১০ জনের ওয়েলসকে নাটকীয়ভাবে ২-০ গোলে হারাল ইরান

দোহা, ২৫ নভেম্বর ২০২২ (বাসস): দেশের হয়ে সর্বোচ্চ  ১১০তম ম্যাচ খেলতে নামার আগেই জয়ের পন করেছিলেন ওয়েলসের ফুটবল আইকন গ্যারেথ বেল। ম্যাচের আগেরদিন তিনি বলেছিলেন জয়লাভ করতে না পারলে এই কীর্তি অর্থহীন। তার এই রেকর্ডকে অর্থহীন করে দিয়েছে ইরান। আজ কাতারের আল-রাইয়ানের আহমাদ বিন আলি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের  ম্যাচে শেষ মুহুর্তের  নাটকীয়তায় ১০ জনের ওয়েলসকে ২-০ গোলে পরাজিত করেছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। ম্যাচের ইনজুরি টাইমে গোল দুটি করেছেন যথাক্রমে রুজবেহ চেশমি ও রামিন রেজায়েইন। নির্ধারিত সময়ের ৪ মিনিট আগে  গোল রক্ষক ওয়েইন হেনেসি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ায় ১০ জনের দলে পরিণত হয় ওয়েলস।

এদিকে সরকার  বিরোধী আন্দোলনে একাত্মতা জানিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে জাতীয় সঙ্গীতে অংশ না নিলেও আজ ওয়েলসের বিপক্ষে জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছে ইরানী ফুটবল দল।

ম্যাচের শুরু থেকেই আগ্রাসী ছিল ওয়েলস। বেলের নেতৃত্বে বেশীরভাগ আক্রমন তারা রচনা করেছে বাঁ প্রান্ত দিয়ে। তবে ডি বক্সে এসেই বর বার খেই হারিয়েছে তারা। বিপরিতে ইরান ছিল বেশ সপ্রতিভ। একদিকে তারা যেমন আক্রমন ঠেকিয়েছে, তেমনি প্রতিআক্রমন চালিয়ে ব্যতিবস্ত করেছে ওয়েলসের রক্ষনকে।

ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই আক্রমনে যায় ওয়েলস। কেইফার মুর এই সময় হ্যারি উইলসনকে বল দিলে তিনি সেটি কাট ব্যাক করেন নিকো উইলিয়ামকে। তবে ডি বক্সে তার ওই প্রচেস্টা নস্যাৎ করে দেন ইরানের গোল রক্ষক হোসেইন হোসেইনি।

দুই মিনট পরেই প্রতিআক্রমনে যায় ইরান। মেহদি তারেমি ও সর্দার আজমুন বল আদান প্রদানের মাধ্যমে ওয়েলসের সিমানা ঢুকে পড়লেও শেষ পর্যন্ত রক্ষনভাগের খেলোয়াড়দের বাঁধার মুখে হার মানেন। ৭ম মিনিটে ওয়েলসের পোস্টে শট নিলেও সেটি ছিল বেশ দুর্বল। যা পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি গোল রক্ষক ওয়েইন হেনেসিকে।

১০ম মিনিটে এ্যারন রামসে দারুন ভাবে একটি বল গলিয়ে দিয়েছিলেন ইরানের পোস্টের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া এথান আমপাডুকে। কিন্তু বলের সঙ্গে পায়ের সংযোগ ঘটাতে পারেননি তিনি। ফলে বল চলে যায় গোল লাইন অতিক্রম করে মাঠের বাইরে। পরের মিনিটেই গোল করার দারুন সুযোগ পান ইরানের শোয়ায়ে খলিরজাদেহ। কিন্তু অফসাইডের ফাঁদে পড়ে গোল পায়নি ইরান।

