কাতারকে হারিয়ে শেষ ষোলতে নেদারল্যান্ড

শেষ ষোলতে স্থান পাবার জন্য নেদারল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল একটি মাত্র পয়েন্ট। গ্রুপের প্রথম ম্যাচে সেগোলকে ২-০ গোলে হারালেও পরের ম্যাচে ১-১ গোলে ইকুয়েডরের সঙ্গে ড্র করেছিল ডাচরা। সেই হিসেবে আজ এ গ্রুপে নিজেদেও  তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে  স্বাগতিক কাতারের কাছ থেকে একটি পয়েন্ট পেলেই নক আউট পর্ব নিশ্চিত হয়ে যেত অরেঞ্জদের। কিন্তু আজ আল-খোর এর আল-বায়াত স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে স্বাগতিকদের ২-০ গোলে পরাজিত করেছে লুইস ফন গালের শিষ্যরা। বিজয়ীদের হয়ে গোল করেছেন যথাক্রমে কোডি গাকপো ও ফ্রেংকি ডি জং।

এদিকে প্রথম দুই ম্যাচ হেরে টুর্নামেন্ট থেকে আগেই বিদায় নিশ্চিত হয়েছিল  স্বাগতিক কাতারের । তাই নিয়ম রক্ষার ম্যাচে মাঠে নামলেও কাতারের লক্ষ্য ছিল  নির্ভার থেকে একটি অঘটনের জন্ম দিয়ে বিশ্বকাপের ইতিহাসে নিজেদের নামটিও যুক্ত করা। কিন্তু সেটি আর সম্ভব হয়নি। পরাজয় মেনেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হলো তাদের।

এটি ছিল বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসর যেখানে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে স্বাগতিকরা। এর আগে ২০১০ সালে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল দক্ষিন আফ্রিকা। এর আগে গ্রুপ পর্বে সর্বশেষ ১৫টি বিশ্বকাপ ম্যাচেই অপরাজিত ছিল নেদারল্যান্ড।

ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই ডাচ গোল রক্ষক আন্দ্রিয়েস নোপার্টের পরীক্ষা নেন কাতারের হাসান আল-হায়দোস। নেদারল্যান্ড সিমান্তে ডিফেন্ডার ন্যাথান আকের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে ডি বক্সের বাইরে থেকে আচমকা জোড়ালো শট নেন তিনি। তবে বলটি গ্রিপে পুরে নেন গোলরক্ষক নোপার্ট। পরের মিনিটই আক্রমণে যায় নেদারল্যান্ড। এই সময় কাতারের গোলপোস্টের সামনে জটলার সৃষ্টি হলে গোল করতে পারেননি নেদারল্যান্ডের ১০ নম্বর জারি জার্সি পরিহিত তারকা খেলোয়াড় মেমফিস ডিপে।

১২ মিনিটে আরও একটি চমৎকার আক্রমণ রচনা করে নেদারল্যান্ড, কিন্তু এবারও কাতারের পোস্টের সামনে জটলার সৃষ্টি হয় এবং শেষ পর্যন্ত পোস্ট লক্ষ্য করে শট নিতে ব্যর্থ হন কোডি গাকপো। তার দুর্বল শটের বলটি চলে যায় গোললাইন অতিক্রম করে মাঠের বাইরে। ম্যাচের প্রথম ১৫ মিনিটে কমপক্ষে পাঁচটি আক্রমণ রচনা করেছিল নেদারল্যান্ড। কিন্তু একবারের জন্যও পোস্টে শট নিতে পারেনি তারা।

শেষ পর্যন্ত নেদারল্যান্ডের হয়ে গোল খরা দূর করেন কোডি গাকপো। ম্যাচের ২৬তম মিনিটে মধ্যমাঠ থেকে বল নিয়ে ডেভি ক্লাসেন এগিয়ে দেন গাকপোকে। দুই কদম এগিয়ে ডি বক্সের ভেতর ঢুকেই ডান পায়ের মাটি কামড়ানো শটে ডান প্রান্ত দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন তিনি (১-০)। ২৮ মিনিটে কাতার প্রতি আক্রমণ করেছিল বটে। মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে একাই ডিবক্সের কাছাকাছি এসে শট নেন মিডফিল্ডার ইসমাইল মোহাম্মদ। তবে তার শটের বলটি সহজেই গ্রিবে পুরে নেন ডাচ গোল রক্ষক নোপার্ট।

বিরতিতে যাবার ৫ মিনিট আগে ব্যবধান দ্বিগুন করার সুযোগ পেয়েছিল নেদারল্যান্ড। ৪০ মিনিটে কাতারের রক্ষণের ভুলে আবারও গোলের সুযোগ পেয়ে যান ডাচ স্ট্রাইকার গাকপো। কিন্তু ডি বক্সের ভেতর থেকে তার নেয়া শটের বলটি ক্রসবারের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। ফলে ১-০ গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে যায় নেদারল্যান্ড।

তবে বিরতি থেকে ফেরার পরপরই ব্যবধান দ্বিগুন করে ডাচরা। ম্যাচের ৪৯তম মিনিটে মধ্যমাঠ থেকে উড়ে আসা বল রিসিভ করে পোস্টের সামনে থেকে শট নেন মেমফিস । বলটি ফিরিয়ে দেন কাতারের গোল রক্ষক মেশাল বারশাম। কিন্তু পেছন থেকে দৌঁড়ে এসে ফিরতি বল ডান পাশ দিয়ে ফের জালে জড়িয়ে দেন ফ্রেংকি ডি জং (২-০)।

এরপর ৬৭ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়ে যায় নেদারল্যান্ড। মাঝ মাঠ থেকে উড়ে আসা বল ডি জং রিসিভ করে দেন গাকপোকে। তিনি ফের বলটি জালেও জড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু রেফারির সন্দেহ হওয়ায় ভিএআর রিপ্লে দেখার সিদ্ধান্ত নেন। সেখানে দেখা যায় ডি জং বল রিসিভ করার পর সেটি গাকপোর ডান হাতে লেগেছিল। ফলে গোল বাতিল করে হ্যান্ডবলের নির্দেশ দেন তিনি।

এরপর উত্তেজনাহীন আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণে ম্যাচটি এগিয়ে গেলেও শেষ বাঁশি বাজার আগে আর কোন পক্ষ গোল করতে পারেনি।  ফলে ২-০ গোলের জয় নিয়েই মাঠ চাড়ে অরেঞ্জরা। এই জয়ে এ’ গ্রুপের শীর্ষস্থানও নিশ্চিত করেছে তারা। গ্রুপ সেরা হিসেবে শেষ ষোলর লড়াইয়ে বি গ্রুপের রানারআপ দলকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাবে তারা।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

20 − five =