বৈশাখের আমেজে সেজে উঠুক ঘর

ময়ূরাক্ষী সেন

নিজের ঘরকে আকর্ষণীয় করে তুলতে সবার থাকে নানা রকম আয়োজন। আর তা যদি হয় কোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে তাহলে তো কথাই নেই! উৎসবের রঙে নিজের ঘরকে রাঙিয়ে তুলতে কে না চায়। দরজায় কড়া নাড়ছে পহেলা বৈশাখ। বাংলা বছরের শুরুতে অনেকেই ভাবছেন নিজের ঘর নতুন করে সাজিয়ে তোলার কথা। এতে ঘরে যেমন কিছুটা পরিবর্তন আসবে তেমন মনও থাকবে রঙিন। এবারের আয়োজনে জেনে নেওয়া যাক বৈশাখের আমেজে ঘর সাজিয়ে তোলার কিছু আইডিয়া।

বৈশাখের কথা এলে প্রথমে যে দুটি রঙের কথা মাথায় আসে তা হলো সাদা আর লাল। বৈশাখের সাথে চিরাচরিত ভাবে দুটি রঙ মিলে মিশে থাকলেও বৈশাখ আসলে রঙিন। তাই আপনার ঘরকে সাজিয়ে তুলুন বিভিন্ন রঙে। যেহেতু বৈশাখ পুরোপুরি বাঙালিদের উৎসব তাই ঘরেও নিয়ে আসতে পারেন বাঙালিয়ানা। দেয়াল নতুন করে সাজিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এতে জায়গারও প্রয়োজন হয় না, সাশ্রয়ী দামে দেয়াল সাজিয়ে নেওয়া যায়। দেয়ালে টানিয়ে দিতে পারেন মাটির চিত্রকর্ম। এছাড়া নকশি কাঁথা, রিকশা প্রিন্ট ইত্যাদি ফ্রেম আকারে দেয়ালে সাজিয়ে দেওয়া যেতে পারে। চাইলে কুলা, হারিকেন ইত্যাদি দেয়ালে টানিয়ে নান্দনিকতা নিয়ে আসা যেতে পারে। এখন বাজারে বিভিন্ন প্রিন্টের ওয়ালপেপার পাওয়া যায়। দেয়ালে নতুন করে রঙ করার ঝামেলা ছাড়াই বসান যেতে পারে ওয়াল পেপার।

আপনার ঘরের পর্দায়ও নিয়ে আসতে পারেন কিছুটা ভিন্নতা। বাঁশের পর্দা এখন বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া বিভিন্ন ব্লক প্রিন্টের পর্দা ঘরে টানিয়ে দিতে পারেন। তবে চেষ্টা করবেন যাতে বিছানার চাদরের সাথে পর্দার মিল থাকে। যদি আপনি অতিরিক্ত রঙিন ঘর পছন্দ না করেন তাহলে ঘরে স্নিগ্ধ ছোঁয়ার জন্য সাদা কিংবা আকাশি রঙের পর্দা ও বিছানার চাদর বিছিয়ে দিতে পারেন।

ঘর সাজানোর বাজেট যদি কিছুটা কম থাকে তাহলে আপনার পছন্দের তালিকায় থাকতে পারে মাটির শোপিস। সাধ্যের মধ্যে এখন বেশ নান্দনিক মাটির শোপিস পাওয়া যায়। মাটির ছোট বড় বিভিন্ন শোপিস কিনে সারি করে ঘরের বিভিন্ন কোণে সাজিয়ে দিতে পারেন। এতেই কিন্তু ঘরে চলে আসবে বাঙালিয়ানা। অতিথি আপ্যায়নে মাটির প্লেট-গ্লাস-চামচ ব্যবহার করতে পারেন। মাটির তরকারির থেকে শুরু করে জগ এমনকি লবণের পাত্র এখন বাজারে বিক্রি হয়। মাটির পরিবর্তে চাইলে কাঁসার প্লেট-গ্লাসও ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ক্ষেত্রে আপনার বাজেট তুলনামূলক বেশি থাকতে হবে।

অনেকেই বৈশাখের শুরুতে ঘরের আসবাবপত্র পরিবর্তনের কথা চিন্তা করেন। সেক্ষেত্রে বাজেট যদি কম থাকে তাহলে বেছে নিতে পারেন বেতের আসবাবপত্র। বাজারে এখন বেতের বিভিন্ন আকৃতির সোফা পাওয়া যায়। সোফা সেটের সাথে মিল রেখে সামনে ছোট টেবিল রেখে দিতে পারেন। বড় হলে বসার ঘরে দু প্রান্তে দুটি বেতের মোড়া রাখতে পারেন। এতে ঘরে গ্রামীণ ঐতিহ্য ফুটে উঠবে। শোবার ঘরের জন্য বেছে নিতে পারেন বেতের বিছানা। এতে আপনার ঘর বেশ ভিন্নধর্মী মনে হবে। যদি লিভিং রুম থাকে সেখানে একটি বেতের দোলনা ঝুলিয়ে দিতে পারেন। দোলনার উপর রাখা যেতে পারে বিভিন্ন রঙের কুশন। শুধুমাত্র বেতের এই থিমেই আপনার ঘর সেজে উঠবে বৈশাখের আমেজে।

