কম বাজেটে গৃহসজ্জা

ময়ূরাক্ষী সেন

লাবিবা অনেক দিন ধরেই চিন্তা করছেন নিজের বাসাটা সাজাবেন। একঘেয়ে সাদামাটা বাসা দেখে বিরক্ত তিনি। কিন্তু এমনি এতো খরচ তার মধ্যে নতুন কিছু ঘর সাজানোর অনুষঙ্গ কেনার সাহস পাচ্ছেন না। শুধু লাবিবা না অনেকেই আছেন যারা নিজের বাসাটা মনের মতো সাজানোর ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পারছেন না। তবে কি আর হবে না শখের ঘর সাজানো? আসলে কিছু কৌশল জেনে নিলে খুব সহজেই বাজেটের মধ্যে ঘর সাজানো সম্ভব। আর দিন শেষে ঘরে ফিরে কে না চায় ঘর হোক গোছানো আর নান্দনিক। কীভাবে আপনি সাধ্যের মধ্যে আপনার সাধের ঘর সাজিয়ে ফেলতে পারেন তা নিয়েই আমাদের আয়োজন।

আসবাবপত্র: ঘর সাজানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হচ্ছে আসবাবপত্র। অল্প কয়েকটি আসবাবপত্র আপনার ঘরের আউটলুক বদলে দিতে পারে নিমিষেই। তবে আসবাবপত্র মানে এই না যে খুব দামি কাঠের কারুকাজ করা হতে হবে। ঘরভর্তি করে আসবারপত্র রাখলে ঘর ছোট লাগে। তাই অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র না রাখাই ভালো। বাজেট কম হলে বসার ঘরে রাখুন বেতের সোফা। আজকাল বেতের সোফা বেশ জনপ্রিয় উঠেছে। বসার ঘর যদি বেতের আসবাব দিয়ে সাজান তবে প্রকাশ পাবে আপনার নান্দনিক ব্যক্তিত্ব। বসার ঘরে বেতের সোফা সেটের পাশে রাখতে পারেন দুটি বেতের মোড়া। বেতের আসবাবপত্র বেশ পরিবেশবান্ধবও। এটি মজবুত ও টেকসই। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বেতের আসবাবপত্র পাওয়া যায়। যেমন মোহাম্মদপুর, বসুন্ধরা সিটি, পান্থপথ ইত্যাদি। তবে আপনি ঘরে বসেও নিশ্চিতে বেতের আসবাবপত্র হোম ডেলিভারি পেতে পারেন কিছু পেইজ থেকে। যেমন অর্পা’স। তারা সারাদেশে বেতের আসবাব সাশ্রয়ী দামে ডেলিভারি দিয়ে থাকে। বাজারে বেতের সোফা সেট ১৫ হাজার থেকে ৪০ হাজারের মধ্যে পাওয়া যায়। এখন গতানুগতিক বেতের আসবাবের মধ্যেও নিয়ে আসা হয় বৈচিত্র্য। তাই দাম নির্ভর করছে ব্র্যান্ড ও মানের উপর।

দেয়াল সাজানো: আপনার মনের মতো করে দেয়াল সাজান। কারণ এতে ঘরের জায়গা অপচয় হবে না। দেয়ালে নিজের প্রিয় মানুষের সাথে প্রিয় মুহূর্তের ছবি ফ্রেম করে টানিয়ে রাখতে পারেন। কিংবা অবসরে রং তুলি দিয়ে নিজেই ছবি এঁকে দেয়ালে টানিয়ে রাখুন। ছোট-বড় আকারের নানা শিল্প দেয়ালে টানাতে পারেন। চাইলে দেয়ালে বুক সেলফ করতে পারেন, বই ছাড়াও সেখানে ছোট ছোট শোপিস রেখে দেওয়া যেতে পারে। বাজারে আজকাল ওয়াল পেপার পাওয়া যায়, রঙিন ওয়াল পেপার কিনে দেয়ালে টানিয়ে দিতে পারেন। ভাড়া বাসায় অনেক সময় দেয়াল ছিদ্র করা যায় না। সেক্ষেত্রে এখন এমন সব ফ্রেম পাওয়া যায় সুপার গ্লু কিংবা ডাবল টেপের মাধ্যমে দেয়ালে লাগানো যায়।