ম্যাচের ১৮তম মিনিটে ফ্রি কিক থেকে দারুন এক শট নিয়েছিলেন ওয়েলস মিডফিল্ডার হ্যারি উইলসন। কিন্তু তার নেয়া জোড়ালো শটের বল পোস্টের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। ম্যাচের ২৭ মিনিটে আজমুন , ২৯ মিনিটে কেইফার এর প্রচেস্টা ব্যর্থ হলেও ৩৫ মিনিটে ওয়েলসের হয়ে দারুন একটি সুযোগ সৃস্টি করেছিলেন ডিফেন্ডার জো রোডোন। তার শটের বল বাইরে পাঠিয়ে দেন রামিন রেজায়েইন। প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমের দ্বিতীয় মিনিটে আজমুনকে দারুন একটি বল বানিয়ে দিয়েছিলেন  সতীর্থ সাইদ এজাতোলাহি। কিন্তু কয়েক ইঞ্চি দূরত্বের জন্য বলে পা ছোঁয়াতে পারেননি তিনি। ফলে  গোল শুন্য অবস্থাতেই   বিরতিতে যায় দুই দল।

বিরতি থেকে ফিরে আরো জ্জীবিত হয়ে খেলা শুরু করে ইরান। ৫২ মিনিটে দারুন এক সুযোগও পেয়ে যায় তারা। এই সময় মধ্যমাঠ থেকে উড়ে আসা বলে পোস্টের বেশ কাছে থেকেই শট নিয়েছিলেন ইরানের আজমুন। কিন্তু বলটি গোলবারের কানায় লেগে দিক পরিবর্তন করে।

৭৩ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে ওয়েলসের পোস্টে আচমকা এক শট করেন এজাতোলাহি। কিন্তু দারুন দক্ষতায় সেটি প্রতিহত করেন ওয়েলসের গোল রক্ষক হেনেসি। এরপর  ৮৩ মিনিটে গোলের একটি স্পষ্ট সুযোগ নষ্ট  ওয়েলসের ডিফেন্ডার বেন ডেভিস।

৮৫ মিনিটে বল নিয়ে ওয়েলসের বক্সের দিকে দ্রুত গতিতে ছুটতে থাকা মেহদি তারেমিকে পোস্টের বাইরে এসে বিপজ্জনকভাবে বাঁধা দেন গোল রক্ষক হেনেসি। এ সময় ভিএআর দেখে বিপজ্জনক উচ্চতায় পা তোলায় লাল কার্ড দেখিয়ে তাকে বিদায় করেন রেফারি। এতে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ওয়েলস। প্রথমে তাকে হলুদ কার্ড দেখানো হয়েছিল। কিন্তু ইরানের প্রতিবাদের মুখে স্ক্রিনে দেখে তাকে লাল কার্ড দেখানো হয়।

সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ওয়েলসের উপর শেষ চার মিনিট চাপ প্রয়োগ করেও গোলের দেখা পায়নি ইরান। কিন্তু হাল ছাড়েনি তারা। এতেই নাটকীয় এক জয় পায় ইরান।

অতিরিক্ত হিসেবে যোগ হওয়া ৯ মিনিটের অস্টম মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে বদলি হিসেবে আসা রুজবেহ চেশমির ডান পায়ের আচমকা শটে পরাস্ত হন ওয়েলসের গোল রক্ষক হেনেসি (১-০)। নাটকীয়তা তখনো বাকী। দুই মিনিট পর পরিকল্পিত একটি আক্রমন থেকে ইরানের হয়ে দ্বিতীয় গোল করেন রামিন রেজায়েইন (২-১)। এতে ভঙ্গ হয় বেলের ম্যাচ জয়ের আশা। ৬৪ বছর পর বিশ্বকাপ খেলতে এসে এভাবে আশা ভঙ্গ হবে সেটি আশা করেননি ওয়েলসের হয়ে ১১০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে আসা বেল। আগামী ২৯ নভেম্বর দোহার আল-থুমামা স্টেডিয়ামে গ্রুপের শেষ ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের মোকাবেলা করবে ইরান।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

nineteen − 4 =