৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ছিল বিশ্বক্রিকেটে ছন্দময় দিন

কাল ক্রিকেট বিশ্বের দুই প্রান্ত দক্ষিণ গোলার্ধের প্রান্ত সীমায় নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ আর অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে দুটি টেস্ট ম্যাচ প্রাণভরে উপভোগ করেছে ক্রিকেট প্রেমীরা। ক্রাইস্টচার্চে ওয়েস্ট ইন্ডিজ লড়াই করে চতুর্থ ইনিংসে ম্যাচ জয়ের জন্য ৫৩১ রান তাড়া করে ৬ উইকেট হারিয়ে ৪৫৭ রান করে বিশ্ব ক্রিকেটে আলোড়ন তুলেছে। প্রথম ইনিংসে ১৬৭ রানে গুটিয়ে যাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বীরোচিত ব্যাটিং ক্রিকেট বিশ্ব দারুন উপভোগ করেছে।

অস্ট্রেলিয়ার পর্যটন নগরী ব্রিসবেনের গ্যাবায় চলছে ঐতিহ্যবাহী এশেজ সিরিজের দিন রাতের পিঙ্ক বল টেস্ট। পার্থের অপটাস স্টেডিয়ামে ইংলান্ডকে গুঁড়িয়ে দিয়ে দুই দিনেই টেস্ট জয় করে পাঁচ টেস্ট সিরিজে ১-০ এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া।  সিরিজ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকতে গাবা টেস্ট ঘুরে দাঁড়ানো থ্রি লায়ন্সদের জন্য অপরিহার্য। কাল তৃতীয় দিন সন্ধ্যায় দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩৪/৬ ইংল্যান্ড ইনিংস পরাজয় এড়াতে মরণপন যুদ্ধ করছে। অস্ট্রেলিয়ার সামনে ২-০ এগিয়ে যাওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

লড়াকু ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট  বিশ্বকে তাক লাগালো।

নিউ জিল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট

হাগলে ওভাল ক্রাইস্টচার্চ

নিউ জিল্যান্ড প্রথম ইনিংস ২৩১ অল আউট (কেন উইলিয়ামসন ৫২, মাইকেল ব্রেসওয়েল ৪৭, ওজে শিল্ডস ২/৩৪, জাস্টিন গ্রিভস ২/৩৫, জাইডেন সিলস ২/৪৪, খেমার  রোচ ২/৪৭)

নিউ জিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস ৪৬৬/৮ ডিক্লায়ার্ড ( রাচীন রাভিন্দ্রা ১৭৬, টম লাথাম ১৪৫, ডেভন কোনওয়ে ৩৭, কেমার রোচ ৫/৭৮, ওজে শিল্ডস ২/৭৪)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৬৭ অল আউট (শাই হোপ ৫৬, ট্যাগনারায়ণ চান্দেরপল ৫২. জ্যাকব ডাফি ৫/৩৪, মাঠ হেনরী ৩/৪৩)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংস ৪৫৭/৬ (জাস্টিন গ্রিভস ২০২* , শাই হোপ ১৪০, কেমার রোচ ৫৮* ,জ্যাকব ডাফি ৩/১২২)

ক্রাইস্ট চার্চে একসময়ে বিশ্ব ক্রিকেটের সব ফরম্যাটের অপ্রতিদ্বন্দী দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ মরণপণ যুদ্ধ করে আগ্রাসী কিউইসদের সঙ্গে এড়িয়েছে। ব্যাটসম্যানদের অসামান্য ধৈর্য্য আর দক্ষতার প্রতিরোধে স্বাগতিক নিউ জিল্যান্ড দলের সেট করা ৫৩১ রানের টার্গেট তাড়া করে ৪৫৭/৬ মাথা উঁচু করে শেষ করেছে।

গত শতাব্দীর সত্তর আশি দশকের অপ্রতিদ্বন্দী ওয়েস্ট ইন্ডিজ সব ফরমেট বিশেষত টেস্ট ক্রিকেটে এখন তলানীতে। অন্যদিকে নিউ জিল্যান্ড টেস্ট ক্রিকেটে শীর্ষস্থানীয় দলগুলোর অন্যতম। উপরন্তু স্বাগতিক দল যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে চতুর্থ ইনিংসে ৫৩১ রান করে টেস্ট জয়ের পাহাড় তুলে দিয়েছিলো। ম্যাচের পর্যাপ্ত সময় হাতে ছিল।

কেউ কখনো কল্পনা করেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ লড়াই করে শুধু টেস্ট পরাজয় এড়ানো নয় এমনকি একপর্যায়ে বিশ্ব রেকর্ড স্থাপনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। ৭২ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর সবার ধারণা ছিল সহজেই ম্যাচ জয় করবে নিউ জিল্যান্ড।