আয়না: আয়না দিয়ে শুধু নিজে সাজবেন কেন, ঘরকেও সাজান। ঘরের বিভিন্ন কোণায় দেয়ালে ছোট ছোট আয়না বসান। বাজারে বিভিন্ন ধরনের আয়না পাওয়া যায়। হাতে কারুকাজ করা আয়না রয়েছে, আবার বেতের আয়না পাওয়া যাচ্ছে সাশ্রয়ী দামে। নিজের বেডরুমে একঘেয়ে ড্রেসিং টেবিল না রেখে রাখতে পারেন বেতের আয়না কিংবা কাঠের আয়না। এতে ঘরের শোভা অনেক বেড়ে যাবে। এছাড়া টেরাকোটা, ক্লে, পাটি ইত্যাদি ফ্রেমের আয়না পাওয়া যায়। আবার চাইলে দেয়ালে শুধু আয়না বসাতে পারেন। জানালার উল্টো পাশে আয়না বসাতে পারেন, এতে হঠাৎ দেখায় রুমের আকার বড় মনে হবে। বেসিনের উপরেও রাখতে পারেন বাহারি আয়না। সেক্ষেত্রে বেসিনের রঙের সাথে মিল রেখে আয়না বেছে নিতে হবে, তা না হলে বেমানান লাগবে। আবার দেয়ালে ছবির ফাঁকে ফাঁকে রাখতে পারেন সঠিক ফ্রেমের আয়না। বাজারে বিভিন্ন ডিজাইনের আয়না পেয়ে যাবেন। ডিজাইনের উপর দাম নির্ভর করবে।

বই: নীলক্ষেত থেকে কম দামে কিছু বই কিনে নিয়ে এনেও কিন্তু আপনার ঘরের কর্নার সাজাতে পারেন। এতে যদি আপনার বই পড়ার মতো অভ্যাস তৈরি হয় তাতেও ক্ষতি কি? ঘরের কর্নারে বুক সেলফ রাখুন। তবে ঘরের বাকি আসবাবপত্রে সাথে যাতে বুক সেলফের মিল থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সুন্দর করে বই সাজিয়ে রাখলে যেকোনো ঘরের সৌন্দর্য অনেক বেড়ে যায়। রুম ছোট হলে বুক সেলফ দেয়ালে সেট করে নিন। শুধু বুক সেলফ না অনেক সময় খাটের উপর ছোট বক্স থাকে সে বক্সেও বই রেখে দিতে পারেন। বই দিয়ে ঘর সাজাতে আপনার যে একদিনে প্রচুর বই কিনে আনতে হবে এমন না। বাজেট করে প্রতি মাসে অল্প কিছু বই সংগ্রহ করুন।

ল্যাম্প: ল্যাম্পের আলোয় বদলে যাবে আপনার শখের ঘর। বাজারে ৪০০ থেকে ৫০০০ টাকার মধ্যে টেবিল ল্যাম্প পাওয়া যায়। তাই খুব সহজেই বাজেটের মধ্যে ল্যাম্প কিনে সাজিয়ে ফেলুন। তবে ল্যাম্প কেনার আগে কোথায় ল্যাম্প রাখবেন, সে স্থানের সাথে মানানসই কি না দেখতে হবে। বেডরুমে ব্যবহার করুন কিছুটা হালকা আলো। আপনার ঘরের আকার বুঝে ল্যাম্প বেছে নিন। ঘর ছোট হলে খুব বড় ল্যাম্প কিনলে ঘর বেমানান লাগবে। হলুদ কিংবা কমলা রঙের ল্যাম্প কিনলে তা ঘরের শোভা বাড়িয়ে দেয়। চাইলে খাবার টেবিলেও ল্যাম্প রাখা যেতে পারে। খুব দামি দামি লাইটিং না করে সাশ্রয়ী দামের ল্যাম্প কিনে আপনার ঘর সাজিয়ে তুলুন।

