দিব্য-সৌম্য ও টাপুর-টুপুরদের গল্প

মাধবী লতা

পৃথিবীর জনসংখ্যার মাত্র তিন ভাগ মানুষ যমজ। কিন্তু যমজদের নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। যমজদের নিয়ে আছে মজার গল্প। যমজরা অনেক ভালো বন্ধু। একজন অপরজনের সঙ্গে রাগারাগি করলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। যমজদের অনেকেই দাবি করেন যে, তারা একজন কী ভাবছেন অপরজন তা বুঝতে পারেন। একজন বিপদে পড়লে আরেকজন দূর থেকেও তা অনুভব করতে পারেন। যমজরা সাধারণত একে অপরকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবেন না।

দেশের এই সময়ের খ্যাতিমান তারকাদম্পতি বৃন্দাবন দাস-শাহনাজ খুশী ও সতীর্থ রহমান-গোলাম ফরিদা ছন্দার তারকা জমজ সন্তানদের নিয়ে আজকের আয়োজন। মিডিয়ায় এই সময়ের প্রিয় মুখ দিব্য-সৌম্য। টাপুর-টুপুরও এরই মধ্যে উপহার দিয়েছেন বেশ সুন্দর কিছু কাজ। বিভিন্ন রকমের ব্যতিক্রমধর্মী চরিত্রের জন্য ডাক পড়ে তাদের। গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, এই চার তরুণ তারকা শিগগিরই নতুন এক চমক নিয়ে হাজির হতে যাচ্ছেন এক ফ্রেমে। সেপর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে দর্শকদের।

দিব্য-সৌম্যের জন্মদিন

বৃন্দাবন দাস ও শাহনাজ খুশি দম্পতির যমজ দুই সন্তান সৌম্য জ্যোতি ও দিব্য জ্যোতি। খুব অল্পদিনেই দুই ভাই নিজেদের জায়গা শক্ত করে নিয়েছেন। ১৪ অক্টোবর ছিল তাদের জন্মদিন। জন্মদিনে তাদেরকে শুভেচ্ছায় সিক্ত করেছেন অনেক তারকা। পরীমণি তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে লিখেছেন, ‘হ্যাপি বার্থডে জোড়া শালিক।’ সৌম্য-দিব্য’র জন্য ভালোবাসার ইমোজিও জুড়ে দিয়েছেন। নায়িকা আরও বলেন, ‘কি দারুন একজন মা পেয়েছো তোমরা! মাকে এমন যত্নেই রেখ। এত্ত এত্ত অর্জন হোক তোমাদের। সবাইকে নিয়ে আনন্দে বাঁচ।’ অভিনেত্রী বিজরী বরকতুল্লাহ লিখেছেন, ‘শুভ জন্মদিন মানিক জোড় দিব্য-সৌম্য। তোদের জন্য অনেক দোয়া, আদর আর ভালবাসা।’ আরেক অভিনেত্রী গোলাম ফরিদা ছন্দা বলেন, দিব্য জ্যোতি-সৌম্য জ্যোতি শুভ জন্মদিন বাবা। তোমরা আমাদের সবসময় ছোট। কিন্ত ছোট্ট হলেও তোমরা করে ফেলেছ অনেক বড় বড় কাজ! তোমাদের অসাধারণ কাজ দিয়ে, গুণ নিয়ে, জ্যোতি ছড়িয়ে আকাশসম হও। মানুষ হয়ে মা বাবাকে কর সন্মানিত। আর ‘মুজিব-একটি জাতির রূপকার’ ছবির জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন। কণ্ঠশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নি লিখেছেন, ‘শুভ জন্মদিন দিব্য সৌম্য, আমরা তোমাদের নিয়ে গর্বিত।’ ছেলের জন্মদিনে মা শাহনাজ খুশি লিখেছেন, ‘শুভ জন্মদিন মাম্মা বাচ্চা! আমার আয়ুতে আয়ুষ্মান হও’।

