কাল থেকে ওটিটিতে প্রয়াত আহমেদ রুবেল অভিনীত ‘পেয়ারার সুবাস’

নিজের সিনেমার অর্থাৎ ‘পেয়ারার সুবাস’-এর প্রিমিয়ার শো দেখতে এসে পথিমধ্যে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান গুণী অভিনেতা আহমেদ রুবেল। ঘটনাটি যেন সিনেমার প্লটকেও হার মানায়। জীবন যে সিনেমার চেয়ে কোনো অংশে কম না তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেল এই ঘটনা।

সিনেমা হলে প্রশংসা কুড়ানোর পর আগামী ২১ মার্চ রাত ৮টায় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে মুক্তি পাচ্ছে নুরুল আলম আতিক পরিচালিত সিনেমা ‘পেয়ারার সুবাস’। সিনেমাটি উৎসর্গ করা হয়েছে আহমেদ রুবেলকে। ৯২ মিনিটের এই সিনেমায় আহমেদ রুবেলের সাথে অভিনয় করেছেন গুণী অভিনেতা—জয়া আহসান, তারিক আনাম খান, সুষমা সরকার, দিহান, নূর ইমরান মিঠু সহ আরও অনেকেই। সিনেমাটি প্রযোজনা করেছে আলফা-আই স্টুডিওজ লি ও সহ-প্রযোজনায় চরকি।

পেয়ারার মামা টাকার লোভে তাকে বিয়ে দেয় বৃদ্ধ আয়নাল মুন্সীর সাথে। বৃদ্ধ আয়নাল মুন্সী তার পৌরষত্ত্ব প্রমাণে দিনের পর দিন জোড়পূর্বক চড়াও হয় পেয়ারার ওপর। প্রতিদিনের এই অত্যাচারে পেয়ারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। মুক্তির পথ খুঁজতে থাকে। প্রতিশোধ নেবার জন্য হাঁসফাঁস করতে থাকে তার মন। ঠিক সেই মুহূর্তে হাজির হয় হাশেম। তারপর পেয়ার পরিণতি কি হয়? সে কি পারে বৃদ্ধ মুন্সীর অত্যাচার থেকে নিজেকে বাঁচাতে?

পেয়ারা চরিত্রে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান। তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণরা সব সময় যে দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ছবি দেখি বা কাজ দেখি আতিক আসলে সব সময় নতুনভাবে, নতুন কিছু দেখতে শেখায় বা দেখায়। আমার মনে হয় যে, এই ধরনের পটভূমিতে হয়তো বাংলা ছবি এর আগে হয়নি। আমার চরিত্রসহ এই সিনেমার প্রতিটা চরিত্র বেশ স্ট্রং, ভীষণ র চরিত্র। আতিকের প্রথম ছবিতে আমি ছিলাম। তার সাথে কাজ করা আমার জন্য বরাবরই আনন্দের। সিনেমাটা প্রেক্ষাগৃহের পর এবার চরকিতে আসছে এটা আনন্দের।’

আহমেদ রুবেলের স্মৃতিতে জয়া বলেন, ‘সব আনন্দ ছাপিয়ে আমাদের মাঝে এখন তীব্র বেদনা হচ্ছে আহমেদ রুবেলের চলে যাওয়া। প্রিমিয়ারের দিনের ঘটনাটা আমাদের সবার মাঝে ভার হয়ে জমে আছে। অনেক কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারি না। শুধু এতটুকু বলতে পারি শিল্পী তার কাজ দিয়ে সবার মাঝে থেকে যান আহমেদ রুবেলও তার কাজ দিয়েই আমাদের মাঝে থেকে যাবেন।’

সিনেমায় অন্যতম চরিত্রে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান। তিনি বলেন, ‘সিনেমার গল্পটা বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটের নানাদিক খুব মেটাফরিক ভাবে দেখানো হয়েছে। দর্শক সিনেমাটা উপভোগ করবে আশা করছি। সিনেমাটা চরকিতে মুক্তি পাচ্ছে যেটা আমাদের জন্য খুব আনন্দের সংবাদ।’

সিনেমাটির চিত্রগ্রাহক ছিলেন অতীশ সাহা। এডিট করেছেন সজল অলক। কালার গ্রেডিং-এ ছিলেন দেবজ্যোতি ঘোষ। মিউজিক ও ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর করেছেন রাশেদ শরিফ শোয়েব। সাউন্ড ডিজাইনে ছিলেন নাহিদুর রহিম চৌধুরী।

পেয়ারার সুবাস-এ সবার চরিত্রের লুক তৈরিতে মেক-আপ আর্টিস্ট হিসেবে ছিলেন মো. ফারুক। কস্টিউম ডিজাইনার মারিয়া ফারিহ উপমা ও আর্ট ডিরেক্টর ছিলেন মাহমুদ উল ওয়াদুদ রেইনি।

চরকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি বলেন, ‘আমাদের কাছে খুব বিশেষ একটা সিনেমা পেয়ারার সুবাস। আহমেদ রুবেল ভাইয়ের চলে যাওয়াটা আমাদের জন্য খুব বড় একটা ধাক্কা। তবে আমরা বিশ্বাস করি রুবেল ভাই তার কাজ দিয়েই আমাদের মাঝে চিরদিন থাকবেন। আর এই সিনেমার সঙ্গে দেশের গুণী নির্মাতা ও গুণী অভিনয়শিল্পীরা যুক্ত আছেন। চরকি এই ছবির সাথে যুক্ত হতে পেরে বেশ আনন্দিত। বাংলা সিনেমাকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেয়ার জন্য চরকি সব সময় কাজ করছে।’

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক মর্যাদাপূর্ণ মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল-এর ৪৫ তম আসরের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে অফিশিয়াল সিলেকশন পেয়েছিল ‘পেয়ারার সুবাস’। দ্য ডেড ম্যানস ব্রাইড, ফার্স্ট লাভ, প্যারাডাইস লস্ট সহ ১২টি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ছবির সঙ্গে নির্বাচিত হয়েছিল। হয়েছিল সিনেমাটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

two × four =