কিন্তু দেয়ালে পিঠ রেখে প্রথম শাই হোপ (১৪০) ৫ম উইকেট জুটিতে জাষ্টিন গ্রিভসকে (২০২* ) নিয়ে ১৯৬ যুক্ত করলো। হোপ আউট হবার পর দ্রুত টেভিন ইমলাক ফিরে গেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর দাঁড়ায় ৬/২৭৭।  শেষ দিনের খেলায় অবশিষ্ট অনেক সময়।

এই অবস্থায় মাত্র ১৩ ম্যাচ খেলা জাস্টিন গ্রিভস কেমার রোচকে সঙ্গী করে অবিচ্ছিন্ন ৭ উইকেট জুটিতে ১৮০ রান যোগ করে অনেক নতুন মাইল ফলক স্থাপন করলো। গ্রিভস নিজে চতুর্থ ইনিংসে অপরাজিত ২০২ রান করে  টেস্ট ব্যাটসম্যানদের এলিট ক্লাবের গর্বিত সদস্য হলো।

নানা কারণে পিছিয়ে পরা  ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এভাবে লড়াই করে টেস্ট পরাজয় এড়ানো দারুন আত্মবিশ্বাস যোগাবে। দুনিয়া জোড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের অনুরাগীরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের সোনালী আগামী দিনের স্বপ্নের জাল বুনবে।

নিশ্চিত পরাজয়ের পথে ইংল্যান্ড

অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড এশেজ সিরিজ

দ্বিতীয় টেস্ট, গাবা, ব্রিসবেন

ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস ৩৩৪ অল আউট (জো রুট ১৩৮, জাক ক্রলি ৭৬, হ্যারি ব্রুক ৩১, মিচেল স্টার্ক ৬/৭৫)

ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস ১৩৪/৬ (জাক ক্রলি ৪৪, মাইকেল নেসার ২/২৭, স্কট বোলান্ড ২৩৩, মিচেল স্টার্ক ২/৪৮)

অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস ৫১১ অল আউট (মিচেল স্টার্ক ৭৭, জেক ওয়েদারাল্ড ৭২, মারনাস লেবুচাঙ ৬৫, আলেক্স কারী ৬৩, স্টিভ স্মিথ ৬১, ক্যামেরুন গ্রিন ৪৫,ব্রাইডন কেস ৪/১৫২, বেন স্টোকস ৩/১১৩)

৪ উইকেট হাতে নিয়ে ইংল্যান্ড ইনিংস পরাজয় এড়াতে ৪৩ রানে পিছিয়ে।

আরো একটি এশেজ সিরিজে ২-০ এগিয়ে যাওয়ার শক্ত অবস্থানে অস্ট্রেলিয়া। পিঙ্ক বলের দিন রাত্রির আরো একটি টেস্ট জয়ের পথে সুদৃঢ় অবস্থানে এখন অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের ৩৩৪ রানের জবাবে অস্ট্রেলিয়া সকল ব্যাটসম্যানের অবদানে ৫১১ রান করে জয়ের সম্ভাবনা সৃষ্টি করে।

ইনিংসে ৫ ব্যাটসম্যান অর্ধশত রান করে। এক থেকে এগারো প্রতিটি ব্যাটসম্যান ন্যূনতম ১৩ রান করে। অস্ট্রেলিয়া দলের এই বিশাল সংগ্রহে ব্যাটসম্যানদের সাফল্য থাকলেও ইংল্যান্ডের দুর্বল ফিল্ডিং কম দায়ী ছিল না। অন্তত ৬ ক্যাচ হাত ফস্কে যায়।

১৭৭ রানে পিছিয়ে থাকা ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে ফ্লাড লাইটের নিচে ব্যাটিং করে স্টার্ক, নেসার, বোল্যান্ডের সাঁড়াশি আক্রমণের মোকাবেলায় তৃতীয় দিন শেষে ১৩৪/৬ করে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে।হতে পারে চতুর্থ দিন সকালে অস্ট্রেলিয়া অবশিষ্ট ৪ উইকেট দ্রুত তুলে নিয়ে ইনিংস ব্যাবধানে টেস্ট জয় করবে। অস্ট্রেলিয়া পাঁচ টেস্টের এশেজ সিরিজে ২-০ এগিয়ে যাবে।

অবশিষ্ট থাকবে এডিলেড, মেলবোর্ন, সিডনি টেস্ট। সম্ভাবনা থাকবে সিরিজ হোয়াইট ওয়াশের। অস্ট্রেলিয়ার মূল অস্ত্র পাট কামিন্স, জস হেজেলউড আর নাথান লায়ন্স দলে ফিরলে ইংল্যান্ড ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। মিচেল স্টার্ক একাই ইংল্যান্ড দলকে ধসিয়ে দিচ্ছে।দুই দলের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।

আমরা ব্রিসবেন টেস্ট সরাসরি উপভোগ করছি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

one × two =