অবশেষে গল টেস্টে কেউ জিতেনি, কেউ হারেনি

অনেক ঘটনার জন্ম দেয়া বাংলাদেশ শ্রীলংকা টেস্ট সিরিজের গল টেস্ট শেষ দিনে নাটকীয় পরিসমাপ্তির সম্ভাবনা সৃষ্টি করেও বৃষ্টি বিঘ্নিত হয়ে অমীমাংসিত ভাবে শেষ হয়েছে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৪৯৫ রানের জবাবে ৪৮৫ করেছিল স্বাগতিক দল। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ৬ উইকেট হারিয়ে ২৮৫ রান করে ইনিংস ঘোষণার পর শ্রীলংকার জয়ের টার্গেট ছিল সীমিত সময়ে ২৯৬ রান করা। বাংলাদেশ দ্রুত কয়েকটি উইকেট তুলে নিলেও সীমিত সময়ে স্বাগতিক দলকে গুটিয়ে দিয়ে ম্যাচ জয়ের সুযোগ ছিলনা। টেস্ট অমীমাংসিত থাকায় দুই দল টেস্ট  চ্যাম্পিয়নশিপে হিসাবের খাতা খুলেছে। বাংলাদেশের অতি উৎসাহী সমর্থকরা হয়তো বাংলাদেশের কিছুটা বিলম্বে ইনিংস ঘোষণা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু দেখুন গল উইকেটের চরিত্র স্বাভাবিক ছিলনা। ৫ম দিনেও শেষ দিকে ব্যাটসম্যানদের জন্য নরক হয়ে উঠেনি। বাংলাদেশ ৫০ ওভারে ২৫০ রান টার্গেট তাড়া করতে দেয়ার ঝুঁকি নেয়ার মত পরিস্থিতি ছিলনা। হিতে বিপরীত হতে পারতো। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে যতটুকু অর্জিত হয়েছে সেটিও পর্যাপ্ত।

নানা কারণে শ্রীলংকার সাম্প্রতিক সময়ে অন্যতম সেরা ক্রিকেটার এঞ্জেলো মাথিউজের বিদায়ী টেস্ট স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বেশ কিছু দিন ব্যাট হাতে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলো। এই টেস্টে দুই ইনিংসে অনবদ্য ব্যাটিং করে ১৪৮ এবং  ১২৫* যুগল শতরান করে ৫ম অধিনায়ক হিসাবে এই কৃতিত্ব অর্জন করলো। শান্ত ছাড়া অধিনায়ক হিসাবে দুই ইনিংসে শতরান করার কীর্তি আছেই ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, সুনীল গাভাস্কার, ইনজামামুল হক, বিরাট কোহলি এবং মিসবাহ উল হকের। শান্ত এর আগেও দেশের মাটিতে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে যুগল সতরাং করেছিল। বাংলাদেশের অপর অর্জন মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিমের টেস্ট জীবনের গোধূলি বেলায় রানে ফেরা। প্রথম ইনিংসে ১৬৩ রান করা মুশফিক দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৯ রান করে রান আউট হয়ে যায়। শান্ত, মুশফিক ছাড়াও রানে ফিরেছে লিটন কুমার দাস। প্রথম ইনিংসে ৯০ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলে নিজের জাত চিনিয়েছে। বল হাতে দীর্ঘদেহী স্পিনার নাঈম প্রথম ইনিংসে ১২১ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট নিয়ে শ্রীলংকান ইনিংসকে নিজেদের সংগ্রহের মধ্যে সীমিত রেখেছে। ভালো বোলিং করেছে হাসান মাহমুদ। কিন্তু নাহিদ রানা সঠিক লাইন লেন্থে ধারাবাহিক ভাবে বোলিং করতে পারেনি। প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো বোলিং করেছে তাইজুল ইসলাম। উইকেটের পেছনে দারুন ছন্দে ছিল লিটন।

শ্রীলংকার অর্জন বলতে বাংলাদেশের বিশাল রান পাহাড়ে চাপা পরেও লড়াই করে প্রথম ইনিংসে প্রায় বাংলাদেশকে ছুঁয়ে ফেলা। ওদের এই সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে সূচনাকারী ব্যাটসম্যান পিথুন নিশংকা ১৮৭ রানের আকর্ষণীয় ইনিংস খেলে। কামিন্দু মেন্ডিস ৮৭ আর দীনেশ চান্দিমাল ৫৪ রান করে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। বিদায়ী টেস্টের প্রথম ইনিংসে এঞ্জেলো মাথিউজ করেছে ৩৯। বৃষ্টি টেস্টের বিভিন্ন পর্যায়ে বিঘ্ন না ঘটালে হয়তো টেস্টে জয় পরাজয় নির্ধারিত হত।

বাংলাদেশের খেলায় গুণগত পরিবর্তন দেখা গাছে। অনেক দিন পর এই প্রথম বাংলাদেশ উভয় ইনিংসে ধারবাহিকভাবে ভালো ব্যাটিং করেছে। তবে উভয় ইনিংসে আনামুল হক দৃষ্টিকটু ভাবে আউট হওয়ায় ওপেনিং নিয়ে শংকা রয়ে গেছে। জানিনা দ্বিতীয় টেস্টে চৌকষ খেলোয়াড় মেহেদী হাসান মিরাজ ফিরে আসলে কাকে দিয়ে ইনিংস সূচনা হবে? দলে কিন্তু রিজার্ভ ওপেনার নেই। আর দ্বিতীয় টেস্টে অবশ্যই চার জন বোলার নিয়ে খেলার ঝুঁকি নিবে না বাংলাদেশ। হতাশা আছে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও জিততে না পারে। কিন্তু অর্জনটাও কম হয়নি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

3 + twelve =