২০২২ হবে অর্জন সুসংহত করা আর গুছিয়ে নেয়ার বছর

সালেক সুফী: ফেলে আশা ২০২১ ছিল স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনের বছর। ১৯৭১ -২০২১  রক্ত অশ্রু বেদনার মূল্যে অর্জিত  স্বাধীনতার ৫০ বছরে অর্জন যেমন আছে অনেক, তেমনি ব্যার্থতা যথেষ্ট। সবকিছু মিলিয়ে ১৭ কোটি মানুষের দুই বেলা অন্নের নিশ্চয়তা, ১০০% দেশবাসীকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা, অব্যাহত আকর্ষণীয় হারে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে  অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার স্বীকৃতি অর্জন, করোনা সময়েও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা; মোটা দাগে এগুলোকে অর্জনের মাইলফলক বলা যায়। পাশাপাশি যোগাযোগ, বিদ্যুৎ উৎপাদন, ডিজিটাইজেশন, নারীদের ক্ষমতায়ন, নারী শিশুদের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা; এইসব সূচকেও বাংলাদেশের অর্জন উল্লেখ করার মতো।

কিন্তু সম্পদের সুষম বণ্টন, একশ্রেণির জনগোষ্টির কাছে বিপুল সম্পদ কুক্ষিগত হওয়া, সম্পদ এবং মেধা  পাচার, শিক্ষার সার্বিক মান উন্নয়ন নিশ্চিত না হওয়া, পর্যাপ্ত সংখ্যক দক্ষ স্থানীয় জনবল না থাকায় বিশাল সংখ্যক বিদেশি  দক্ষ-আধা দক্ষ শ্রমিকের উপর নির্ভরতা, একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু না করতে পারা এবং সর্বোপরি দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা সরকারের অনেক সাফল্যকে ম্লান করে দিয়েছে। যোগ বিয়োগের সমীকরণে আপাত দৃষ্টিতে সরকার স্বস্তিতে থাকলেও করোনা সামাল দিতে বিপুল বিনিয়োগের প্রভাব, বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থায় বাংলাদেশের আগামী দিনগুলোতে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

২০২২ বর্তমান সরকারের বর্তমান মেয়াদের চতুর্থ বছর।  নানা কারণে বৈষয়িক ভূ-রাজনৈতিক মেরুকরণের আঁচ পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। অনেকটা হটাৎ করেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিশেষায়িত এলিট বাহিনী রাবের কয়েকজন কর্মকর্তাকে আমেরিকায় গমনে বিধিনিষেধ জারি করে বাংলাদেশের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে বলে অনেকদের ধারণা। নিজেদের প্রভাব বলয়ে নেয়ার কিছুটা অভিপ্রায় থাকলেও বাংলাদেশের বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ড, মানবধিকার নিয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন রয়েছে। দুই পরাশক্তি বলয়ের শীতল যুদ্ধ আবার শুরু হওয়ায় বাংলাদেশকে সতর্কতার সঙ্গে দুই বলয়ের সময় দুরত্বে থাকতে  হবে। মিলন মোহনায় দক্ষিণ এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ভৌগোলিক  অবস্থানের কারণে  বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। তদুপরি বাংলাদেশের চলমান কিছু মেগা প্রকল্প ২০২৩, ২০২৪ নাগাদ চালু হলে বাংলাদেশ অব্যাহত গতিতে এগিয়ে যাবে। সেই চলার পথ সুগম করার জন্য ২০২২ থেকেই বাংলাদেশকে অর্জনগুলো মূল্যায়ন করে চলমান এবং সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলা করতে হবে।

প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো সত্যিকারের জবাবদিহি মূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা।আর তারজন্য সহায়ক গন্ততান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান সমূহকে শক্তিশালী ভিত্তি দিতে হবে। ২০১৪, ২০১৮ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জনমনে বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব আছে।আগামী নির্বাচনে স্বচ্ছতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ২০২২ সালে বাংলাদেশ প্রেক্ষিতে সম্ভব নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। এই বিষয়ে সরকারি দল, বিরোধী দলগুলোর মধ্যে সহযোগিতা অত্যাবশ্যক।এগিয়ে আসতে হবে সরকারি দলকেই।

দ্বিতীয় প্রধান চ্যালেঞ্জ দুর্নীতি নির্মূল করা।সর্বস্তরে দুর্নীতি যেভাবে ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে গাছে তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া না গেলে উন্নয়নের সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাবে না। তৃতীয় চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখার জন্য ব্যাপক বিনিয়োগ, কৃষি অর্থনীতিকে ধীরে ধীরে শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির পথে এগিয়ে দেয়া।এর জন্য প্রয়োজন হবে দীর্ঘস্থায়ী টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তা। জ্বালানি নিরাপত্তা অর্জনের পাশাপাশি জ্বালানি দক্ষতা অর্জন, জীবাস্ম জ্বালানির ব্যবহার  বাড়ানো, নিজস্ব জ্বালানিসম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।আর এসবের জন্য সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে দক্ষ জনবল সৃষ্টির বহুমুখী এবং ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেয়ার উপযুক্ত সময় ২০২২।

চতুর্থ চ্যালেঞ্জ সকল পর্যায়ে সরকারি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি স্থানীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহকে সম্পৃক্ত করার জন্য পলিসি নির্ধারণ, রেগুলেটরি সংগঠন গুলোকে শক্তিশালীকরণ।

সবশেষে বলবো বাংলাদেশকে এখন বিশেষজ্ঞদের উপর নির্ভর করতে হবে। আমলাদের কার্যপরিধি নির্ধারণ করে আমলাদের কাজ আমলারা করবে, কারিগরি বিশেষজ্ঞদের কাজের যথাযথ স্বাধীনতা দিতে হবে, তাহলেই জবাবদিহিমূলক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।  আশা করি সরকার অর্জনগুলো সুসংহত করার জন্য সাফল্য ব্যার্থতার মূল্যায়ন করে ২০২২ বছরটা আগামীর প্রস্তুতি গ্রহণ করবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

eighteen + twelve =