আলী যাকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আলী যাকেরের আজ প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। আলোচিত মঞ্চ অভিনেত্রী ও সাংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব ২০২০ সালেই এই দিনে মৃতু্যবরণ করেন।

মঞ্চের ‘নুরলদীন’ কিংবা টেলিভিশনের ‘বড় চাচা’ মতো চরিত্রে অভিনয় শৈলি দিয়ে তিনিও স্থান করে নিয়েছিলেন মানুষের হৃদয়ে। বহুব্রীহি, আজ রবিবারের মতো নাটক ও নদীর নাম মধুমতী, লালসালু চলচ্চিত্রেও ছিল তার সফল পদচারণা। তিনি আলী যাকের। বাংলাদেশের একজন সুপরিচিত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। আজ ২৭ নভেম্বর তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। গত বছরের এই দিনে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। বনানী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

আলী যাকের ১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মোহাম্মদ তাহের ছিলেন চট্টগ্রাম সদর স্ট্রিটের মহকুমা প্রশাসক, মা রিজিয়া ছিলেন গৃহিণী। তিনি চার ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন। পৈতৃক বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে হলেও বাবার চাকরির কারণে দেশের বিভিন্ন শহরে ঘুরেছেন তিনি।

আলী যাকের সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিক এবং ১৯৬২ সালে নটরডেম থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক করেন তিনি। মায়ের চিকিৎসার জন্য কলকাতা গিয়ে তিনি শম্ভু মিত্র আর উৎপল দত্তের বেশ কটি নাটক দেখেছিলেন। সেই থেকে ভালোবাসা তৈরি হয় নাটকের প্রতি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় যুক্ত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে। স্নাতক শেষে করাচিতে এক ব্রিটিশ এজেন্সিতে ট্রেইনি এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি ঢাকায় এশিয়াটিকে চাকরি শুরু করেন।

স্বাধীন বাংলা বেতারের একজন শব্দসংগ্রামী ছিলেন আলী যাকের। স্বাধীনতার পর ঢাকায় ফিরে দায়িত্ব নেন এশিয়াটিকের। অভিনেতা ও নির্দেশক মামুনুর রশীদের আহ্বানে যুক্ত হন মঞ্চনাটকে। ১৯৭২ সালে মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকে অভিনয় দিয়ে শুরু হয় তার মঞ্চে যাত্রা। ১৯৭২ সালের জুনে আলী যাকের নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে যোগ দেন। তখন থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নাগরিকই ছিল তার ঠিকানা। বাকি ইতিহাস, সৎ মানুষের খোঁজে, দেওয়ান গাজীর কিস্‌সা, কোপেনিকের ক্যাপ্টেন, গ্যালিলিও, ম্যাকবেথসহ অনেক আলোচিত মঞ্চনাটকে অভিনয় ও নির্দেশনা দেন তিনি।

টেলিভিশনে ‘আজ রবিবার’, ‘বহুব্রীহি’, ‘তথাপি’, ‘পাথর দেয়াল’সহ অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন। ৫০টির বেশি বেতার নাটকে অভিনয় ছাড়াও লিখেছেন টেলিভিশনের জন্য মৌলিক নাটক। তার লেখা বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘সেই অরুণোদয় থেকে’, ‘নির্মল জ্যোতির জয়’ প্রভৃতি।

১৯৭৭ সালে সারা যাকেরকে বিয়ে করেন তিনি। তাদের দুই সন্তান। ছেলে ইরেশ যাকের ও মেয়ে শ্রিয়া সর্বজয়া।

শিল্পকলায় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদক এবং মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেছেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

eight + thirteen =