কে বড় কে ছোট? মিল-অমিল

দিব্য জ্যোতি-সৌম্য জ্যোতি এখন অভিনয়ে দারুণ প্রশংসা কুড়াচ্ছেন। সন্তানদের কৃতিত্বে গর্বিত তাদের মা। অভিনেত্রী শাহনাজ খুশী এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন, ‘বয়সে যদি ছোট-বড় করতেই হয়, তবে সৌম্যর দুই মিনিটের বড় দিব্য। দুই ভাইয়ের চেহারায় এতটাই সাদৃশ্য যে ফোনের ফেসলক একজনেরটা দিয়ে আরেকজনেরটা খুলে যায়। বাবা বৃন্দাবন দাস এখনো হঠাৎ করে বুঝতে পারেন না দুজনের মধ্যে কে সৌম্য আর কে দিব্য। তবে মা এক পলকেই ধরতে পারেন। এইতো সেদিন একসঙ্গে সৌম্যর সঙ্গে টিভি দেখছিলেন বৃন্দাবন। দেখতে দেখতে বলেন, দিব্য তোকে না বলেছিলাম ওর অভিনয়টা আমার খুব ভালো লেগেছে। হেসে সৌম্য বলেন, বাবা তুমি আমাকে বলোনি, দিব্যকে বলেছ হয়তো।

মা-বাবাকে নিয়ে যা বলেন দিব্য-সৌম্য

অনেকেই ভেবে নেন, দুই ছেলের জীবনে রয়েছে মা-বাবার প্রচ্ছন্ন আধিপত্য। তা নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন। খুশি বলেন, ‘ওদের ব্যক্তিস্বাধীনতায় আমি কখনোই হস্তক্ষেপ করতে চাই না। যদি ওদের প্রাইভেসির প্রশ্ন আসে, সেটা কী হতে পারে? যেমন ওদের যারা বন্ধু-বান্ধব, বেশির ভাগকেই আমি একদম বাচ্চাকাল থেকে চিনি। ওরা সবকিছুই আমার কাছে বলতে পারে।’ মায়ের কথায় সায় দিয়ে সৌম্য ও দিব্য বলেন, ‘মা-বাবা কখনো বলেননি যে ক্লাসে তোমাদের ফার্স্ট, সেকেন্ড হতেই হবে বা অমুক সাবজেক্টে পড়তে হবে। এটা করতে হবে, ওটা করা যাবে না। আমরা যা চেয়েছি, সেটাই মা সাপোর্ট দিয়েছে। হয়তো বুঝিয়েছেন এটা এমন না অমন। অভিনয়ের ক্ষেত্রে পুরোটাই মা-বাবার সাহায্য পাই। তাদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত শেখার চেষ্টা করি।’

পড়া-লেখা

ছোটবেলা থেকে সৌম্য-দিব্য একই স্কুলে একই ক্লাসে পড়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে দুজন আলাদা হয়ে গেলেন। দুজনই পড়ছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে সৌম্য ইংরেজি সাহিত্য আর দিব্য পড়ছেন অর্থনীতি নিয়ে।

প্রশংসিত দুই ভাই

হাতে গোনা যে কটি কাজ করেছেন, সেখানেই পেয়েছেন প্রশংসা। ‘মহানগর ২’, ‘কাইজার’, ‘কারাগার’ ওয়েব সিরিজগুলো দিব্য-সৌম্যকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দিয়েছে। দিব্য-সৌম্য দুই ভাই-ই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে নির্মিত আলাদা দুইটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। দুজনই অভিনয় করেছেন বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে। শ্যাম বেনেগালের ‘মুজিব’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন দিব্য। বঙ্গবন্ধুর কিশোরবেলার চরিত্রে দেখা গেছে তাকে। দিব্যর মতো সৌম্যও বঙ্গবন্ধুর কিশোরবেলার চরিত্রে হাজির হচ্ছেন। অভিনয় করতে যাচ্ছেন ‘টুঙ্গিপাড়ার দুঃসাহসী খোকা’ নামের সিনেমায়। যেটি নির্মাণ করছেন মুশফিকুর রহমান গুলজার।

