নানা আয়োজনে পালিত হলো বর্ষবরণ ১৪২৯

করোনা মহামারিতে গত দু’বছর থমকে ছিল বটমূল। বাজেনি কোনও সুর। দীর্ঘ অপেক্ষা পর আবারও নববর্ষের প্রথম সূর্যটা উঠলো গানে গানে। আজ বৃহস্পতিবার পহেলা বৈশাখে (১৪ এপ্রিল) ভোরের রাগালাপে সূচিত হলো ছায়ানট আয়োজিত বর্ষবরণ।

২০১৯ সালে সর্বশেষ তারা রমনার বটমূলে বসেছিল। তাই দুই বছরের বিরতির পর আবারও চেনা জায়গায় ফিরলো সংগঠনটি। সেই সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক আয়োজনে শুরু হলো বর্ষবরণ ১৪২৯।

রাজধানীর রমনার বটমূলে বর্ণাঢ্য এই আয়োজনের শুরু হয় ভোর ঠিক সোয়া ৬টার দিকে। এবারের মূল প্রতিপাদ্য- ‘নব আনন্দে জাগো’। এর ওপর ভিত্তি করে পুরো অনুষ্ঠানটি সাজানো হয়েছে। শুরুতে ভোরের বিভিন্ন রাগের ওপর বেহালা, সেতার, বাঁশি ও এসরাজসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে বরণের ধ্বনি দেওয়া হয়। যন্ত্রবাদনের পরপরই পরিবেশন করা হয়েছে সম্মিলিত কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত ‘মন, জাগো, মঙ্গল লোকে’। এবারের আয়োজনে মোট ৮৫ জন শিল্পী অংশ নিয়েছেন।

আয়োজনে মোট ৩৭টি গান-কবিতায় নববর্ষকে বরণ করা হয়। প্রতিপাদ্যের ওপর ভিত্তি করে একক ও সম্মেলক গান এবং অন্যান্য গান ও কবিতা সাজানো।

এদিকে দুই বছর বিরতির পর বটমূলের আয়োজনে হাজির হয়েছেন অগুনতি সংস্কৃতিপ্রাণ মানুষ। সূর্য ফোটার আভা ধরে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতারা বুঝি শহরের প্রতিটি কোনা থেকে বেরিয়ে পড়েছিল, ক্রমশ জড়ো হতে থাকে রমনার বটমূলে; সুরে সুরে বঙ্গাব্দ- ১৪২৯ সালকে বরণ করে নিতে।

ছায়ানট সূত্রে জানা যায়, শতাধিক শিল্পীর অংশগ্রহণে দুই ঘণ্টার এই আয়োজন সাজানো হয়েছে আয়োজনটি। যা ভোর সোয়া ৬টায় শুরু হয়ে চলেছে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অতুলপ্রসাদ সেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রজনীকান্ত সেন, লালন শাহ্, মুকুন্দ দাস, অজয় ভট্টাচার্য, শাহ্ আবদুল করিম, কুটি মনসুর, সলিল চৌধুরীর রচনা থেকে পুরো আয়োজনটি সাজানো হয়েছিল। যার শেষে থাকবে জাতীয় সংগীত। অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটবে ছায়ানট-সভাপতি সন্‌জীদা খাতুনের শুভেচ্ছা কথন দিয়ে।

বরাবরের মতো এবারের আয়োজনটিও সরাসরি সম্প্রচার করেছে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার। পুরো অনুষ্ঠান সরাসরি দেখা গেছে ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেলেও।

উৎসবপ্রিয় বাঙালির সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক উৎসব বাঙলা বর্ষবরণ। প্রতিবছর দিনটির জন্য মুখিয়ে থাকে মানুষ। নানা আয়োজনে বরণ করা হয় দিনটিকে। আর এই উৎসব উদযাপনের মূল আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। দিনটিতে সকাল থেকেই উৎসবমুখর থাকে ঢাবি ক্যাম্পাস। নানান সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে উদযাপন করা হয় বর্ষবরণ। গত দুই বছর করোনার কারণে থমকে গেলেও এ বছর উৎসবে ফিরেছে পুরনো আমেজ।

বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজন মঙ্গল শোভাযাত্রা। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে নতুন বছরের মঙ্গল কামনায় বের করা হয় এ শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি ভিসি চত্বর সংলগ্ন স্মৃতি চিরন্তন মোড় ঘুরে আবার টিএসসিতে এসে শেষ হয়।

এর আগে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতে দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে জনসমাগম বাড়তে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, দোয়েল চত্বর, চারুকলা, শাহবাগ, শহীদ মিনার, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন রমনা কালীমন্দির, বাংলা একাডেমি চত্বরে দেখা যায়, নানা বয়সী দর্শনার্থীদের ভিড়। রঙ ছড়ানো উৎসবে রঙিন সাজে ঘুরতে বেরিয়েছেন প্রিয়জন বা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে। কেউ পরেছেন হলুদ পাঞ্জাবি, কেউ লাল ফতুয়া, নারীদের পরনে লাল পাড়ের সাদা শাড়ি, হাতে বকুল ফুলের মালা, মাথায় ফুলের টায়রা।

বাংলা ট্রিবিউন

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

five × 1 =