গাছ ও ফুল: আপনার ঘরে ইনডোর প্লান্ট করুন। ঘরের শোভা বাড়ানো ছাড়াও ঘরে গাছ রাখার বেশ উপকারিতা রয়েছে। এতে অক্সিজেন পাওয়া যায় ও ঘর ঠান্ডা হয়। এছাড়া যান্ত্রিক জীবনে কিছুটা প্রশান্তি এনে দেয়। তাই ঘরে মানিপ্লান্ট, অ্যালোভেরা, এরিকা পাম, ক্যাকটাস ইত্যাদি গাছ রাখতে পারেন। গাছের টবেও কিছুটা ভিন্নতা আনা যেতে পারে। যেমন হ্যান্ডপেইন্ট টব। মাটির টবে কিছুটা নকশা করা কিংবা বেতের ঝুড়িতে গাছ রাখা যেতে পারে। চাইলে ছোট জারে মানিপ্লান্ট রাখা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে দু-দিন পর পর পানি বদলে দিতে হবে। ঘরে টেবিলে ফুলদানিতে তাজা গোলাপ, রজনিগন্ধা ও দোলনচাঁপার মতো সুগন্ধিযুক্ত ফুল রাখা যেতে পারে।

বিছানার চাদর ও পর্দা: ঘরের পর্দা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা স্নিগ্ধ রং বেছে নিতে হবে। যেমন হালকা গোলাপি, সাদা, আকাশী। চেষ্টা করতে হবে বিছানার চাদরের সাথে পর্দার মিল রাখার। এতে ঘরের সৌন্দর্য অনেক বেশি বেড়ে যায়।

দেশীয় ঐতিহ্য: ঘরে দেশীয় ঐতিহ্যের ছোঁয়া রাখতে পারেন। বাজারে খুব কম দামেই দেশীয় গৃহসজ্জার অনুষঙ্গ পাওয়া যায়। ঘরে রাখুন দেশী পণ্য। আপনার শোকেসে রাখতে পারেন কিছু মাটির তৈরি শোপিস। ফল রাখার ঝুড়ি হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন বেতের ঝুড়ি। ঘরে প্লাস্টিকের ডাস্টবিন ব্যবহার না করে বাঁশের বাস্কেট রেখে দিন। ঘরে হারিকেন লাইট ঝুলিয়ে রাখতে পারেন। এতে ঘরের শোভা বাড়ার পাশাপাশি ঐতিহ্যও প্রকাশ পাবে। দেয়ালে ছিদ্র করে কুলা কিংবা হাত পাখা ঝুলিয়ে রাখতে পারেন। দেয়ালে ফ্রেম করে রাখা যেতে পারে নকশীকাঁথা। হাতে করা রিক্সা পেইন্টিংয়ের পণ্য ব্যবহার করতে পারেন। দেশীয় এইসব পণ্য বিভিন্ন দামে পেয়ে যাবেন আড়ং, বিশ্বরঙ, অঞ্জন, কে ক্রাফট, যাত্রা, দেশাল, খুঁত ইত্যাদি জায়গায়। এছাড়া নিউ মার্কেটের কিছু দোকানেও পাওয়া যায় দেশীয় সব পণ্য।

ঘর সাজানোর জন্য সবসময় যে খুব দামি অনুষঙ্গ লাগবে এমন না। একটু চোখ খোলা রাখলে আপনি খুব সহজেই আপনার ঘর সাজিয়ে ফেলতে পারবেন। সব সামগ্রী যে নামিদামি ব্র্যান্ড থেকে কিনতে হবে তা-ও না। ফুটপাতেও আজকাল গৃহসজ্জার সামগ্রী পাওয়া যায়। সেখান থেকে আপনার রুচি অনুযায়ী বেছে নিতে পারেন স্বল্প মূল্যে। ঘর যেমনই হোক চেষ্টা করতে হবে সবসময় পরিপাটি রাখার। যত দামি আসবাব দিয়ে ঘর সাজানো হোক না কেন গুছিয়ে রাখা না হলে তা কখন দৃষ্টিনন্দন হয় না।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ইন্টেরিয়র

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

12 − 2 =