 

টাপুর-টুপুর

মা গোলাম ফরিদা ছন্দা গুণী অভিনেত্রী ও বাবা সতীর্থ রহমান রুবেল নন্দিত নির্মাতা। তাদের যমজ দুই মেয়ে রোদেলা সুভাষিণী টাপুর ও মেঘলা সুহাসিনী টুপুর। দুই বোনই সমানতালে অভিনয় করে চলেছেন। সম্প্রতি ভিন্ন ভিন্ন কাজে দুই বোনই দেখিয়েছেন চমক।

টাপুর-টুপুরের শুরু

এক সাক্ষাৎকারে টাপুর শুনিয়েছিলেন তাদের শুরুটা। টাপুর বলেন, ‘আমরা দু’জনই ছোটবেলা থেকেই অভিনয় করি। আমাদের বয়স যখন ছয় সাড়ে ছয় তখন আমার বাবার (রহমান রুবেল) পরিচালনায় ‘খোলস’ নামের একটি নাটকে আমরা দু’জনই অভিনয় করি। এটা সম্ভবত ২০১২ সালে। ওই বছরই নাটকটি এটিএন বাংলায় প্রচার হয়। এই নাটক দিয়েই আমাদের মিডিয়াতে পথচলা শুরু। এরপর চয়নিকা চৌধুরী ম্যামের অনেকগুলো নাটকে অভিনয় করার সুযোগ আসে। কোনোটায় আমরা দুই বোনই অভিনয় করেছি। কোনোটায় আলাদাভাবে। এরপর মাতিয়া বানু শুকু ম্যামের ‘প্রজাপতি’ টেলিফিল্মে অভিনয় করি। ‘ইচ্ছে ঘুড়ি’ ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেছি। এছাড়াও বেশকিছু বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেছি। বিজ্ঞাপনগুলোর নির্মাতা ছিলেন অমিতাভ রেজা, গাজী শুভ্র, সামি প্রমুখ।’

টাপুরের সিনেমা

দেশভাগ, দেশপ্রেম ও প্রেমের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘দেশান্তর’ সিনেমা। এখানে মনসা চরিত্রে অভিনয় করেছেন টাপুর। কবি নির্মলেন্দু গুণের দেশান্তর উপন্যাস অবলম্বনে আশুতোষ সুজন সরকারি অনুদানের এই সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন। এই সিনেমার জন্য ১৩-১৪ বছরের একজন অভিনেত্রী খুঁজছিলেন নির্মাতা। খুঁজে নেন টাপুরকে। এখানে দেখা যায়, মনসা তার বাবা-মায়ের সবচেয়ে ছোট মেয়ে। তার বড় ভাই আছে। মনসা কনিষ্ঠ হওয়ায় তার বেড়ে ওঠা পরিবারের সকলের আদর-আহ্লাদ পেয়ে। ভীষণ দুরন্ত ও চঞ্চল মেয়েটি। বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায় সে। সবাইকে মাতিয়ে রাখে। হাসিখুশি এই মেয়েটির জীবনে এক ঝড় আসে। হঠাৎ করে কিশোরী মনসার বিয়ে হয়ে যায়। মাথার উপর আকাশ ভেঙে পড়ে। ১৯৪৭ কিংবা ১৯৫১ সালের সময়টা ধরা হয়েছে সিনেমায়। সেসময় বাবা-মায়েরা অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিতেন। বিয়ের পরে এক নতুন জীবন শুরু হয় মনসার। তার জীবনটা বদলে যায়। বিয়ের আগের আর বিয়ের পরের মনসার পার্থক্য অনেক। পর্দায় এই মনসাকে দেখার আমন্ত্রণ। তার দেশপ্রেমও মানুষের মনকে নাড়া দেবার মতোই ছিল। মনসার বদলে যাওয়া মানুষকে ভাবায়।

