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা এর বেশি হলে হিট স্ট্রোক হয়।

হিট স্ট্রোকের পূর্ববর্তী ধাপগুলো হলো:

  • রোগীর প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়
  • মাংসপেশীতে মারাত্মক ব্যথা অনুভূত হয়
  • অতিরিক্ত দুর্বল লাগে ও ঠোট, মুখ, জিহ্বা শুকিয়ে পিপাসা পায়
  • রক্তচাপ কমে যায় ও নাড়ির স্পন্দন ক্ষীণ হতে থাকে
  • খিচুনি, মাথা ঘোরানো, চোখে ঝাপসা দেখা
  • বমি ভাব হতে পারে
  • রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে

এছাড়াও শারীরিক পরিশ্রমের কারণে হিট স্ট্রোক হলে অতিরিক্ত ঘামও একটি লক্ষণ।

হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিতে কারা রয়েছেন যারা:

সাধারণত শিশু বা বৃদ্ধরাই এই তালিকার প্রথমে থাকবে। কারণ শারীরিকভাবে তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা তাদের কম। দিনে প্রচণ্ড রোদে খোলা জায়গায় কায়িক পরিশ্রম যারা করেন। অনেক সময় পথচারী বা দীর্ঘ সময় লোডশেডিং হলে বদ্ধ ঘরে থাকা কোনো ব্যক্তির শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দিলে হিট স্ট্রোক হতে পারে।

হিট স্ট্রোকের ক্ষেত্রে প্রাথমিক লক্ষণগুলো দেখা দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা:

  • রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব শীতল স্থানে নিতে হবে। ফ্যান বা এসি ছেড়ে দিতে হবে। সম্ভব না হলে জোরে বাতাস করতে হবে
  • ঠান্ডা পানি দিয়ে রোগীর শরীর মুছে দিতে হবে। দ্রুত শরীরে পানি ঢেলে শরীর ভিজিয়ে বাতাস করে তাপমাত্রা কমানোর চেষ্টা করতে হবে
  • তবে ভেজা কাপড় দিয়ে পুরো শরীর মুড়ে দেবেন না
  • হাতের কাছে বরফ থাকলে গলার পেছনে, কাঁধে, বগলে ও কুচকিতে বরফ দিন। এতে দ্রুত শরীরের তাপমাত্রা কমবে
  • রোগীর জ্ঞান থাকলে অবশ্যই পানি ও খাবার স্যালাইন দিন
  • রোগীর তাপমাত্রা, শ্বাস-প্রশ্বাস, নাড়ির স্পন্দনের দিকে লক্ষ রাখুন। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলেও রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যান কারণ আংশিক বা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে এ ধরনের রোগীকে কখনো পুরোপুরি সুস্থ করা সম্ভব নয়।

এই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়:

  • প্রচুর পানি (দিনে অন্তত ২-৩লিটার) ও অন্যান্য তরল পান করতে হবে। এ সময় স্যালাইন, ফলের জুস, লেবুর শরবত, মাঠা বা ডাবের পানি খুবই উপকারী
  • চা ও কফি পান থেকে বিরত থাকুন, এতে শরীরের তাপ বৃদ্ধি পায়
  • ফল ও সবজি খেতে হবে। ভাজাপোড়া ও তৈলাক্ত খাবার পুরোপুরি এড়িয়ে চলাই ভালো
  • হালকা রঙের ঢিলেঢালা ও সুতির পোশাক পরার চেষ্টা করুন
  • বাইরে বের হলে ছাতা ও মাথায় টুপি ব্যবহার করুন
  • রোদের মধ্যে কায়িক শ্রম করা থেকে বিরত থাকুন। নিতান্তই সম্ভব না হলে প্রচুর পানি ও স্যালাইন পান করে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিয়ে কাজ করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

12 + eight =