২০৩১ সালে আবিষ্কৃত গ্যাসের মজুদ শেষ হয়ে যাবে: ড. ইজাজ হোসেন

দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন দৈনিক ২০০০ মিলিয়ন ঘনফুট রাখতে হলে,বছরে কমপক্ষে ১০টি অনুসন্ধান কূপ খনন করতে হবে। এটা করা না গেলে প্রতিবছরেই উৎপাদন কমতে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) পেট্রোসেন্টারে আয়োজিত এক সেমিনার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন। জ্বালানি খাতের নিরাপত্তা ও চ্যালেঞ্জে মিডিয়ার ভূমিকা শীর্ষক ওই সেমিনারে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশের সদস্যরা অংশ নেন।

ড. ইজাজ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে ২০১৫ সালের ৫ মে সর্বোচ্চ ২৭৮৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করেছে। এরপর থেকে কমতে কমতে এখন ১৮০০ মিলিয়নে নেমে এসেছে। মজুদ কমে যাওয়ায় প্রতিদিনেই কমছে গ্যাসের উৎপাদন। আবিষ্কৃত গ্যাসফিল্ডে অবশিষ্ট মজুদ ৯ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট) এর নিচে নেমে গেছে। আর যদি আবিষ্কৃত করতে না পারি, মজুদ ২০৩১ সালের মধ্যেই ফুরিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, গ্যাসের মজুদ নিয়ে দুই ধরণের মত রয়েছে, একটি হচ্ছে অনেক গ্যাস রয়েছে। আরেকটি মত হচ্ছে আর বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এটার মাঝামাঝি একটি জায়গায় আসা দরকার। এজন্য দরকার তেল-গ্যাসের অনুসন্ধান জোরদার করা। অনেক বেশি বেশি কূপ খনন ছাড়া এই সিদ্ধান্তে আসা কঠিন। এজন্য অনুসন্ধানে বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি।

তিনি অংক কষে বলেন, একটি কূপ খনন করতে যদি ১০০ কোটি টাকা লাগে, ফিল্ডের উন্নয়ন, ২০ বছরের উৎপাদন খরচসহ আনুসাঙ্গিক ব্যয় ধরলাম ৫০০ কোটি টাকা। সেখানে যদি ৩ বিসিএফ গ্যাস পাওয়া যায় তাহলেও এলএনজি আমদানির চেয়ে বেশি লাভজনক। এক সময় ৫০ বিলিয়ন মজুদ পেলেও ফেলে রাখা হয়েছে। এখন ৫০ মিলিয়ন অনেক বড় মজুদ বিবেচনা করা হচ্ছে।

২০৩০ সালে দৈনিক ৪৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন হবে উল্লেখ করে বলেন, আর যদি নতুন গ্যাস ফিল্ড আবিস্কার না হয় তখন আমাদের মজুদ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। দেশীয় উৎস থেকে ২০০০ মিলিয়ন সরবারহ নিশ্চিত করা, বিদ্যমান ২টি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের সক্ষমতা আরও ১০০ বাড়িয়ে ১২০০ মিলিয়ন করা, আরও নতুন দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন জরুরি। দেশীয় উৎপাদন ২০০০ মিলিয়ন রাখতে হলে অনুসন্ধান জোরদার করার বিকল্প নেই। বিগত সরকারের সময়ে অনুসন্ধানে স্থবিরতার কারণেই আজকে এই করুণ পরিণতি মুখোমুখী বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, আমাদের অগভীর সাগরে খুব একটা সম্ভাবনা নেই। তবে গভীর সমুদ্রে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য গভীর সমুদ্রে যতো দ্রুত সম্ভব অনুসন্ধান শুরু করা উচিৎ।

ড. ইজাজ হোসেন সিস্টেম লস নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, জুলাই ২০২৪ থেকে মে ২০২৫ পর‌্যন্ত গড়ে ৭.৭৭ শতাংশ সিস্টেম লস হয়েছে। এতো বেশি সিস্টেম লস গ্রহণযোগ্য না, এটা কমিয়ে আনতে পারলে, সরবরাহ বাড়বে।

রিজার্ভার ব্যবস্থাপনা জন্য প্রয়োজনে বিদেশি কোম্পানি হায়ার করা, গ্যাস উৎপাদন কোম্পানিগুলোকেও বাপেক্সের মতো অনুসন্ধান কোম্পানিতে রূপান্তর, দ্বীপজেলা ভোলার গ্যাস পাইপলাইনে যুক্ত করা, একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ, বিকল্প জ্বালানি হিসেবে কয়লার বিষয়ে চিন্তা করাসহ বেশিকিছু সুপারিশ তুলে ধরেন।

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রেজানুর রহমান বলেন, দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধান ও উৎপাদন কার‌্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। ৫০ কূপ খনন প্রকল্পের পাশাপাশি ১০০ কূপ খনন প্রকল্পের কার‌্যক্রম দ্রুত এগিয়ে চলছে।।আমরা আশাকরছি এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন অনেক বাড়বে।

তিনি বলেন, উন্নয়ন কর্মকান্ড বাড়ানোর জন্য ২টি নতুন রিগ কেনা হচ্ছে। একটি রিগ ক্রয়ের প্রস্তাব খুব দ্রুতই একনেকে উঠবে। আরেকটির প্রাক সমীক্ষা চলমান রয়েছে। এগুলো হলে কূপ খনন কার‌্যক্রম আর দ্রুততর করতে পারবো। ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পুরো ভোলা জেলার সিসমিক সার্ভে করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি সেখানেও আমাদের মজুদ বৃদ্ধি পাবে।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপরেশন অ্যান্ড মাইন্স) প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ১০০ কূপ প্রকল্পের আওতায় ৬৯টি অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কূপ খনন করা হবে। এর মাধ্যমে দৈনিক গ্যাস উৎপাদন আরও ৯৮৫ মিলিয়ন বাড়বে। আর ৩১ ওয়ার্কওভার থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন উৎপাদন বাড়বে। ১০০ কূপ থেকে ১৯ টি কূপ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চুড়ান্ত করা হয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে শেষ হলে ওই ১৯টি কূপ থেকে ২৭৭ মিলিয়ন গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পেট্রোবাংলা পরিচালক (অর্থ) মো. মিজানুর রহমান, পরিচালক (পিএসসি) প্রকৌশলী মো. শোয়েব, পরিচালক (পরিকল্পনা) আব্দুল মান্নান পাটোয়ারী, পরিচালক (প্রশাসন) আলতাফ হোসেন ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান শামীম জাহাঙ্গীর, পেট্রোবাংলা ও বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাবৃন্দ সেমিনারে অংশ নেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

fifteen − five =