অভিনয় ক্যারিয়ার গড়া টাপুরের স্বপ্ন

অভিনয়ের সঙ্গেই থাকতে চান টাপুর। তিনি বলেন, ‘অভিনয়টা ছোটবেলা থেকেই ভীষণ ভালোবাসি। সবসময় শেখার চেষ্টা করি। যখন ক্লাস ফোর-এ পড়ি তখনই পশ্চিমবঙ্গে দার্জিলিংয়ে পড়ালেখার জন্য চলে আসি। আমরা দুই বোন। তখন থেকে এখানেই পড়ালেখা চলছে আমাদের। পরীক্ষা শেষে ছুটিতে বাড়িতে যাই। তখন নাটকে অভিনয় করা হয়। আবার এখানেও কয়েকটি নাটকের শুটিংয়ে অংশ নিয়েছি। বাবা বেশকিছু নাটকের শুটিং করেছেন দার্জিলিংয়ে, কালিম্পংয়ে। সেই সব নাটকে অভিনয় করেছি। যেখানেই থাকি সবসময় অভিনয়ের সঙ্গে ছিলাম আছি থাকতে চাই। অভিনয়টা চর্চার বিষয়। চর্চার ধারাবাহিকতা না থাকলে অভিনয় প্রতিভা নষ্টা হয়ে যায়। তাই নিয়মিত চর্চার মধ্যে থাকার চেষ্টা করি।’

টাপুর-টুপুরের পড়ালেখা

ভারতের পাহাড়ঘেরা শহর কালিম্পংয়ের ডক্টর গ্রাহামস হোমস স্কুলে পড়ছে টুপুর। চতুর্থ শ্রেণি থেকে টাপুর-টুপুর দুই বোন এই স্কুলে পড়ছে। এখন একাদশ শ্রেণিতে টাপুর-টুপুর। এই স্কুলটা বেশ পছন্দ ওদের। প্রথমে মা-বাবাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হলেও এখন বেশ মানিয়ে নিয়েছে ওরা।

টুপুরের চমক

আগস্ট মাসে দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকি’তে মুক্তি পেয়েছে অনম বিশ্বাস পরিচালিত ওয়েব সিরিজ ‘ভাইরাস’। ‘ভাইরাস’ ওয়েব সিরিজটি এরই মধ্যে এসেছে আলোচনায়। আর বেশ প্রশংসিত হয়েছে টুপুর অভিনীত ‘সুমী’ চরিত্রটি। পুরো সিরিজেই একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যায় তাকে। একের পর এক কাণ্ড করতে থাকে। অতিপ্রাকৃত এক চরিত্রে অভিনয় করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন টুপুর।

বঙ্গমাতার চরিত্রে টুপুর

নির্মাতা গৌতম কৈরী পরিচালিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে নিয়ে নির্মিত ‘বঙ্গমাতা’ চলচ্চিত্রে বঙ্গমাতার কিশোরীবেলার চরিত্রে অভিনয় করেছেন টুপুর। এটিও একটি স্বরণীয় কাজ হয়ে থাকবে বলে জানান তিনি। আজীবন অভিনয়ের সঙ্গে থাকতে চান টুপুর। তার ভাষ্য, ছোটবেলা থেকে মা (ছন্দা) আর বাবার (নির্মাতা সতীর্থ রহমান) অভিনয় ও নির্মাণ দেখে বড় হয়েছি। আমার অভিনয়ের আগ্রহ তৈরি হয়েছে তখন থেকেই। বড় বড় শিল্পীর সঙ্গে কাজের সুযোগ পাই, এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমি অভিনয়টাই করে যেতে চাই।

শেষ কথা

তারকাদের ঘরে সবসময় তারকার জন্ম হয় না। অনেকদিন বাদে বাংলাদেশের মিডিয়া কোনো তারকা পরিবার থেকে পেলো দিব্য-সৌম্য ও টাপুর-টুপুরদের মতো অভিনেতা-অভিনেত্রী। রঙবেরঙের পক্ষ থেকে রইলো তাদের জন্য অনেক শুভকামনা।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: হলি বলি টলি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

nine − five =