ঘর রাঙিয়ে তুলতে করে নিতে পারেন আলপনা। আলপনার সাথে বৈশাখ ওতপ্রতোভাবে জড়িত। আলপনার প্রথা কিছুটা হারিয়ে গেলেও গ্রামাঞ্চলে এখনও দেখা যায় নারীরা চালের গুঁড়া দিয়ে সাদা রঙের আলপনা আঁকছে ঘরে-উঠানে। আলপনা করুন বসার ঘরে কিংবা লিভিং রুমে। আবার বাড়ির একদম প্রবেশ দ্বারেও করতে পারেন। যাতে অতিথি আগমনের পর প্রথম চোখে পড়ে সেই আলপনা। আপনি যদি ভাড়া বাসায় থাকেন তাহলে ব্যবহার করতে পারেন এমন সব রঙ যা পানি দিয়ে ধুলে খুব সহজে উঠে যায়। লতা পাতা, পেঁচা, ময়ূর, হাঁস, ঢাক ঢোল ইত্যাদির আলপনা মেঝেতে করা হয়। নিজের বাড়ি হলে করিয়ে নিতে পারেন স্থায়ী আলপনা। তাহলে পুরো বছরই আপনার ঘরে নান্দনিকতা বজায় থাকবে। স্থায়ী আলপনার স্থায়িত্ব থাকে পাঁচ বছর। এরপর আলপনা যদি হালকা হয়ে যায় তাহলে এর উপর পুনরায় আঁকা হয়। যদি আঁকাআঁকি পারেন তাহলে নিজেই করে নিতে পারেন আলপনা। আবার নিতে পারেন পেশাদার কোনো ডিজাইনারের সাহায্য। ডিজাইনারকে বলে দিতে হবে আপনি কেমন ধরনের আলপনা চাচ্ছেন। আপনি যদি আর কোনো পরিবর্তন না করে এই বৈশাখে শুধু বড় করে আলপনা করেন তাহলেই ঘর সেজে উঠবে নতুন রূপে।

অনেকেই চিরাচরিত প্রথা ও ঐতিহ্য ভালোবাসেন। চিরাচরিত প্রথা মেনে চলতে চাইলে ঘরে লাল ও সাদার ছোঁয়া রাখতে ভুলবেন না। পহেলা বৈশাখের দিন সোফার কুশন বা বিছানার চাদর লাল রঙের রাখতে পারেন। তার মধ্যে জামদানি কিংবা নকশি কাঁথার মোটিফ রাখা যেতে পারে। জামদানি, নকশি কাঁথা দেশের ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলে। শীতল পাটিও কিন্তু ঐতিহ্যের একটি বড় অংশ। টেবিল রানার কিংবা বিভিন্ন জিনিসে শীতল পাটির ছোঁয়া রাখা যেতে পারে। অতিথি আসলে আপনার বসার ঘরে বিছিয়ে দিন একটি শীতল পাটি। ঘরে গ্রামীণ ঐতিহ্য ফুটে উঠবে ও বসার জায়গার অভাব হবে না।

সবাই নিজের ঘরে একটু সবুজের ছোঁয়া রাখতে পছন্দ করে। ঘরে যদি আগে থেকে কিছু গাছ না থাকে তাহলে কিনে নিয়ে আসুন বৈশাখ উপলক্ষ্যে কিছু ইনডোর প্লান্ট। ঘরে রাখার এসব গাছ পাট কিংবা বেতের ঝুড়িতে রাখতে পারেন। ঘর সাজানোর সামগ্রী হিসেবে বিভিন্ন নকশার আয়না এখন বেশ জনপ্রিয়। আয়না যেমন আপনার ঘরের রূপ পাল্টে দিতে পারে, তেমনি ঘরের বিভিন্ন স্থানে আয়না থাকলে ঘর খানিকটা বড় মনে হয়। বেডরুম কিংবা বসার ঘরে একটু বড় বেতের আয়না রাখতে পারেন। দেয়ালে টানিয়ে দিতে পারেন বিভিন্ন পেইন্ট করা কিংবা পাটের আয়না। কাঠের আয়না আপনার ঘরে আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলবে।

আমরা দেশীয় ঐতিহ্যের কথা ভুলে যাচ্ছি। সবাই বিদেশি দামি শোপিস ব্যবহার করছি। দেশে তৈরি শোপিস বা কোনো সামগ্রী যদি আপনি ঘরের কোণে রেখে দেন তাহলে ঘর হয়ে উঠবে অন্য যে কারোর চেয়ে অনেক বেশি নজরকাড়া। তাই বৈশাখকে কেন্দ্র করে আপনার ঘরকে সাজিয়ে তুলুন দেশীয় ঐতিহ্য ও উপকরণ দিয়ে। ঘর সাজানোর জন্য এসব দেশীয় উপকরণ খুব সহজেই পেয়ে যাবেন যেকোনো দেশীয় ফ্যাশন হাউজে। বিশেষ করে আড়ংয়ে রয়েছে দেশীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি ঘর সাজানোর অনুষঙ্গ। এছাড়া যাত্রা, অঞ্জনস, বিশ্বরঙ সহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকানেও পেয়ে যাবেন এসব উপকরণ। ফ্যাশন হাউজ ছাড়াও শহরের বিভিন্ন প্রান্তে এখন দেশি উপকরণ দিয়ে তৈরি ঘর সাজানোর সামগ্রী বিক্রি হয়। ঢাকার দোয়েল চত্বরে দেশীয় সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। এছাড়া নিউ মার্কেট, গাউছিয়া, মৌচাক, মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন দোকানে পেয়ে যাবেন দেশীয় সামগ্রী।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ইন্টেরিয়র

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

5 × 4 =